Скачать или смотреть মাদরাসা আবু হুরায়রা রাঃ কিশোরগঞ্জ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

মাদ্রাসা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি টিনশেডেরটি ঘরে। সেই যাত্রাটি ছিল এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতার। সেটি ছিল ওস্তাদ ছাত্রদের ভালোবাসার চূড়ান্ত রূপ। থাকা- খাওয়ার অগাধ কষ্ট উপেক্ষা করে ওস্তাদের প্রতি ছাত্রদের বিপুল ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এগুলো নবীর সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর ত্যাগ-তিতিক্ষাকে  স্মরণ করিয়ে দেয়। এ কারণেই এর নাম মাদ্রাসায়ে আবু হুরায়রা। ২০১১ সালের পারম্ভে তার যাত্রা শুরু। বহু চড়াই -উতরাই পেরিয়ে মাদ্রাসা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আজ এক মুহিরুহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম। এই মহীরুহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কি ছিলো এর প্রেক্ষাপট, পূর্বা পর ইতিহাস এবং স্বপ্ন জয়ের যাত্রা। এসব কিছুর বয়ান শোনা যাক স্বয়ং প্রতিষ্ঠাতা মহোদয়ের মুখ থেকে। আলহামদুলিল্লাহ, আমি আল্লাহ তাআলার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ। আমি অযোগ্য, নালায়েক কখনোই কল্পনা করিনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করব। ছাত্র জীবনে আমার এমন কোন স্বপ্নই ছিল না। কিন্তু আমার শিক্ষক জীবনের একটি প্রিয় অভ্যাস হলো, ছাত্রদেরকে নিজের মতো করে পড়ানো এবং তাদেরকে নিজের মতো করে গড়ে তোলা। পুর্বে যে সকল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছি, সেখানে তা সম্ভব হয়নি। যে কারণে একটি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে এই স্বপ্ন পূরণ করার সাধ জাগে। অবশেষে আল্লাহ তাআলা আমাকে এই মুহতী কাজের জন্য কবুল করেছেন। এই মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠার আরেকটি প্রেক্ষাপট ছিল, হাফেজ মাওলানা শুয়াইব আব্দুর রউফ ও আমি একদিন শহীদি মসজিদের চত্বরে বসে ছিলাম। সেখানে আমরা শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কেমন হয় যদি আমরা ভিন্ন কারিকুলামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি, যেখানে ছাত্ররা নিজেদেরকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলবে এবং বিশেষ করে আরবি ভাষাটা হবে তাদের শিক্ষার অনন্য মাধ্যম। কিন্তু পরবর্তীতে শুয়াইব আব্দুর রউফ চলে যান সৌদি আরব উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটিতে। যার ফলে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন আমার একার পক্ষে সম্ভব হয়নি। স্বপ্নটি বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় ছিলো। তখন আমি নিজের প্রচেষ্টায় অনেকটা সাহসিক মানসিকতা নিয়ে পথ চলা শুরু করি। এর জন্য প্রথমত  আমি আমার মুরুব্বী আজহার আলী আনোয়ার শাহ সাহেবের পরামর্শ নিই এবং মাদ্রাসা শুরু করি। পূর্ব রশিদাবাদ কিশোরগঞ্জ সরকারি গোরস্থান সংলগ্ন একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নিই।সেখানেই ১৪ই জুন 2011 সাল রোজ মঙ্গলবার এভাবেই শুরু হয় মাদ্রাসা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর পথ চলা। এ পথ চলায় যখনই কোন দুর্দশা দুরবস্থার সম্মুখীন হয়েছি, তখন এই কোন না কোন ভাবে আল্লাহতালা আমাকে সাহায্য করেছেন। কখনো এমন হয়েছে, সিদ্দিক ভাই এসে বলেছে, বোর্ডিংয়ের চাল ডাল মসলা পাতি প্রায় শেষ। বাজার করতে হবে, কিন্তু বাজার করার মত বোডিং ফান্ডে কোন টাকা নেই। ছাত্রদের খাবাররে কষ্ট হচ্ছে।এটা শুনে আমার নিজের বিতরণ বিরাটা ধাক্কা লাগে। আমি গ্রামের বাড়িতে যাই এবং নিজের পালিত গরু ও সংরক্ষিত কিছু ধান বিক্রি করে টাকা নিয়ে আসি। সেই টাকা দিয়েই বোর্ডিংয়ের বাজার করি। এসব ত্যাগ কোরবানি এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুলের বদৌলতেই হয়তো তিনি এই মাদ্রাসাকে কবুল করেছেন। কিছুদিন পর আল্লাহর রহমতে পূর্ব রশিদাবাদ মরহুমা হরমুজা বেওয়া কর্তৃক ওয়াকফকৃত  জমিতে ছোট এক মসজিদের প্রাঙ্গনে আমরা থিতু হই। এখানেই ছাত্রদের বড় ত্যাগ দিতে হয়েছে। এভাবে একপর্যায়ে আল্লাহর মেহেরবানীতে দীর্ঘ  রোনাজারি পর এক বান্দার পক্ষ থেকে তিন তলা বিশিষ্ট মসজিদও মাদ্রাসা  নির্মাণের প্রস্তাব আসে আমিও তা গ্রহণ করি।মাদ্রাসা আবু হুরায়রা নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক। সব সময় মনে করি, মাদ্রাসা আবু হুরায়রা সন্তানের মত। একেই কেন্দ্র করে আমার যত স্বপ্ন আয়োজন। এই মাদ্রাসার ছাত্ররা আমার প্রাণপ্রিয় সন্তান। যখন তাদেরকে মাদ্রাসায় দেখি পড়াশোনায় মশগুল তখন আমার প্রাণ জুড়িয়ে যায়। মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত আমি পেয়েছি। ছাত্র পড়ানো এবং ছাত্র গড়ার যে নিয়ামত, এই মহৎ কাজে জড়িত থাকতে পেরে আমি সবসময় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।একে মনে করি নিজের নাজাতের উসিল । আমার স্নেহের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলছি, এই প্রতিষ্ঠান তোমাদের, তোমরাই এর গর্বিত সন্তান। একে সব সময় মনে রেখো। তোমরা আমাদের জন্য দোয়া করো।আমরাও তোমাদের জন্য দোয়া করি। আল্লাহতালা সকলকেই তার দ্বীনের জন্য কবুল করুক।
‎আমিন
‎ #কিশোরগঞ্জ #কোরবানি