আপনি কি বিয়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন? বিয়ের জন্য কি পাত্র বা পাত্রি খোঁজ করছেন? তাহলে বিয়ের পূর্বেই জেনে নিন, বিয়ের জন্য কেমন পাত্র বা পাত্রি বাছাই করবেন। সম্মানিত দর্শক মণ্ডলী, আসুন পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের আলোকে, আমরা গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি জেনে নেই। বিয়ের জন্য কেমন পাত্র/পাত্রী বাছাই করবেনঃ
(১) ঈমানঃ- বিবাহের জন্য সবার প্রথম পাত্র ও পাত্রী উভয়ের ঈমানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাওহীদে বিশ্বাসী, নামাযী এবং সুন্নতের অনুসারী এমন কারো জন্য বেনামাযী, কবর, মাযার, পীর পূজারী, মনপূজারী অথবা দুনিয়া পূজারী, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র বা প্রচলিত শিরকি-কুফুরীর রাজনীতির সাথে জড়িত এমন কাউকে বিয়ে করা যাবে না।
(২) দ্বীনদারী বা ধার্মিকতাঃ- এই দুনিয়ার মাঝে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে একজন নেককার স্ত্রী। সম্পদ বা সৌন্দর্যের লোভে বেদ্বীন বা দ্বীনের মাঝে ত্রুটি আছে এমন কাউকে বিয়ে করলে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানের অনেক কল্যান ও শান্তি থেকে বঞ্চিত হতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মানুষ সাধারণত নারীদের মাঝে চারটি গুণ দেখে বিবাহ করে, তার ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং ধর্ম। (কিন্তু তোমরা এমনটা করবেনা), তোমরা বিয়ের জন্য ধার্মিক নারীদেরকে অগ্রাধিকার দাও। তোমরা যদি ধার্মিক নারীদেরকে অগ্রাধিকার না দাও, তাহলে অবশ্যই তোমাদের দুই হাত ধূলায় ধূসরিত হবে। (বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬)
(৩) পর্দানশীল ও বিনয়ীঃ- একবার রাসুল (সাঃ) সাহাবাদেরকে নিয়ে একটা পাহাড়ে উঠলেন। সেখানে হঠাত তারা একটা কাক দেখতে পেলেন, যার পা ও ঠোট ছিলো লাল। এই ধরণের কাক আসলে খুবই বিরল, দেখতে পাওয়া যায়না বললেই চলে। সাহাবারা এতো বিরল একটা জিনিস দেখে আশ্চর্য হয়ে বলাবলি করতে লাগলেন। রাসুল (সাঃ) তখন বললেন, এইরকম কাকের মাঝে লাল পা ও লাল ঠোটওয়ালা কাক যেমন অত্যন্ত বিরল, তেমনি নারীদের মাঝে যারা বেপর্দা চলাফেরা করবে তাদের মাঝে খুব কম সংখ্যক নারীই জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
(৪) ইলম ও আমলঃ- রাসুল সাঃ বলেছেন, “একজন মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের উপরেই আছে।” থিওরিটিক্যালি স্বামী/স্ত্রী একজন অপরজনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু হওয়ার কথা। সুতরাং, জ্ঞানী, ইসলামী জীবন-যাপনে আগ্রহী ও অভ্যস্ত এমন কাউকে বিয়ে করতে চেষ্টা করুন, যে আপনার দ্বীনের ব্যপারে সাহায্যকারী হবে, বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না।
(৫) অধিক ভালোবাসা প্রবনঃ- এক ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলল, আমি একজন সুন্দরী এবং উঁচু বংশের রমনীর সন্ধান পেয়েছি, কিন্তু সে কোন সন্তান প্রসব করে না (বন্ধ্যা)। আমি কি তাকে বিবাহ করব? তিনি বলেন, না। অতঃপর, সে ব্যক্তি দ্বিতীয়বার এসে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলো, তিনি পুনরায় তাকে নিষেধ করলেন। পরে তৃতীয়বার সে ব্যক্তি এলে তিনি বলেন, তোমরা এমন স্ত্রীলোকদের বিবাহ করবে, যারা স্বামীদের অধিক মহব্বত করে এবং অধিক সন্তান প্রসব করে। কেননা আমি (কিয়ামতের দিন) তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে (পূর্ববর্তী উম্মতের উপর) গর্ব প্রকাশ করব।”
(৬) অধিক সন্তান জন্মদানকারীঃ- পূর্বের হাদিস থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, রাসুল (সাঃ) পুরুষদেরকে অধিক সন্তান জন্মদানকারী নারীদেরকে বিয়ে করার উতসাহিত করেছেন, এর দ্বারা উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে যা নিয়ে কেয়ামতের দিন রাসুল সাঃ গর্ব করবেন। এছাড়া সন্তানদেরকে হাদিসে রিযক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
(৭) কুফু বা সমতাঃ- রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর এবং ‘কুফু’ (সমতা) দেখে বিবাহ কর।” (ইবনু মাজাহঃ ১৯৬৮)
বিয়ের সময় নারী ও পুরুষের মাঝে অবশ্যই কুফু বা সমতার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ। দাড়ী কামাতে অভ্যস্ত, হারাম ইনকাম এমন কোন পুরুষের সাথে যদি কোরানের কোন হাফেজা নারীকে বিয়ে দেওয়া হয়, আর বিয়ের পরে স্বামী তাকে মডার্ণ ড্রেস পড়তে বাধ্য করে, হিন্দী গান শোনানোর বায়না ধরে তাহলেতো প্রবলেম। আবার কোন নারী যদি বিয়ের পরে যেকোন উপায়ে স্বামীকে অঢেল সম্পত্তি অর্জন করতে চাপ দেয়, দাঁড়ি রাখা যাবেনা বায়না ধরে, মা-বাবার হক্ক আদায়ে বাঁধা দেয়...। এই সংসারে আর যাই হোক সুখ নামক অচিন পাখিটা কখনো ধরা দেবেনা। তাই বিয়ের পূর্বে সার্বিক দিক বিবেচনা করে কুফু বা সমতা রক্ষা করা উচিৎ।
(৮) কুমারীঃ- রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা কুমারী মেয়েদেরকে বিয়ে করো, কারণ তারা মিষ্টিভাষী, অধিক সন্তান জন্মদানকারী এবং অল্পে তুষ্ট হয়ে থাকে।” (তাবারানি, হাদীসটি হাসান সহীহ)
তবে অকুমারী মেয়েদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ বা অপছন্দনীয় কোন বিষয়, এমন নয়। স্বয়ং রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীদের মাঝে মা আয়িশাহ (রাঃ) ছাড়া অন্য সব স্ত্রী ছিলেন অকুমারী। এছাড়া একজন সাহাবী অকুমারী মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন যাতে করে সে তার ৭ জন ছোট বোনদের দেখাশোনা করতে পারে। (বুখারীঃ ২০৯৭, মুসলিমঃ ৭১৫)
মোট কথা, বিবাহের ক্ষেত্রে সর্বদাই নারীদের দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দিতে হবে। আর তার সম্পদ বা সৌন্দর্য এইগুলো অতিরিক্ত। অথচ বেশিরভাগ পুরুষেরাই কামনা করে সুন্দরী ধনীর কোন দুলালীকে বিয়ে করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনি যেমন বীজ বপন করবেন তেমন ফল পাবেন। পরকালের কথা চিন্তা করে কাজ করবেন দুনিয়া ও আখেরাতে জয়ী হবেন, আর দ্বীনকে বিসর্জন দিয়ে শুধু দুনিয়ার আশা করবেন তাহলে দুনিয়া পেতেও পারেন আবার নাও পারেন কিন্তু পরকালকে ধ্বংস করবেন এটা নিশ্চিত। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামী পরিবারের অফুরন্ত নেয়ামত দিয়ে ধন্য করুন, আমিন।
গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যবহুল এই বিষয়টি প্রতিটি মুসলিম নারী পুরুষকে অবশ্যই জেনে রাখা উচিৎ। নিজে জানুন এবং লাইক শেয়ার করে ভিডিওটি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন। সেই সাথে পরিপূর্ণ স্বচ্ছ HD Quality সম্পন্ন ইসলামিক লেকচারের ভিডিও পেতে, অবশ্যই আমাদের চ্যানেলটি Subscribe করে রাখবেন। ইনশাআল্লাহ। আমাদেরঃ-
ইউটিউব চ্যানেলঃ / islamicmediabd17
ফেসবুক অ্যাডমিনঃ https://fb.com/bd.salimhosen
#SahihHadith #সহিহ_হাদিস
Информация по комментариям в разработке