হিমালয় পর্বতের কোন এক তপবনে বরুণ পুত্র বশিষ্ঠ মুনির আশ্রম ছিল, সেই স্থানে দৈবক্রমে অষ্টবসু তাদের স্ত্রীদের সাথে বিচরণ করছিলেন l দক্ষ কন্যা সুরভি নন্দিনী কামদুঘা ধেনু, যার দুগ্ধ পান করলে দশ সহস্র বৎসর পরমায়ু বৃদ্ধি পায়, শরীর থাকে অনন্ত যৌবন পূর্ণ আর রোগমুক্ত, বিচরণরত মুনির সেই তপবনেই, যাকে দেখে মুগ্ধ হল দিব্যবসু-ভার্য্যা l বারংবার স্ত্রীর অনুনয় বাক্যে আপ্লুত দিব্যবসু অবিবেচকের মত ভাবনাহীন, জ্ঞানহীন হয়ে অপহরণ করল বশিষ্ঠ মুনির সেই কামদুঘা ধেনু l গাভি না খুঁজে পেয়ে অন্বেষণ করতে গিয়ে জানতে পারলেন মুনি অষ্টবসুদের এই কুকীর্তির কথা, অভিশাপ দিলেন তাদের মর্তে জন্মগ্রহণ করবার। ছুটে আসলো অষ্টবসুরা মুনির কাছে, ক্ষমা চাইলো এই অন্যায় অপকর্ম করবার জন্য, কিন্তু মর্তে তাদের আসতেই হবে, আর বড় দোষী অর্থাৎ দিব্যবসুকে তার সমগ্র মর্ত্য জীবন দিয়ে পাপ মোচন ঘটাতে হবে l মনুষ্যযোনির ভয়ে ভীত অষ্টবসুরা গঙ্গা দেবীর কাছে গর্ভধারণ করবার এবং মর্তকাল সংক্ষিপ্ত করবার অনুরোধ জানালে গঙ্গা দেবী তাদের আশ্বস্ত করেন l দৈবানুক্রমে রাজা শান্তনু মৃগয়ায় গিয়ে গঙ্গা দেবীর অবর্ণনীয়, লালিত্য সমৃদ্ধ, মাধুর্য ভরা, লাবণ্যময়, যৌবন পূর্ণ মনুষ্য রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে যান এবং তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। গঙ্গা দেবীর মত অনুযায়ী স্বেচ্ছায় বাধাহীন ভাবে সর্বপ্রকার কাজ করতে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শান্তনু রাজা দেবী গঙ্গাকে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ করেন l রাজত্বে ফিরে আসেন এবং প্রেমপ্রণয় পূর্ণ সাংসারিক জীবনের সুখ উপলব্ধি করতে থাকেন, অষ্টবসুর প্রথম জন্ম কাহিনীতে গঙ্গা দেবী গর্ভধারণ করেন, চন্দ্র দেবের চন্দ্রিমার থেকেও অধিক সুন্দর সন্তান জন্ম দেন গঙ্গা দেবী l রাজমহলে চলছে আনন্দের বন্যা, যাক, যজ্ঞ, অনুষ্ঠান, সবার চোখের অন্তরালে গঙ্গা দেবী সে সন্তানকে নিয়ে ভাসিয়ে দেয় তার নিজের জলধারায় l সন্তানহারা পিতার হৃদয় ব্যথায় যন্ত্রণায় দুমড়ে-মুচড়ে ওঠে, মুখ ফুটে সরে না একটা কথাও মনে পড়ে যায় প্রতিজ্ঞার কথা l শুরু হয় আবার অপেক্ষার পালা, দ্বিতীয়পুত্র, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে বারবার, জন্মগ্রহণ করে দৈববসু অষ্টম পুত্র হয়ে, ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল রাজার, নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না পত্নী প্রেমপ্রণয়ের যৌবন পূর্ণ চাহিদা থেকেও পুত্র প্রেম তার কাছে অনেক বেশি শ্রেয় মনে হয়েছে l বাঁধ ভাঙ্গা জলের মতন শান্তনুর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো তার স্ত্রীর মাতৃরূপের কঠোরতা আর স্নেহশূন্যতার কথা, আপন সন্তানকে হৃদয়ের স্থান দেবার যে মমত্ব প্রেম ভালবাসা তার সবকিছুর শূন্যতার কথা l থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন গঙ্গা দেবী, নিজের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নিলেন রাজা অনন্যপায় দেবী গঙ্গা রাজা শান্তনুর সন্তান প্রেম দেখে মুগ্ধ, হলেন এবং তাকে জ্ঞাত করলেন পূর্বপর সমস্ত ঘটনার কথা, জানালেন তার বিবাহের কারণ এবং সন্তানদেরকে ওই রকম ভাবে তার স্রোতধারায় বিসর্জন দেবার কারণ এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন রাজার কাছে যে এ সন্তানকে তিনি ভালোভাবে মানুষ করবেন এবং ফিরিয়ে দেবেন রাজার কাছেই সে যুবক হলে কিন্তু ফিরে আসবেন না তিনি আর কখনোই রাজার কাছে l রাজা ফিরে এলেন অশ্রু সজল চোখে তার রিক্ত দেবালয়ে।
মহাভারত শুধুমাত্র পৌরাণিক মহাকাব্য বা কাহিনী বা ইতিহাসই নয় বরং রাজনীতি, ধর্মতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, বিজ্ঞান তথ্য ইত্যাদির এক সুদৃঢ় মেলবন্ধন I বৃহৎ ভারতীয় সংস্কৃতির এক দিব্য উর্জাI এতে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ, ঘটনাক্রম শুধু উদাহরণই নয় বরং সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বপ্রকার শিক্ষার এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্তI স্থান, কাল, পাত্র ভেদে সকল স্তরের, সকল ব্যক্তিবর্গের এই উৎকৃষ্ট গ্রন্থ পাঠ করা উচিত ও তার মধ্যে নিহিত তথ্য অনুধাবন করা উচিত I যা আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পৃথিবী কে অনেক সুন্দর ও অনেক সার্থক করে তুলবে, যা মানবজাতির কল্যাণের পক্ষে সুখকর হয়ে উঠবে I
Информация по комментариям в разработке