আস-সালামু আলাইকুম আশা করি সকলেই ভালো আছেন আজকের গল্প ট্রেনে করে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া।
আমাদের ভ্রমন পরিকল্পনা অনেক আগে থেকে তৈরী থাকে এবং এই পরিকল্পনা গুলো ১ থেকে ৫ বছর মেয়াদি হয়ে থাকে। অনেকদিন থেকে শুনে আসছি ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আন্তনগর ট্রেন চালু হবে। সব সময় ট্রেন চালুর খবর রাখতাম এমনকি কাজের অগ্রগতী, রেল লাইনের কাজ কতদূর এগেলো, স্টেশনের কাজ কত শতাংশ শেষ হয়েছে ইত্যাদি। অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষন এলো ১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো বহুল আলোচিত ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সেবা।
বাবু ভাই, আর কতদিন এই যান্ত্রিক জীবনে পড়ে থাকব বলুন তো? সমুদ্র দেখি একদিন" অফিসের ক্যান্টিনে কলিকদের সাথে বিকেলের চা খেতে খেতে কথাটা বললাম আমি। হালকা সাদা কালো চুলে, সদা হাস্যোজ্জ্বল, একটু গোলগাল শরীরের মানুষটি বাবু ভাই চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে চোখ কুঁচকে বললেন,
"কক্সবাজার যাবা নাকি? আমি সহ সকলেই বল্ল যাব! আপনি যদি যান, আমি এক মিনিটও দেরি করব না!"
এইভাবেই শুরু হয় দুই অফিস সহকর্মীর ছোট্ট এক পরিকল্পনা ঢাকা থেকে কক্সবাজার, রাতের ট্রেনে, হঠাৎ ছুটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়া।
যাত্রর দশ দিন আগে অফিস শেষে দুজনেই সিরিয়াস হয়ে পড়ল টিকিট কাটা নিয়ে। আমি রেলওয়ের অ্যাপ খুলে বললাম বাবু ভাই কোন ক্লাসের টিকেট নেব বাবু ভাই বল্ল এসি নাও ভাই, একটু আরাম দরকার।
ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য রেলওয়ের অনলাইন পোর্টালে ঢুকে দেখি ‘পর্যটন এক্সপ্রেস’-এর সব টিকিট প্রায় বুকড। ভাগ্য ভালো, নির্ধারিত তারিখে ট্রেনের এসি ২টি টিকিট পেয়ে গেলাম। কক্সবাজার এক্সপ্রেসের রাত দশটা ত্রিশ এর ট্রেন। তাহলে ধরে ফেললাম, এবার সমুদ্র আমাদের ডাকছে!
টিকিট নিশ্চিত হতেই দুজনের মধ্যেই আলাদা এক উত্তেজনা। যাত্রার আগে কাজ কর্মে মন বসছিল না। তাড়াতাড়ি করে ফাইল গুছিয়ে, মেইল শেষ করে দুজনেই সময়মতো ব্যাগ গোছানো শুরু করল।
আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ডিসেম্বরের ১ তারিখে রাতের ধুমকেতু ট্রেনে রাজশাহী থেকে সকালে ঢাকায় পৌছায়। আমাদের কক্সবাজরের ট্রেনের যাত্রা রাত ১০ টায় হওয়ায় ঢাকা এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে গাড়ি করে বাড্ডায় এক আত্মীয়ে বাড়ি পৌছে যায়। সেখানে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে দুপুরের পরে ঢাকায় কিছুক্ষন ঘোড়াঘুড়ি করে বাসায় ফিরে ব্যাগ পত্র নিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌছে যায়।
রাত দশটায় আমরা পৌঁছায় কমলাপুর স্টেশনে। কিন্তু বিধি বাম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌছে জানতে পারি ট্রেন ২ ঘন্টা দেরী করে ছাড়বে। যাই হোক প্রায় ২ ঘন্টা পরে প্লাটফর্মে ট্রেন আসলো নতুন ট্রেন দেখে বাবু ভাই হেসে বললেন, দেখো, ট্রেনে না উঠে আমরা প্ল্যাটফর্মেই গল্প করতে করছি! আমি হেসে উত্তর দিল, ট্রেনও যদি আমাদের মতো গল্প পছন্দ করে, তাহলে দেরি করে ছাড়বে!
ব্যাগে চিপস, পানির বোতল, আর আমার ব্যাগে অতিরিক্ত শুকনো খাবার। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা কক্সবাজার এক্সপ্রেস দেখে বাবু ভাই যেন ছেলেবেলার সেই রেলগাড়ির স্বপ্নে ফিরে গেলেন।
দ্যাখো, কী চকচকে রঙ! কক্সবাজার এক্সপ্রেস একদম নতুন জামা পরে দাঁড়িয়ে আছে! আমি হেসে বলল, আপনিও বেশি নয়, চুলে কালার করলে একদম এসি বগির মতো নতুন লাগতেন!" স্টেশনের আলো, ঘড়ির টিকটিক আর মানুষের ভিড় — সব মিলিয়ে যেন এক রহস্যময় আবহ। এটা কোনো সাধারণ রাত নয়, এটা এক নতুন গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার রাত।
আমাদের কোচটি ছিল এসি সিগ্ধা। ট্রেনে উঠে দুজনেই অবাক ভেতরে ঝকঝকে পরিবেশ, সফট আলো, আরামদায়ক চেয়ার, আর শান্ত যাত্রীর দল।
বাহ, বাবু ভাই! বাসে তো এমন আরাম মেলে না! আরামে তো যাচ্ছি, সমুদ্রের ঢেউ না জাগিয়ে ফিরে আসব না!
আজকের ট্রেন প্রায় ২ ঘন্টা দেরী করে কমলাপুর ছাড়ল, তখন দুজনেই জানালার পাশে বসে গুছিয়ে নিলাম নিজেদের জায়গা। বাবু ভাই মোবাইলে গান চালালেন "সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে। আহ, ভাই, ট্রেনের জানালায় এই গান! জীবন পূর্ণতা পেল!" বললাম আমি।
রাত যত গভীর হতে লাগল, দুজনের কথাবার্তা তত গভীর হতে লাগল। গল্প চলল শৈশবের, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেম, অফিসের কাজ, বসের বকা — সবকিছু।
বাবু ভাই বল্ল জুয়েল জানো তো, তোমার এই বয়সে আমি আরেক অফিসে ছিলাম। তখন মনে হতো জীবন মানে কাজ আর কাজ। এখন বুঝি সময় মতো পালিয়ে না গেলে জীবন কিছু দেয় না। আমি হেসে বললাম এই ট্রেনটা যেন পালানোর টিকিট, বাবু ভাই!
জানালার ওপারে অন্ধকার রাত, দূরে দূরে গাছের ছায়া, মাঝে মাঝে গ্রামের আলো ঝলমল করে উঠছে। ট্রেনটি ননস্টপ ছিলো তবে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন স্টশনে ট্রেন কিছু সময়ের জন্য থামছিল। আমদের ট্রেন চট্টগ্রামে ভোরে পৌছে যায় আমি ট্রেন থেকে নেমে সকালের নাস্তার জন্য হালকা খাবার কিনে আবার ট্রেনে উঠে পড়ি। চট্রগ্রাম স্টেশনে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য যাত্রা বিরতী ছিলো মাঝেমধ্যে নেমে চা খায়। সময় থেমে নেই, তবে যেন ব্যস্ততাহীন। পথে পথে নারকেল গাছ, রাস্তায় দুধ বিক্রি করা লোক, বালির ঢিবি — সবকিছু নতুন, প্রাণবন্ত।
চট্টগ্রাম পার হয়ে ট্রেন চলে দোহাজারীর দিকে। এ অংশে প্রকৃতি আরও ঘন। জানালার ওপারে গাঢ় সবুজ বন, পাহাড়ের ছায়া, ছোট ছোট নদী। বাবু ভাই চোখ বুজে বললেন, এই প্রকৃতি দেখলে মনে হয়, শহর যেন আমাদের ঠকিয়েছে। আমি বললাম, এই ট্রেনটাই তো আমাদের প্রকৃতির কাছে ফিরিয়ে নিচ্ছে।"
সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ট্রেন পৌঁছাল কক্সবাজার রেলস্টেশনে। নতুন স্টেশন, ঝকঝকে, আধুনিক। বাবু ভাই বললেন, "স্টেশনটা দেখে তো বিদেশ ভাব আসছে আমাদের সাথে অন্য যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে পরেছে সকলের চোখে মুখে উচ্ছাস, সবাই মুগ্ধ হয়ে স্টেশন দেখছে এবং ছবি ভিডিও ক্যামেরা বন্দি করছে। তখনও স্টেশনটি পুরোপুরি চালু হয়নি প্লাটফর্ম থেকে বের হতে ঝিনুক প্রকৃতি এবং ঝিনুকের মধ্যে একটি মুক্তা যা স্টেশন এবং কক্সবাজারের সৌন্দর্য অনেক গুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। #travel #coxsbazar #bangladesh #train @TravelHunter20
Информация по комментариям в разработке