সূরাঃ আল-আন'আম :১৫১ বল, ‘এসো, তোমাদের উপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি যে, তোমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্রের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে রিয্ক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার।
(মিশকাত ৩৫০৮-[২৩] সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়ের পেটে থাকাবস্থায় গর্ভস্থিত ভ্রূণ হত্যার রক্তপণস্বরূপ একটি গোলাম বা বাঁদী মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর রক্তপণে অভিযুক্ত বলে উঠল, আমি কি কারণে এরূপ রক্তপণ আদায় করব? যে কক্ষনো পান করেনি, কিছু খায়নি, কথাও বলেনি এবং কাঁদেওনি- এ জাতীয় হত্যার অপরাধ তো শাস্তিযোগ্য নয়। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ লোকটি তো গণক গোত্রের একজন।
মালিক ১৬৫৯, নাসায়ী ৪৮১৮।
কিন্তু তিনি লোকটিকে তিরস্কার করেছিলেন এজন্য যে, সে নাবীর ফায়সালাকে মানতে রাজি ছিল না। (শারহেন্ নাসায়ী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ৪৮৩৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)
রিয়াযুস স্বা-লিহীন ২৩। আবূ নুজাইদ ইমরান ইবনু হুসাইন খুযা‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, জুহাইনা গোত্রের এক নারী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হল। সে অবৈধ মিলনে গর্ভবতী ছিল। সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি দণ্ডনীয় অপরাধ করে ফেলেছি তাই আপনি আমাকে শাস্তি দিন!’ সুতরাং আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আত্মীয়কে ডেকে বললেন, ‘‘তুমি একে নিজের কাছে যত্ন সহকারে রাখ এবং সন্তান প্রসবের পর একে আমার নিকট নিয়ে এসো।
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ হাছকাফী বলেছেন: (চার মাসের পূর্বে গর্ভস্থ বাচ্চা ফেলা বৈধ, স্বামীর বিনা অনুমতিতে হলেও)। দেখুন: আদ- দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা ( ১৯৭)।
এখান থেকে বুঝা গেল চার মাস পূর্ণ হওয়ার পর তথা রুহ সঞ্চারের পর গর্ভস্থ বাচ্চা ফেলে দেয়া অবৈধ।
এ বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে বর্ণনা করেছেন হানাফী মাযহাবের অন্য আরেকজন ইমাম ইবনু নুজাইম, তিনি উল্লেখ করেছেন : (গর্ভধারণের পর কি তা ফেলা বৈধ? হ্যাঁ বৈধ যতক্ষণ না তা থেকে সৃষ্টির রূপ নেয়, আর তা কেবলমাত্র হয় এক শত বিশ দিন পর। (তিনি বলেন): এ উক্তির দাবী হলো যে, তারা সৃষ্টির রুপ নেওয়ার দ্বারা বোঝাতে চেয়েছেন রুহ সঞ্চারের বিষয়টি)। দেখুন: আন নাহরুল ফায়িক, (২/২৭৬)।
অর্থাৎ রুহ সঞ্চারের আগে ফেলা বৈধ , পরে বৈধ নয়।
হাম্বলী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ, শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উছাইমীন বলেছেন: ( সারকথা হল, প্রাধান্যবান মতের ভিত্তিতে বীর্য অবস্থায় গর্ভপাত ঘটানো হয় মাকরুহ, না হয় হারাম। তবে যাদুল মুসতাকনি' কিতাবে লেখক যে মতের উপরে চলেছেন তার ভিত্তিতে সেটা বৈধ। তবে রক্তপিন্ডে পরিণত হওয়ার পর সেটা ফেলা হারাম এমনকি লেখকের মতে-ও, তবে যদি ফেলার আবশ্যকতা দেখা দেয় তবে তা বৈধ। আবার যখন তা সৃষ্ট মাংসপিন্ডে পরিণত হবে, তখনো তা গর্ভ থেকে ফেলা হারাম, তবে একান্ত আবশ্যকতা দেখা দিলে তা ফেলা বৈধ। এরপর যখন তাতে রুহ সঞ্চার হয়ে যায় তখন একান্ত আবশ্যকতা দেখা দিলে-ও তা ফেলা হারাম ; কারণ তা প্রাণ হত্যার নামান্তর)।
দেখুন: আশ শারহুল মুমতি', (১৩/৩৪৬)।
মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম করাফী বলেছেন: ( আর যখন নারীর গর্ভাশয় পুরুষের শুক্রাণু গ্রহণ করবে তখন তা নষ্ট করার জন্য হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয়। আর যখন তা সৃষ্টির রূপ নেয় তখন তা নষ্ট করা আরো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আর যখন তাতে রুহ সঞ্চার করা হয়, তখন তা নষ্ট করা আরো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ; কেননা সেটা প্রাণ হত্যার নামান্তর সর্বসম্মতিক্রমে)।
দেখুন: যাখীরা, (৪/৪১৯)।
শাফেঈ মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ শিহাবুদ্দিন আর রমল্লী বলেছেন: আর গর্ভস্থ বাচ্চার মাঝে রুহ সঞ্চারের অবস্থা এবং তৎপরবর্তী অবস্থা থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাচ্চা ফেলে দেয়া নিঃসন্দেহে হারাম। তবে রুহ সঞ্চারের পূর্বের অবস্থায় বাচ্চা ফেলা সম্পর্কে এটা বলা চলবে না যে, সেটা অনুত্তম বরং সম্ভবনা আছে যে, সেটা মাকরুহ তানযিহী কিংবা হারাম। আর রুহ সঞ্চারের কাছাকাছি সময়ে ফেলা হলে সেক্ষেত্রে হারাম হওয়ার বিষয়টি আরো শক্তিশালী হিসেবে গণ্য হবে। দেখুন: নেহায়াতুল মুহতায, (৮/৪৪২)।
হাম্বলী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ইবনে কুদামা বলেছেন:আর যদি গর্ভবতী নারী ঔষধ সেবন পূর্বক গর্ভস্থ বাচ্চা ফেলে দেয়, তাহলে তার উপর গুর্রাহ ওয়াজিব, সে তা থেকে কোন মীরাস পাবে না, এবং সে একটি দাস আযাদ করবে। আমার জানা মতে সামগ্রিক ভাবে এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে কোনো মতবিরোধ নেই তবে কিছু আলেম কাফ্ফারাকে ওয়াজিব বলেননি)। দেখুন : আল মুগনী, (৮/৪১৮)।
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির আলেমদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: চার মাস পূর্ণ হয়েছে এমন গর্ভস্থ বাচ্চাকে যদি কোনো মহিলা ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে দেয় , তবে তার করণীয় কী এবং তার কাফ্ফারা কী?
তারা এর জবাবে বলেন: ( যে মহিলা ইচ্ছাকৃতভাবে তার গর্ভস্থ বাচ্চা হত্যা করবে তার উপর আল্লাহর নিকট তওবা-ইসতেগফার করা ওয়াজিব, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করবেন। আর তার উপর একটি গুর্রাহ (غرة) দ্বারা তথা একটি দাস বা দাসী দ্বারা দিয়াত দেয়া ওয়াজিব যার মূল্য মায়ের দিয়াতের এক দশমাংশ তথা পাঁচটি উট যার বর্তমান মূল্য পাঁচ হাজার রিয়াল সৌদি) । দেখুন : স্থায়ী কমিটির ফতোয়া, (২১/২৫৫)।
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়াতে আরো এসেছে: (উক্ত গর্ভস্থ বাচ্চাকে যদি চার মাস পূর্ণ হওয়ার পর ফেলে দেয় তাহলে ফেলে দেয়ার বিনিময়ে একটি গুর্রাহ তথা দাস বা দাসী দ্বারা দিয়াত দেয়া ওয়াজিব এবং কাফ্ফারা দিতে হবে অর্থাৎ একটি মুমিন দাস আযাদ করতে হবে , না পারলে একটানা দু'মাস রোযা রাখবে ও এই পাপ হতে আল্লাহর কাছে তওবা-ইসতেগফার করবে)। দেখুন: স্থায়ী কমিটির ফতোয়া,( ২১/ ৩১৬)।
(মিশকাত) ১৮
Информация по комментариям в разработке