আসসালামুয়ালাইকুম। প্রিয় ভাই ও বোনেরা আশা করি ভাল আছেন। সবাইকে ঈদ মোবারক। আমরা জানি ঈদ শপিং করতে না পারলে অনেকেরই মন খারাপ করে। করোনা কালে অনেকের মনেই স্বস্তি নেই, প্রিয় জনের মুখে হাসি ফোটাতে না পেরে! আজ তাদের জন্যই আমরা খলিফা ওমর ইবনে আল খাত্তাব (রাঃ)'র এক ঈদের শপিং বা বাজারের একটি কাহিনী শুনবো।
৬৩৪ থেকে ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টানা ১১ বছর মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় খলিফা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন হযরত ওমর ফারুক (রা.)। প্রায় অর্ধেক পৃথিবীর শাসক উমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম দিকে আবু উবায়দা (রাঃ) রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্বে ছিলেন। খলিফা হযরত ওমর(রাঃ) যখন শাসক হিসেবে নির্বাচিত হন, তখন সাহাবীদেরকে ডেকে বলেন, আমার উপার্জনের আপাতত অন্য কোনো উৎস্য নেই আপনারা জানেন। আমি শাসন কার্য পরিচালনাকালে আমার সংসার কিভাবে চলবে ? জবাবে সাহাবীরা সকলে পরামর্শ করেন। হযরত আলী(রাঃ) একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বায়তুল মাল থেকে নিতে বলেন বেতন হিসেবে। সকলে সে ব্যাপারে সম্মত হয়। কিন্তু ওমর(রাঃ) নিজের জন্যে হিসেব করে নির্ধারিত অংকের চেয়ে আরও কম ধার্য্য করলেন। এভাবে অল্প কিছু টাকায় চলছিলো তার সংসার স্রেফ জোড়াতালি দিয়ে,তার পোষাকেও ছিলো ১২টার মত তালি দেওয়া। কিন্তু তারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে সন্তুষ্টচিত্তে চলছিলেন।
এমতাবস্থায় ঈদ চলে এলো। মুসলিমদের এই পবিত্র ঊৎস্যবে সক্ষমরা অনেক পরিকল্পনা করতে থাকল। বাচ্চারা নতুন নতুন পোষাক পেল, কিন্তু ওমর(রাঃ)এর ঘরে পর্যাপ্ত খাবারই ছিলোনা, ভালো পোষাক তো দূরের কথা। ইচ্ছা করলেই তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে গ্রহণ করতে পারতেন, কিন্তু তাঁর অতি উন্নত তাকওয়া এটা ভাবিয়েছিলো যে, "এ সম্পদ তো আমার নয়, আমি স্রেফ পাহারাদার। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গরিব লোকটার মত যদি আমি না চলি,তাহলে হয়ত আল্লাহ কৈফিয়ৎ চাইবেন। " এরকম চিন্তায় তিনি সবচেয়ে কম পরিমান বেতন গ্রহণ করেছেন। সেই ঈদে হযরত ওমর(রাঃ) ছোট বাচ্চা ঈদে নতুন পোষাকের জন্যে কাঁদতে লাগল। তখন তার স্ত্রী তাকে বললেন, অন্তত এই বাচ্চাটার জন্যে একটা পোষাকের ব্যবস্থা করুন। বাচ্চার কারণে হযরত ওমর(রাঃ) খুবই মর্মাহত হলেন। অবুঝ সন্তান বুঝ মানেনা।
অর্ধ পৃথিবীর শাসকের বাচ্চার কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই। এরকম অবস্থায় ওমর(রাঃ) বায়তুল মালের প্রধান হিসাবরক্ষক মুসলিম জাতির সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে খ্যাত সাহাবী হযরত আবু উবায়দা (রাঃ)কে এক মাসের অগ্রিম বেতন দেয়ার জন্য চিঠি পাঠালেন। আবু উবায়দা খলিফার এই চিঠি পড়ে মর্মাহত হলেন, তিনি কাঁদতে লাগলেন, কিন্তু কর্তব্যের স্থান থেকে এক চুলও সরে গেলেন না। দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি পত্র বাহককে বেতন না দিয়ে উল্টো একটি চিঠি লিখলেন- ‘আমীরুল মুমিনীন' ! অগ্রিম বেতন বরাদ্দের জন্য দুটি বিষয়ে আপনাকে ফয়সালা দিতে হবে।
প্রথমত, আগামী মাস পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন কিনা ?
দ্বিতীয়ত, বেঁচে থাকলেও দেশের জনসাধারণ আপনাকে সেই মেয়াদ পর্যন্ত খিলাফতের দায়িত্বে বহাল রাখবে কিনা??
চিঠি পাঠ করে খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) কোন প্রতি উত্তর তো করলেনই না, বরং এত কেঁদেছেন যে তাঁর চোখের পানিতে দাঁড়ি ভিজে গেলো। আর হাত তুলে আবু উবায়দার (রা) জন্য দোয়া করলেন- জাতির একজন যোগ্য হিসাবরক্ষক হিসেবে তাকে পাওয়ার জন্যে। আমরা জানিনা তার ছোট্ট বাচ্চাটার সামনে তিনি কিভাবে নিজেকে সামলেছিলেন। সাহাবীদের মধ্যে অত্যন্ত কঠিন হৃদয় মানুষ, ন্যায়ের বিচারে সর্বোচ্চ কঠোর, সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী হযরত ওমর(রাঃ) তার সারা জীবনটাই জনগণের জন্যে উৎস্বর্গ করেছিলেন।
ন্যায়ের বিচারে এতটাই কঠোর ছিলেন যে, একদা গণিমাতের খেজুর স্তুপ করা হল লোকেদের ভেতর বণ্টনের জন্যে, তখন খলিফা হযরত ওমরের শিশু পুত্র ক্ষুধার তাড়নায় একটি খেজুর মুখে পুরে দেয়। হযরত ওমর(রাঃ) তার শিশু পুত্রের মুখ থেকে খেজুরটি কেড়ে নেন এবং স্তুপের ভেতর রাখেন। তার স্ত্রী বলে-ছোট মানুষ একটা খেজুরই তো নিয়েছে ! ওমর(রাঃ)বলেন- এখনও ভাগ বণ্টন করা হয়নি,ফলে খলিফা ওমরের অধিকার নেই সেখান থেকে ভাগ নেওয়ার। এ ব্যাপারে অন্য সাহাবীদের সুপারিশ তোয়াক্কা করেননি তিনি। হযরত ওমরের ঈদ শপিং হয়নি, এমনকি নিয়মিত বাজার সওদাও করা হয়নি। সারাটা জীবন নিজের পরিবার নিয়ে অর্থ কষ্ট করেছেন, খাওয়ার কষ্ট করেছেন কিন্তু অভিযোগ করেননি। অসন্তুষ্ট হননি, বরং জনগণের সম্পদ প্রয়োজনের তুলনায় বেশী ভোগ করে ফেলেছেন বলে মনে করতেন, যার কারণে নিজের প্রতি আরও কঠোর থেকে কঠোরতর হয়েছেন। তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
মৃত্যু শয্যায় ওসিয়ৎ করে যান নিজের সম্পদ বিক্রী করে বায়তুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সারা জীবন বেতন হিসেবে নেওয়া অর্থসমূহ পরিশোধ করার। সেটাই করা হয়েছিলো। ন্যায়ের মূর্ত প্রতিককে আমরা সর্বোচ্চ শ্রদ্ধায় শ্মরণ রেখেছি, রাখব ইনশাআল্লাহ !
আশা করি হযরত ওমর (রা.) নৈতিক সচেতনতা, আল্লাহ ভীতি আমাদেরকে পথ দেখাবে। যদি পর্বটি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে নিন, আমাদের সাথেই থাকুন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কায়েম করুন, জীবনকে অর্থবহ করতে ইসলামের পথে থাকুন। আমিন।
#alakhira #eidshiiping #coronavirus
Информация по комментариям в разработке