জুলাই সনদ বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ। সংবিধানের ফাঁদে আগামীর রাজনীতি। Bangladesh Constitution
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুলাই সনদ এক নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। অনেকেই এটিকে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধান কিংবা নতুন সংকটের সূচনা হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশের সংবিধান ইতিমধ্যে বহুবার সংশোধিত হয়েছে এবং প্রতিটি সংশোধনী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও ক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে বলে সমালোচনা রয়েছে। ফলে “জুলাই সনদ” শুধু একটি দলিল নয়, বরং আগামী দিনের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণের একটি চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জুলাই সনদের বাস্তবতা
জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা তুলে ধরছে। একদিকে শাসক দল এটিকে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার অংশ হিসেবে প্রচার করছে, অন্যদিকে বিরোধী শিবির মনে করছে এটি সংবিধানের ফাঁদে ফেলে জনগণের ভোটাধিকার খর্ব করার আরেকটি প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের সংবিধানে আগে থেকেই এমন অনেক ধারা রয়েছে যা কার্যত ক্ষমতাসীনদের পক্ষে সুবিধাজনক। এর মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের ভূমিকা এবং মৌলিক অধিকারের প্রয়োগে নানা সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। জুলাই সনদ এসব সীমাবদ্ধতাকে আরও সুসংহত করার একটি হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
সংবিধানের ফাঁদে আগামীর রাজনীতি
বাংলাদেশের সংবিধান একটি “লিখিত দলিল” হলেও বাস্তবতার সাথে এর প্রয়োগের মধ্যে তীব্র বৈপরীত্য বিদ্যমান। সংবিধানে স্পষ্টভাবে জনগণের ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হলেও বাস্তবে সেগুলো সংকুচিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের ধারাগুলো নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে বলেই অভিযোগ রয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে দ্বন্দ্ব : ৯০-এর দশকে জনগণের আন্দোলনে যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্ম হয়েছিল, তা ২০১১ সালের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করে দেওয়া হয়। এর ফলে বর্তমান নির্বাচনকালীন ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দলই নির্বাচন পরিচালনার প্রধান নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়। জুলাই সনদও এই কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার ইঙ্গিত বহন করে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : সংবিধানে আদালতের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বাস্তবে বিচার বিভাগ প্রশাসনের অধীন হয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতের রাজনীতিতেও এ বিষয়টি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকার : সংবিধান নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গ্রেপ্তার-বাণিজ্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
আওয়ামী তৎপরতা
আওয়ামী লীগ বর্তমানে সংবিধানের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী রাজনৈতিক দল। তাদের কৌশলগুলো মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায় –
1. সংবিধানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার : সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার আইনগত বৈধতা তৈরি করা।
2. নির্বাচনী কাঠামো নিয়ন্ত্রণ : নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে প্রভাবিত করে একতরফা নির্বাচনী ব্যবস্থা বজায় রাখা।
3. আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও প্রচারণা : বিদেশি শক্তির সমর্থন নিশ্চিত করা এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধী কণ্ঠ দমনে কঠোরতা বজায় রাখা।
জুলাই সনদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও সংবিধানকে নিজের অনুকূলে সাজাতে চাইছে। তারা চাইছে এমন একটি সাংবিধানিক কাঠামো, যেখানে নির্বাচন হবে, কিন্তু প্রকৃত প্রতিযোগিতা বা জনগণের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে। এভাবে তারা আন্তর্জাতিক মহলে গণতন্ত্রের ছদ্মবেশ দেখাতে পারবে, অথচ দেশের ভেতরে ক্ষমতা ধরে রাখবে।
ভবিষ্যতের রাজনীতির চিত্র
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের রাজনীতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। জনগণ ইতিমধ্যে একাধিক নির্বাচনী প্রহসন প্রত্যক্ষ করেছে। ভবিষ্যতে একই ধারা চলতে থাকলে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়বে। এর ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা, গণআন্দোলন কিংবা আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
অন্যদিকে, যদি সত্যিকার অর্থে জুলাই সনদ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে এবং সংবিধানের গণতান্ত্রিক ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, তবে এটি দেশের জন্য একটি ইতিবাচক মোড় হতে পারে। তবে অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ক্ষমতাসীন দল সংবিধানকে সাধারণত নিজেদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করেছে।
উপসংহার
বাংলাদেশের সংবিধান জনগণের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক অধিকারের দলিল হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা সংরক্ষণের অস্ত্র হয়ে উঠেছে। জুলাই সনদ সেই ধারারই সর্বশেষ অধ্যায়। আগামীর রাজনীতি নির্ভর করবে সংবিধানের এই ফাঁদ থেকে মুক্তি পেয়ে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে কিনা তার ওপর। আওয়ামী লীগের তৎপরতা প্রমাণ করছে তারা যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তবে জনগণের চাপে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় আগামী দিনে পরিবর্তনের দরজা খুলে যেতে পারে।
#জুলাইসনদ, #বাংলাদেশসংবিধান, #রাজনীতি, #আওয়ামীলীগ, #গণতন্ত্র, #ভোটাধিকার, #সংবিধানেরফাঁদ, #বাংলাদেশরাজনীতি, #ভবিষ্যতেররাজনীতি, #আওয়ামীতৎপরতা, #গণআন্দোলন, #বাংলাদেশনির্বাচন, #আইনেরশাসন, #মানবাধিকার, #নির্বাচনীসংকট, #রাজনৈতিকঅচলাবস্থা, #বাংলাদেশভবিষ্যৎ, #নির্বাচন২০২৫, #BangladeshPolitics, #JulyCharter
Информация по комментариям в разработке