Скачать или смотреть ইমাম বুখারী রঃ নিকট তারাবি ও তাহাজ্জুদ আলাদা নামাজ

যারা কিয়ামুল লাইলের নবীজি (সা.)-এর ১১, ১৩, ১৬ ইত্যাদি বৈচিত্র্যময় রাকাত সংখ্যার সঠিক কোনো ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়ে 'তারাবীহ আর তাহাজ্জুদ' একই সালাত[১] বলে প্রচার করছে তারা শুধুই ইসলামের গত চৌদ্দশত বছরের পুরনো শিক্ষা থেকেই ছিটকে পড়েনি, বরং ইমাম বুখারী (রহ.)-এর মত যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসকেও অজ্ঞ আর নাদান সাব্যস্ত করেছে! যে সব হাদীসের 'সালাতুত তারাবীহ'-কে আজকের ফেতনার যুগে নিতান্তই দুর্বল যুক্তির পেছনে পড়ে যারা 'তাহাজ্জুদ'-এর সাথে গুলিয়ে ফেলছে, তারা কিন্তু প্রকারান্তরে 'তারাবীহ'-এর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব থাকাকেই অস্বীকার করছে, যদিও সূক্ষ্ম এ দিকটি অনেকের এখনো বোধগম্য হচ্ছে না!

ইমাম বুখারী (রহ.)-এর তারাবীহ শেষে পৃথকভাবে 'তাহাজ্জুদ' পড়ার দলিল নিম্নরূপ,

"যখন রমাযানের প্রথম রাত আসতো তখন মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী (রহ.)-এর শিষ্যরা (ছাত্ররা) তাঁর কাছে একত্র হয়ে যেতো। তারপর তিনি তাদের নিয়ে (তারাবীহ) সালাত পড়তেন। প্রতি রাকাতে তিনি বিশ আয়াত তেলাওয়াত করতেন। আর এভাবে তিনি (কুরআন) খতম করতেন। আর যখন সাহরীর (তাহাজ্জুদের) সময় হয়ে যেত, তখন তিনি অর্ধেক থেকে কুরআনের একতৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করতেন। এভাবে সাহরীতে তিন দিনে (কুরআন) খতম করতেন।" (হাদিউস সারী [هدى السارى] মুকাদ্দিমা ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার আসকালানী)।

(তাহযীবুল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল ২৪:৪৪৬, ইলাউস সুনান ৭:৭৩, ফাতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ১:৬৫৩ এর মুকাদ্দামাহ هدى السارى দ্রষ্টব্য, ইবনে হাজার আসকালানী রহ.)।
________
টিকাঃ [১] বলে রাখা জরুরি, তারাবীহ'র হুকুম হিজরতের পর মদনী যুগে এসেছে এবং এর প্রমাণ হচ্ছে শুধুই 'সুন্নাহ' (وَسَنَنْتُ لَكُمْ قِيَامَهُ)। বিপরীতে 'তাহাজ্জুদ' এর হুকুম হিজরতের আগে এবং মক্কী যুগেই এসেছে আর তার প্রমাণ পবিত্র কুরআনের 'আয়াত' (وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ); ফলে দুটি সম্পূর্ণ আলাদা দু জিনিস বলেই প্রতীয়মান হয়। আপনি বিষয়টি আরও ক্লিয়ার হতে পারবেন যদি উভয়ের গুরুত্ব নিয়েও একটু ভাবতে পারেন। তারাবীহ'র অস্তিত্বের অস্বীকারকারী বড়জোর ফাসেক কিন্তু কাফের নয়, অথচ 'তাহাজ্জুদ' এর অস্তিত্ব অস্বীকারকারী নিঃসন্দেহে কুরআনের আয়াত অস্বীকারকারী বলে গণ্য হবে, ফলে তাকে তাকফীর করা হবে। তারাবীহ জামাতে পড়াই সুন্নাহ, অপরদিকে তাহাজ্জুদ জামাতে পড়া হয় না। কাজেই কোনোভাবেই দুটি এক জিনিস হতে পারেনা, অন্যথা প্রশ্নগুলোর কোনো জবাব থাকেনা।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেম শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (রহ.) ইমাম বুখারীর উল্লিখিত স্বতন্ত্র আমল দুটির বাস্তবতা সরাসরি অস্বীকার করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি সেটির সনদ নিয়ে আপত্তি তোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, তিনি সেটা করেও লজ্জিত হয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, "ফাতহুল বারী'র মুকাদ্দামা 'হাদীউস সারী' (هدى السارى)-এর উদ্ধৃতিটির সনদ নেই, কাজেই এটি মারদূদ তথা পরিত্যাজ্য।" (تعداد قیام رمضان کا تحقیقی جائزہ Page no. 106)।

উত্তরে বলা হয় যে, ইমাম বুখারীর উক্ত আমলের সনদ শুধু দু'চারটা কিতাবে আসেনি, বরং অসংখ্য কিতাবে বিদ্যমান। ইমাম জামালুদ্দীন আল মিযযি [المزى] (রহ.) তার 'তাহযীবুল কামাল' গ্রন্থেও এর টনটনে সনদ এনেছেন। দেখুন, তাহযীবুল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল ২৪:৪৪৬। এখানে শুধু ইমাম বায়হাক্বীর 'শু'আবুল ঈমান লিল বাইহাকী' (شعب الايمان البيهقى) থেকে উল্লেখ করছি। ইমাম বায়হাক্বী (রহ.) আপনা কিতাবটিতে ‘হাদীউস সারী’ কিতাবের বর্ণনাটির সনদ উল্লেখ করেছেন এবং টিকায় পরিষ্কার করে লেখা আছে যে, لا بأس فيه অর্থাৎ “এর সনদে কোনো সমস্যা নেই।” (শু'আবুল ঈমান লিল বায়হাক্বী, খ-৩, পৃ-৫২৪-৫২৫))।