Скачать или смотреть "নদীতে নইলি কিছু থাহে না"

"নদীতে নইলি কিছু থাহে না"
হারুন আনসারী,
"নদীতে নইলি কিছু থাহেনা, ভাঙ্গন নইলে আর ছাড়েনা, ব্যাবাক টান দিয়্যা নিয়্যা যায়।" ভেঙ্গে নেয়া ঘরবাড়ি দেখিয়ে বলছিলেন প্রায় শতবর্ষী শহীদ শেখ। ফরিদপুরের সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামে তার বাড়ি। বারবার পদ্মার ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এখানে ভিটে গেড়েছিলেন। তাও সরিয়ে নিলেন শেষ মুহুর্তে। শহীদ শেখের স্ত্রী বলেন, ‘গত ৮-১০দিন ধরে নদী ভাঙতেছে। বাড়িঘর তো আর নদীতে দিয়া যাবি না। তাই বাড়ি ভাইঙ্গ্যা সরায় নিছি।'
চলতি বর্ষা মৌসুমে ফরিদপুরে পদ্মা নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে নদীর ভাঙন। গত পনের দিনে সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চারটি গ্রামের প্রায় ১০০ একর জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকে পরের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে। নদী ভাঙনের খবর পেয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ত্বরিত পদক্ষেপ হিসেবে কিছু কাজ শুরু করলেও তা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন দেখা গেছে, পদ্মাবেষ্টিত চরাঞ্চল নথর্ চ্যানেল ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গী, শুকুর আলী মৃধার ডাঙ্গী, ঈমান আলী মাতুব্বরের ডাঙ্গী ও উসমান মাতুব্বরের ডাঙ্গীতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভিটেমাটি থেকে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। মানুষজন তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ প্রায় ৩০০ একর ফসলি জমি। এসব জমিতে ধান ও পাটসহ নানা ফসল রয়েছে।পদ্মা নদীর নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের এসব স্থানে ভাঙন শুরু হওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে বালিভর্তি জিওব্যাগের বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, বছরের পর বছর চলতে থাকা পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে তাদের জমিজমা ও ঘরবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের।
ষাটোর্ধ্ব মাইমুদ্দিন মোল্লা বলেন, গত তিন বছর যাবত এখানে নদী ভাঙন চলছে। জমিতে ইরি ব্লক ছিল, ডিপমেশিন স্যালোমেশিন গাড়া ছিল, সব নদীতে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার প্রায় ৮০ বিঘা জমি ছিল এক বাটে, এর মধ্যে ৫০ বিঘা জমি নদীতে নিয়ে গেছে। মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা ভাইঙ্গ্যা আসতি আসতি তারা অসহায় হয়ে পড়ে গেছে। মানুষজনও এখন তাদের আশ্রয় দিতে চাইতেছে না। জহিরুল হক নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি খাটাখাটনি করে ২০ বিঘা জমি রেখে ছিলাম। চোখের সামনে সব নদীতে নিয়ে গেছে। এখন এই বয়সে আধা শতাংশ জমি কেনার সামর্থ্য নাই। আমরা আশা করছি, সরকার আমাদের জমিজমা রক্ষায় একটা স্থায়ী বাঁধ করে দিবে। তিনি বলেন, নদী পাড়ে জমির দাম কম হওয়ায় আমার মতো অনেক দরিদ্র লোক এখানে জমি কিনেছিল। বকরি খাসি পালার জন্য অনেকে এখানে জমি কিনেছিল। তারাও আমার মতো অসহায় হয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষক আলতাফ মিয়া বলেন, আমি জমিতে আউশ ধান, পাট ও তিল লাগাই ছিলাম। সব নদীতে নিয়ে গেছে। আমি এখন একেবারে অসহায় হয়ে গেছি।স্থানীয় ইউপির সংরক্ষিত নারী সদস্য সালমা আক্তার বলেন, এমন অবস্থা হয় যে, রাতে রাতে বাড়িঘর তলিয়ে যায়। ভাঙন শুরু হলে তারা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আমরা বাধ্য হয়ে কয়েকটি পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু একজন মানুষের পক্ষে কত পরিবারকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব? আমরা চাই এর একটি স্থায়ী সমাধান।নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, চারটি গ্রামে এ বছর প্রায় ১০০ একর জমি পদ্মায় তলিয়ে গেছে। অনেকে তাদের বাড়িঘর ভেঙে অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে। অনেকের যাওয়ার কোনো জায়গা নাই। এমন প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার তারা অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছে ভাঙন ঠেকাতে হয়তো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে এই আশায়। তিনি বলেন, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, পদ্মার ভাঙন থেকে এসব গ্রামের জমিজমা ও ভিটেবাড়ি রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, বর্ষার পানি ঘূর্ণনের ফলে এখানে বেশ কিছু স্থানে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা খবর পেয়ে সাথে সাথে জিওব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর বাইরেও কয়েকটি জায়গায় ভাঙনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। আশা করছি, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ এলে এসব স্থান ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো।ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, নদী ভাঙনের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে। আর পদ্মার ওই পয়েন্টে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে।
‪@faridpurtimes‬