Скачать или смотреть বনেদি বাড়ির পুজো-পূর্ববর্ধমানের পাটুলির সাহাবাড়ির বিখ্যাত দুর্গাপুজো--বাপ্পাদিত্য ভকত

পূর্ববর্ধমানের পাটুলির সাহাবাড়ির বিখ্যাত দুর্গাপুজো। ইতিহাস বিখ্যাত জনপদ পাটুলি।প্রাচীন নাম পট্টদ্বীপ।এই পাটুলিতেই গড়ে উঠেছিল বাঁশবেড়িয়া শেওড়াফুলি রাজাদের আদি রাজধানী। গঙ্গাতীরবর্তী পাটুলি ইংরেজ আমলেও আলোকিত এক স্থাননাম।পাটুলি দুর্গাপুজোর জন্য বিখ্যাত।বৃহত্তর পাটুলিতে প্রায় ৫০ টির অধিক দুর্গাপুজো আসে।এর মধ্যে বনেদি বাড়ির জমদারি দুর্গা বলতেই যে নামটি সবার আগে আসে তা হলো সাহাবাড়ির বা কলুবাড়ির দুর্গাপুজো। গঙ্গার তীরে জমিদারি দালান বাড়িতে আজও এই দুর্গাপুজো এলাকার অন্যতম আকর্ষণ।আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন পাটুলির ডাকসাইটে জমিদার চারুচন্দ্র সাহা।পুজোর নানা নিয়ম কানুন লোকাচার আজও নিষ্ঠা ভরে পালিত হয়।
সাবেকি মূর্তি সাহাবাড়ির প্রতিমা।মায়ের টানা টানা চোখ। ডাকসাজের প্রতিমা। রথের দিন বিশেষ পূজা অর্চনার পর দেবীর গায়ে মাটি পড়ে।সেদিন থেকেই শুরু হয় শারদোৎসবের কাউন্ট ডাউন।এই পুজোর এমন কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সচরাচর দেখা যায় না।যেমন সাহাবাড়ির দুর্গাপুজোতে সিঁদুর খেলা আর সিঁদুর বিছানো হয়।সন্ধিপুজোর সময় নাটমন্দিরের সিঁড়িগুলিতে সিঁদুর বিছিয়ে দেওয়া হয়।বিশ্বাস করা দেবী যখন আসেন তখন সেই সিঁদূরের ওপর দেবীর চরণের ছাপ পড়ে।সন্ধিপুজোর সময় বাড়ির সধবা মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন।দশমীর দিনও পুনরায় তাঁরা সিঁদুর খেলেন।সন্ধিপুজোর সময় পূর্বে শূন্যে বন্দুক ফায়ার করা হতো।বর্তমানে আতশবাজি পোড়ানো হয়।নবমীতে হয় কুমারীপুজো। দশমীর দিন পূর্বে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রেওয়াজ ছিল।বর্তমানে অবশ্য লুপ্ত হয়ে গেছে।
সাহাবাড়ি বর্তমানে গঙ্গার কিনারে আবস্থিত।আগে গঙ্গা যখন দূরে ছিল জমিদারি আমলে হাতির পিঠে চেপে কলাবউ আসতো।সাহাবাড়ির দুর্গা বৈষ্ণব মতে পূজা হয় বলে পশুবলি কোনকালেই ছিল না।তার পরিবর্তে আখ,চালকুমরো ও কলা বলি হয়।বিসর্জনের রীতিটি আজও ধরে রেখেছেন সাহাবাড়ির সদস্যরা।দেবীকে নৌকায় চাপিয়ে ভাগীরথী বিহার করানো হয় ।তারপর একসময় গঙ্গগর্ভে দেবীকে জলশয়ান দেওয়া হয়।সাহাবাড়িতে পুজোপলক্ষে একসময় চারদিন ধরে জমিদারি প্রজাদের নিমন্ত্রন থাকতো।কলকাতার পেশাদারি যাত্রাপালায় জমিদারি নাটমঞ্চ মুখোরিত হতো।এখন কালের নিয়মে সে সব লুপ্ত হলেও ঐতিহ্য আর সাবেকিয়ানাকে আজও ধরে রেখেছেন সাহাবাড়ির একালের সদস্যরা।
কৃতজ্ঞতা--পাটুলির আত্মজন,দেবজ্যোতি মল্লিক