ঈমান না আনলে ক্ষতি কী?
মহান রব আল্লাহর উপর যারা ঈমান আনে, আল্লাহ্ স্বয়ং তাদের ওলী (অভিভাবক/জিম্মাদার) হয়ে যান। আর জান্নাতের লোভ থাকার পরও জাহান্নামের ভয়কে তুচ্ছ জ্ঞান করে যারা ঈমান আনা থেকে বিরত থাকে তারা সীমালঙ্ঘণকারী ত্বাগুতের দোসর, ত্বাগুত তাদের অভিভাবক। মহান আল্লাহ্ ফরমান-
-আল্লাহই হচ্ছেন তাদের অভিভাবক যারা ঈমান এনেছে, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরী (ঈমান গ্রহণ করতে অস্বীকার) করেছে তাদের অভিভাবক হলো ত্বাগুত; যারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। বস্তুত তারাই হলো জাহান্নামের অধিবাসী। তারা সেখানে চিরকাল বসবাস করবে।
যারা দুনিয়ায় অবস্থানকালীন আল্লাহর নিয়ামত ভোগ করে যাবে অথচ ঈমান এনে নিয়ামতদাতার শোকর আদায় করবে না; মৃত্যুর পর তাদেরকে কঠিন শাস্তির মুখে ঠেলে দেয়া হবে। মহান আল্লাহ্ ফরমান-
-আর যারা কুফর (ঈমান আনতে অস্বীকার) করেছে সেদিন তাদেরকে (জাহান্নামের) আগুনের সামনে উপস্থিত করা হবে। (অতঃপর বলা হবে) ‘তোমরা তোমাদের দুনিয়ার জীবনে তোমাদের সুখ সামগ্রীগুলো নিঃশেষ করেছ এবং সেগুলো উপভোগ করেছ। সুতরাং আজ তোমাদের প্রতিদান দেয়া হবে ‘অপমানজনক আযাব’। এ কারণে যে, তোমরা যমীনে অন্যায়ভাবে অহংকার করতে এবং এ কারণেও যে, তোমরা অপকর্ম করতে।
-আর যারা কুফর (ঈমান আনতে অস্বীকার) করেছে সেদিন তাদেরকে (জাহান্নামের) আগুনের কাছে উপস্থিত করা হবে। (এবং জিজ্ঞেস করা হবে) ‘এটা সত্য নয় কি’? তারা বলবে, ‘হ্যাঁ অবশ্যই, আমাদের রবের কসম’। তিনি বলবেন, ‘তাহলে আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো, যেহেতু তোমরা কুফরী করতে’।
-আর যারা কুফর (ঈমান আনতে অস্বীকার) করেছে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন (জাহান্নামের) কাছে এসে পৌঁছবে, তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে এবং তাদেরকে জাহান্নামের রক্ষীরা বলবে, ‘তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করত এবং তোমাদেরকে এই (কিয়ামত) দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে সতর্ক করত’? তারা বলবে, ‘হ্যাঁ অবশ্যই (এসেছিল)’; কিন্তু আযাবের ঘোষণা কাফিরদের উপর বাস্তবায়িত হলো।
-আর বল, সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং যে চায় সে যেন ঈমান আনে এবং যে চায় সে যেন কুফর (ঈমান আনতে অস্বীকার) করে। নিশ্চয়ই আমরাই যালিমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করেছি, যার প্রাচীরগুলো তাদেরকে বেষ্টন করবে। যদি তারা পান করতে চায়, তবে তাদেরকে দেয়া হবে এমন পানি যা গলিত ধাতুর মত, যা চেহারাগুলোকে ঝলসে দেবে। কতই না নিকৃষ্ট পানীয়! আর কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল!
উল্লিখিত আয়াতসমূহ থেকে জানা গেল যে, ঈমান না আনলে নিশ্চিত জাহান্নামে যেতে হবে, আর তা মহান রব আল্লাহর পক্ষ থেকে চূড়ান্ত অবশ্যম্ভাবী ফায়সালা।
মানুষেরা ঈমান না আনলে আরও যে সকল ক্ষতি আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘নেক আমলগুলো কবুল না হওয়া’। কারণ ঈমানই হচ্ছে সব আমলের বুনিয়াদ বা ভিত্তি। ফলে যার ঈমানশূণ্য মানুষের কোনো আমলই আল্লাহর আরশে আযীমে পৌঁছায় না। রূহ ছাড়া দেহ যেমন, ঈমান ছাড়া আমলও তেমন। মহান আল্লাহ্ তা‘আলা ফরমান-
-আর যারা কুফর (ঈমানের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান) করে, তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরীচিকার মত, যেটাকে তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে। অবশেষে যখন সে সেখানে আসে, সে সেখানে কিছুই পায় না। বরং সে তার সামনে আল্লাহকে পায়, তখন তিনি তাকে তার হিসাব পূর্ণ করে দেন। আর আল্লাহ্ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
অর্থাৎ, যারা কাফির (ঈমান আনেনি) তাদের আমলসমূহ কিয়ামতের দিন তাদের সামনে মরুভূমির মরিচিকার ন্যায় দেখা দিবে। বিশাল মরুভূমির মাঝে অনেক দূর প্রান্তরে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যেন পানি চিকচিক করছে; কিন্তু মরুচারী যখনই ওই পানির সন্ধানে দূর প্রান্তরে ছুটে যায়, সেখানে গিয়ে দেখে বাস্তবে পানির কোনো নাম নিশানাও নেই। সুতরাং যাদের ঈমান নেই তাদের আমলও অনুরূপ। এমনিতে মনে হবে কেউ অনেক অনেক এমনকি পাহাড়সম আমলকারী, অথচ ঈমান না থাকার ফলে তার কোনো আমলই ফলপ্রসু হয়নি আর পরকালে যা কোনো কাজেই আসবে না।
সুতরাং ঈমান গ্রহণ ছাড়া যত নেক আমলই করা হোক না কেন; মানবতার জয় গান যতই গাওয়া হোক না কেন; অধিকার আদায়ে যত সংগ্রামই হোক না কেন; পরকালে তা কোন কাজে আসবে না। এ কারণেই মহান আল্লাহ্ বলেছেন- তারা আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না যারা (প্রথমে) ঈমান গ্রহণ করছে এবং (অতঃপর) নেক আমল করেছে। (সূরা আল-আসর ৩)
সুতরাং ওয়াদা রক্ষায় সত্যবাদী মহান আল্লাহর হিদায়াত ও মাগফিরাত যারা প্রত্যাশা করেন এবং দুনিয়ায় অকল্যাণ-অশান্তি ও আখিরাতে জাহান্নামের মহাক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে চান, তাদের জন্য ঈমান এনে সেই ঈমানের ওপর অটল ও অবিচল থাকার বিকল্প নেই। কারণ, কেবলমাত্র ঈমানদাররাই পাবে মহান রবের হিদায়াত, হবে সফলকাম।
সকলের মঙ্গল কামনা করছি। ফি আমানিল্লাহ।
Информация по комментариям в разработке