কর্ম-সন্যাস
কর্ম সন্যাস ও কর্মযোগ উভয়ই মোক্ষদায়ক। কিনতু দুটির মধ্যে কর্মসন্যাস থেকে কর্ম-যোগ শ্রেষ্ট। যে ব্যক্তি হিংসা ও আসক্তিহীন,সুখে-দুঃখে বিরুদ্ধ-ভাব পোষণ করে না - সেই ব্যক্তিই নিত্য সন্যাসী। অনায়াসেই সেই ব্যক্তি সংসার বাঁধন হতে মুক্তি লাভ করতে পারে। সন্যাস ও কর্মযোগ পৃথক নয়। এর একটিকে অনুসরণ করলেই উভয় ফল লাভ হয়। জ্ঞান-যোগী ও কর্ম-যোগী উভয়ের একই গতি। সন্যাস ও কর্মযোগকে যিনি এক দেখেন তিনিই প্রকৃত জ্ঞানী বলে জানবে। নিষ্কাম কর্মযোগের অনুষ্ঠান ব্যাতিত কর্মত্যাগ দুঃখের কারণ। কর্মযোগী কর্মযোগে সিদ্ধিলাভ করে পরম ব্রহ্ম লাভ করেন। যোগযুক্ত ব্যক্তি বিশুদ্ধ আত্মা। আত্মজয়ী, জিতেন্দ্রিয় ও সর্বজীবে সমজ্ঞানী ব্যক্তি কর্মানুষ্ঠান করলেও কর্মে লিপ্ত হন না। ৫/৭......
কর্মযোগীর তত্ত্বজ্ঞান হলে দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শন, ঘ্রান ভোজন,গমন, স্বপ্ন,স্বাস গ্রহণ,কথন , ত্যাগ, উন্মেষ এবং নিষেধাদি কার্য করেও তিনি ভাবেন, এসব ইন্দ্রিয় কর্ম, আমি কিছুই করি না।
পদ্মপাত্রে জল পড়লেও জল থাকে না। সব কর্মফল ব্রহ্মকে অর্পণ করলে, আসক্তিহীন ভাবে কর্ম করলে তিনি কোনো পাপে লিপ্ত হন না। যোগীগণ চিত্মসুদ্ধির জন্যই আসক্তিহীন হয়ে দেহ, মন , বুদ্ধি ইন্দ্রিয়সকলের সাহায্যে কর্ম করে থাকেন।
যিনি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কর্মের অনুষ্ঠান করেন তিনি কর্মফলে উদাসীন থাকার ফলে মোক্ষস্বরূপ শান্তি লাভ করেন। যিনি কামনার বশীভূত হয়ে নিজের জন্য ফল আশা করেন, তার সংসাররূপ বন্ধন দশা প্রাপ্ত হয়। ইন্দ্রিয় জয়ী ব্যক্তি মনের দ্বারা সকল কর্ম ত্যাগ করে নবদ্বার যুক্ত মনুষ্য দেহে পরম আনন্দে বাস করেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি নিজেও কিছু করেন না অন্য কাউকে দিয়ে কিছু করান না। প্রভু জীবের কর্তৃত্বও সৃষ্টি করেন না। কর্মফলও সৃষ্টি করেন না। স্বভাববশেই মানুষ বা জীব প্রকৃতির প্রভাবে কর্মে প্রবৃত্ত হয়।
আত্মা সর্বব্যাপী। তিনি কারো পাপ বা পুন্য গ্রহণ করেন না। জীব অজ্ঞানে আচ্ছন্ন হয় বলেই মোহো গ্রস্থ হয়। জ্ঞানের প্রকাশের ফলে যার অজ্ঞানতা ধংস হয়েছে তাদের জ্ঞান, সূর্যের ন্যায় পরম বস্তূকে প্রকাশ করে থাকে। যাদের বুদ্ধি ব্রহ্ম-নিষ্ঠ,আত্মভাব পরব্রহ্মে স্থির, সেই সব ব্রহ্মনিষ্ঠ ব্যক্তিদের, জ্ঞানের দ্বারা সমস্ত পাপ নষ্ট হয়েছে জানবে। এদের আর পুনর্বার জন্ম হয় না। বিদ্যা ও বিনয় যার মধ্যে আছে তিনিই পণ্ডিত। এরা সর্ব ভূতে অর্থাৎ মনুষ্য পশু ব্রাহ্মণ চণ্ডাল সব কিছুতেই সমদর্শী থাকেন। সমজ্ঞানী ব্যক্তি সংসারে বাস করেও সৃষ্টিজয়ী। কারণ তিনি সর্বত্রই ব্রহ্ম দেখেন। সব কিছুতেই সমভাবাপন্ন - কোনো কিছুতেই দোষ দেখেন না। এই কারনে সমদর্শীগন সর্বদা ব্রহ্মতেই স্থিত আছেন।ব্রহ্মকে যে যোগী জেনেছে, সেই যোগীই ব্রহ্মে স্থিত আছেন । তিনি প্রিয় বস্তূ পেলেও আনন্দ লাভ করেন না আবার অপ্রিয় বস্তূ পেলেও দুঃখ পান না। যিনি বাহ্য ইন্দ্রিয় বিষয়ে আসক্তিহীন, তিনি আত্ম সম্পর্কীয় সুখে সুখহীন। এঁরা যোগের সাহায্যে ব্ৰহ্মে চিত্তকে যুক্ত করে পরমানন্দ লাভ করেন। মোটকথা - বিষয় সম্পর্কিত সকল সুখ-ই আসলে দুঃখের কারন। এই কারণে বিবেকবান ব্যক্তি বিষয় সুখে রত থাকেন না। কাম-ক্রোধকে যে মানুষ ইহলোকে আমৃত্যু সহ্য করতে পারবেন তিনিই প্রকৃত সমাহিত এবং সুখী। যার আত্মাতেই সুখ, আত্মাতেই আনন্দ, আত্মাতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ -সেই যোগী পুরুষ ব্রহ্মে স্থিত হয়ে নির্বাণ লাভ করেন। যারা সন্দেহ রহিত,পাপশূন্য, সমাহিত চিত্ত ও সর্ব জীবের মঙ্গলে রত, সেই যোগীগণ ব্রহ্ম নির্বাণ লাভ করেন। কাম-ক্রোধ-শুন্য, সংযত চিত্ত,আত্মজ্ঞান সম্পন্ন যোগীগন জীবিত বা মৃত উভয় অবস্থাতেই ব্রহ্ম নির্বাণ লাভ করেন।
রূপ,রস, ইত্যাদি বাহ্যিক বিষয় থেকে মন সরিয়ে যিনি ভ্রূ-মধ্যে চক্ষুদ্বয়কে স্থাপন করে,প্রাণ,অপান,বায়ুকে উর্ধ্ব ও অধোগতি সমান করে, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধিকে সংযত এবং ইচ্ছা, ভয়, ও ক্রোধকে দূর করতে পারেন,তিনি জীবিত অবস্থাতেই মুক্তি লাভ করেন। ভগবানই যজ্ঞ ও তপস্যার ফল ভোগ করেন। তিনিই ত্রিলোকের স্বামী , সকলের সুহৃদ। এই জ্ঞান যার আছে, তিনিই পরম শান্তি ভোগ করেন। ৫/২৯..........
SASANKA SEKHAR PEACE FOUNDATION - ETERNAL PEACE SEEKER
Информация по комментариям в разработке