Скачать или смотреть শিক্ষিত ও আধুনিক কৃষক

কৃষিকাজকে বিজ্ঞানসম্মত, লাভজনক এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে পরিচালনা করার জন্য যিনি প্রথাগত কৃষি বা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত, তিনিই শিক্ষিত কৃষক (Educated Farmer)।
শিক্ষিত কৃষক বলতে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিধারী ব্যক্তিকে বোঝায় না, বরং সেই কৃষককে বোঝানো হয় যিনি:
কৃষি বিজ্ঞান (যেমন: মৃত্তিকা বিজ্ঞান, শস্য বিজ্ঞান, রোগতত্ত্ব) সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন।
আধুনিক প্রযুক্তি (যেমন: উন্নত জাতের বীজ, সেচ ব্যবস্থা, কৃষি যন্ত্রপাতি) ব্যবহার করতে জানেন।
বাজার ও অর্থনীতি (যেমন: ফসলের ন্যায্যমূল্য, খরচ ও লাভের হিসাব, বাজারজাতকরণ) সম্পর্কে সচেতন।
শিক্ষিত কৃষকের সুবিধা ও গুরুত্ব 💡
শিক্ষিত কৃষকের কারণে কৃষি খাতে বেশ কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে।
১. বিজ্ঞানসম্মত ও লাভজনক চাষ
প্রযুক্তির ব্যবহার: শিক্ষিত কৃষক আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, যেমন— মাটি পরীক্ষা, সুষম সার ব্যবহার, সঠিক কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রা এবং নতুন জাতের উচ্চফলনশীল বীজ সম্পর্কে জানতে পারেন। ফলে ফসলের উৎপাদন বা ফলন বৃদ্ধি পায়।
ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি: তারা কৃষিকে শুধু জীবিকা নয়, একটি লাভজনক শিল্প বা উদ্যোগ হিসেবে দেখেন। এতে সঠিক সময়ে ফসল কাটা, সংরক্ষণ করা এবং উন্নত বাজারজাতকরণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয়।
২. পরিবেশবান্ধব কৃষি
নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন: শিক্ষিত কৃষক রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন। ফলে তারা জৈব সার (ভার্মি কম্পোস্ট), জৈব বালাইনাশক, এবং সমন্বিত বালাই দমন (IPM) পদ্ধতি ব্যবহার করে বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনে আগ্রহী হন।
সম্পদের সঠিক ব্যবহার: তারা জলের অপচয় কমাতে আধুনিক সেচ পদ্ধতি (যেমন: ড্রিপ ইরিগেশন) ব্যবহার করেন এবং জমির উর্বরতা বজায় রাখতে শস্য পর্যায়ক্রম (Crop Rotation) অনুসরণ করেন।
৩. নতুনত্ব ও সম্প্রসারণ
নতুন ফসলের চাষ: তারা আবহাওয়া ও বাজারের চাহিদা বুঝে নতুন ও লাভজনক ফসল (যেমন: বিদেশী সবজি বা ফল) চাষের ঝুঁকি নিতে পারেন।
জ্ঞান বিতরণ: শিক্ষিত কৃষক নিজেরাই নতুন প্রযুক্তির প্রচারক ও সম্প্রসারণ কর্মী হিসেবে কাজ করেন, যা স্থানীয় এলাকার অন্যান্য কৃষকদের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।
শিক্ষিত কৃষকের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
শিক্ষিত কৃষকদের কাজকে আরও সফল করার জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা প্রয়োজন:
পুঁজির অভাব: আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত যন্ত্রপাতি কিনতে অনেক সময় পর্যাপ্ত পুঁজি বা ঋণের সহজলভ্যতা থাকে না।
নীতি ও বাজার সহায়তা: ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি পেতে সরকারি নীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।
জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অপ্রত্যাশিত বন্যা, খরা ও রোগের প্রকোপ মোকাবিলা করার জন্য ধারাবাহিক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
ভবিষ্যতে, শিক্ষিত কৃষকরাই হবেন দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি। কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে আরও সহজলভ্য করে এই ধারাকে শক্তিশালী করা অপরিহার্য।