Скачать или смотреть মুফতি আজম আল্লামা আব্দুস সালাম চাটগামি রহঃ এর বর্ণাট্য জীবনি। কে এই মুফতি আজম বাংলাদেশ?

মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামি আমাদের জন্য কত বড় নেয়ামত
তা বুঝতে এক নজরে দেখে নিতে পারেন তার জীবনী থেকে কিছু ঘটনা।

(১) ১৯৬৭ সালে তিনি দাওরায় হাদিস সমাপ্ত করেন জিরি মাদরাসা থেকে। জীবনের শুরু থেকে দাওরায় হাদিস পর্যন্ত পরিক্ষায় প্রথম স্থান তার দখলে ছিল। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি ছাত্র সংসদের দায়িত্বও পালন করেছেন৷ জিরি মাদরাসায় পড়াকালীন সময়ে তিনি জমিয়তুত তলাবায় জিরির সভাপতিও ছিলেন।

২, দাওরা শেষ করে বান্নুরী টাউন করাচীতে ইউসুফ বিন্নুরির কাছে উলুমুল হাদিস পড়তে যান। প্রথম কথোপকথনেই মেধা আন্দাজ করে ফেলেন ইউসুফ বান্নুরী। তাকে বললেন,
-হাদিস তো একবার পড়েই এসেছো। এবার তাখাসসুসে ভর্তি হয়ে যাও।
-আমার উস্তাদ তো আপনার কাছে হাদিস পড়তে পাঠিয়েছেন।
-তোমার উস্তাদ কে?
-আব্দুল ওয়াদুদ সন্দিপী।
-আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী ও মাহমুদুল হাসান দেওবন্দীর ছাত্র যে সেই আব্দুল ওয়াদুদ?
-হ্যা
-আচ্ছা। তবে আমার কাছে পড়তে হলে দুইটা শর্ত মেনে চলতে হবে। হাদিসের শরাহগুলো ভালভাবে মুতালায়া করে ফেলতে হবে। হাদিসের দরসে কোনদিন অনুপস্থিত থাকা যাবেনা।
আব্দুস সালাম সাহেব বলেন, সে বছর আমি ফাতহুল বারি, ফাতহুল মুলহিম, মায়ারেফুস সুনান, বাজলুল মাজহুদ সহ আরো বেশ কিছু হাদিসগ্রন্থের শরাহ অধিকাংশ মুতালায়া করে ফেলি৷ মুফতিয়ে আযম সে বছর পাকিস্তানের বেফাক বোর্ড পরিক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।

৩, হাদিসের উপর মাস্টার্স শেষে তিনি আরো তিনমাস তাখাসসুস ফিল হাদিস পড়েন। এরপর সে বছরই বিন্নুরী টাউনে ইফতা বিভাগ খোলা হয়৷ তিনি বিন্নুরী টাউনের ইফতা বিভাগের একেবারে প্রথম বর্ষের ছাত্র।
ইফতার বছর শেষ তিন মাসে ইউসুফ বান্নুরি রহ. আব্দুস সালাম সাহেবকে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখতে দেন। বিষয় ছিল "প্রচলিত ব্যবসায় স্বত্ত বিক্রি, ফিকহী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর তাহকীক"
প্রবন্ধটি দেখে তখন ইফতার প্রধান দুই তত্ত্বাবধায়ক
মন্তব্য করেন তিনি মুমতাজেরও বেশি পাওয়ার যোগ্য। এরপর আব্দুর রশিদ নোমানী প্রবন্ধ দেখে তাকে মুমতাজ প্রদান করেন।
তাখাসসুস ফিল ফিকহের দুই বছর দরসে তিনি শরহে উকুদু রসমিল মুফতি, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, আশবাহ নাযায়ের, দুররুল মুখতার ১ম খন্ড, হেদায়া তিন খন্ড পড়ে শেষ করেছিলেন। দরসের বাইরেও তার মুতালায়ার ব্যপ্তি ছিল অবাক হওয়ার মত। প্রায় চল্লিশ হাজার পৃষ্ঠা মুতালায়া করেছেন তিনি এই দুই বছরে।

৪, পড়াশুনা শেষে উস্তাদদের পরামর্শে তিনি ইফতা বিভাগে খেদমত শুরু করেন। কিছুদিন পর মুফতিয়ে আযম ওয়ালি হাসান টুংকি তাকে সহকারী মুফতি পদে নিয়ে আসেন। উনার ইন্তেকালের পর আব্দুস সালাম চাটগামী প্রধান মুফতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পাশাপাশি তিনি সহীহ মুসলিম ও সুনানে তিরমিযির দরস দিতেন। তখন তিনি করাচীর ঐতিহ্যবাহী আহমদ উসমানী জামে মসজিদের খতিবও ছিলেন।

৫, পাকিস্তানে মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামির খেদমত ও তার মূল্যায়ন কিভাবে হত সেটাও দেখে নেওয়া যাক। বান্নুরী টাউনের মুতাখাসসিস মুফতি নুরুল আলম আরকানী বলেন, মুফতিয়ে আযম আব্দুস সালাম চাটগামীর যে পরিমাণ ফাতওয়া বিন্নুরী টাউন মাদরাসার রেজিস্ট্রি কিতাবে সংরক্ষিত আছে তার সংখ্যা লক্ষাধিক। কারণ তিনি দীর্ঘ ত্রিশ বছর ইফতা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তখন বান্নুরী টাউন থেকে প্রতি বছরের সংকলনে নয় হাজারেরও অধিক ফাতওয়া জমা হত৷ সে হিসেবে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক ফাতওয়া তার তত্ত্বাবধানে লেখা হয়েছে।
বান্নুরী টাউন মাদরাসার দ্বিতীয় মুহতামিম আল্লামা আহমদুর রহমান বলেন, মুফতি আব্দুস চাটগামী তো ফাতওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন।
(বাইয়্যিনাতে বান্নুরী/ পৃষ্ঠাঃ ২৪৪)

৬, ফাতওয়ার কাজে তার মকবুলিয়্যাত ও গ্রহণযোগ্যতা তখনই অনন্য পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিল। আশেক এলাহী বুলন্দশহরীর সুযোগ্য সাহেবজাদা মুফতি আব্দুর রহমান কাউসার মদিনায় থাকাকালীন সময়ে ভারত উপমহাদেশের মুফতিদের ফতোয়াগ্রন্থের তালখিস করে জামেউল ফতোয়া নামে একটি সংকলনের কাজ করছিলেন। তার কাজটি এতটাই মাকবুল ছিল যে স্বয়ং নবিজী (সা) তার স্বপ্নে এসে বললেন তুমি আব্দুস সালামের জাওয়াহিরুল ফতোয়াকেও তোমার এই সংকলনের অন্তর্ভুক্ত করে নাও।

এমন আরো অনেক ঘটনায় বর্ণিল হয়ে আছে মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামীর জীবনী। মূল্যায়ন করতে চাইলে এগুলো জেনে রাখাই আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিল।