Скачать или смотреть প্রাচীন গ্রীক শহর এফেসাস | ephesus ancient city | (২য় পর্ব)

প্রাচীন গ্রীক শহর এফেসাস ephesus ancient city

প্রাচীন গ্রীকদের বানানো যে সকল শহর বা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে অন্যতম তুরস্কের ইজমীরের এফেসাস। প্রিয় দর্শক, এমনই একটি প্রাচীন শহর দেখাতে আজকে আমরা আপনাদেরকে নিয়ে যাচ্ছি ইজমীর শহরের অদূরে সেলচুক জেলায়।
প্রাচীন গ্রিস একটি প্রাচীন সভ্যতা, যা অনেক বিক্ষিপ্ত শহর-রাজ্যের গঠিত। এটা একদিকে এশিয়া মাইনর বলকান উপদ্বীপ, এজিয়েন দ্বীপ দক্ষিণে, সেইসাথে দক্ষিণ ইতালি, সিসিলি ও কৃষ্ণ সাগরের অঞ্চলের পশ্চিম উপকূলে জুড়ে বিস্তৃত ছিলো। এমনি একটি প্রাচীন শহর ছিলো এফেসাস।
এই শহরের ধ্বংসাবশেষগুলো শতাব্দি থেকে শতাব্দীর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি তখন ভূমধ্যসাগরের ব্যাবসায়ের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো। পাকা রাস্তা স্কোয়ার, অভিজাত গোসলখানা এবং স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসাবশেষগুলো এবং হ্যাড্রিয়ানের মন্দিরটি 138 খ্রিস্টাব্দের আগে সম্রাট হ্যাড্রিয়ানের সফরের জন্য নির্মিত হয়েছিল।
গ্রিক স্থাপত্যের বড় বড় স্থাপনাগুলো হচ্ছে থিয়েটার বা নাট্যমঞ্চ। থিয়েটারে প্রথাগত রীতিনীতি অনুযায়ী অভিনীত নাটক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে। থিয়েটারগুলো অর্ধ-গোলাকৃতির হতো। প্রসেসেনিয়াম অর্থাৎ মঞ্চের বিশেষ জায়গা এবং মঞ্চকে ঘিরে চারদিক জুড়ে বসার ব্যবস্থা থাকত এসব থিয়েটারে।
ভালো একটা গ্রিক থিয়েটার প্রধান তিনটি অংশে নির্মিত হতো- স্কিন, থিয়েট্রন এবং অর্কেস্ট্রা। স্কিন (অভিনয়ের জায়গা) এবং থিয়েট্রন (বসার জায়গা) এই দুইয়ের মাঝের গোলাকার অথবা অর্ধ-গোলাকার সমতল জায়গা হচ্ছে অর্কেস্ট্রা। কিছু কিছু থিয়েটারে অভিজাতদের জন্য বিশেষ বসার স্থান থাকত, যেগুলোকে প্রোহেড্রিয়া বা প্রোয়েড্রিয়া বলা হতো।
টেম্পল অফ আর্টেমিস হল এফেসাস প্রাচীন শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। যদিও এটি দেখতে শুধুমাত্র একটি একক কলামের মতো, এই কাঠামোটির একটি মহান ঐতিহাসিক এবং শৈল্পিক মূল্য রয়েছে। ধ্বংস হওয়ার আগে এটি ছিল প্রাচীন বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের একটি।
ছড়ানো ছিটানো পিলার রাখা এই জায়গাটাকে বলা হয় প্যালেস্ট্রা বা জিমনেশিয়াম। পৌর কর্তৃপক্ষ এদের নির্মাণ এবং নিয়ন্ত্রণ করত। এগুলো পরিচালিত হতো জিমনিশিয়ার নামে সরকারী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে। মূলত, জিমনেসিয়াম হচ্ছে এমন একটা জায়গা যেখানে যুবক এবং মধ্যবয়স্ক পুরুষেরা প্রতিদিনকার খেলাধুলা এবং ব্যায়াম করত।
তবে সেসব জায়গায় লোকেরা সামাজিক যোগাযোগ, টুকটাক কথাবার্তা, গল্পগুজব, গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং শিক্ষা-দীক্ষা বিষয় নিয়েও আলাপ আলোচনা করত। কিছু জিমনেসিয়ামে লেকচার হলও থাকত। সেখানে ভ্রমণরত দার্শনিকেরা এসে বক্তৃতা দিয়ে যেতেন। ছাত্রদের জন্য একটা ছোট্ট পাঠাগারও রাখা হত সেখানে।
এছাড়াও, ব্যায়ামাগারগুলো প্রদর্শনী, বিচারসংক্রান্ত শুনানি, এবং সরকারি অনুষ্ঠানাদির পাশাপাশি যুদ্ধের সময় সামরিক ব্যায়াম এবং সামরিক অনুশীলনের জন্যেও ব্যবহৃত হতো।
প্রতিটি স্থাপনা প্রচন্ড শক্তিশালী মজবুত পাথর দ্বারা নির্মিত। এসব পাথরের উপড়ে রয়েছে খোদাই করা চমৎকার কারুকাজ যা সে সময়ের নির্মান শিল্পিদের মেধার সাক্ষী হয়ে আছে। পাথরে খোদাই করা এসব কারুকাজ করা হতো অত্যান্ত সুক্ষভাবে।
আমরা পুরো জায়গাটি হেটে হেটে দেখছি। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এবং প্রচন্ড বাতাসের মধ্যে এই প্রাচীন জায়গাটি দেখতে বেশ উপভোগ্যই লাগছিলো। এই বিশাল বিশাল স্থাপনা বানিয়ে মানুষ মনে করতো তারা মনে হয় এসবের ভেতর আজীবন বেঁচে থাকবে, তাদের আর কেউ ধ্বংস করতে পারবেনা কিন্তু সবকিছুরই যে শেষ আছে। শেষ নেই বা ধ্বংস নেই একমাত্র মহান আল্লাহর।
হাটতে হাটতে আমরা প্রায় শেষ দিকে এসে দেখতে পাচ্ছি খোলা মাঠে সারি সারি কবর সদৃশ সিন্দুকের মতো দেখা যাচ্ছে যেগুলোতে সে সময়ের রাজ পরিবারের যারা মারা যেতো তাদেরকে মমি করে রেখে দেওয়া হতো। আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে পাথরের নির্মিত এই কফিনগুলো।