Скачать или смотреть উমাইর ইবনে সাদ রাঃ এর সহজ সরল জীবন

#কুরআন_হাদীসের_গল্প

♣উমাইর ইবনে সাদ♣



আমাদের আজকের পর্ব মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মোমেনিন হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) কে নিয়ে। এটি তার ঊত্তম শাসনব্যবস্থার একটি অসাধারন চিত্র।

আমিরুল মোমেনিন হজরত ওমর ( রাঃ) কিছুটা চিন্তিত ও বিরক্ত । খলিফার কাছে দামেস্কের পাশের হিমস থেকে আবার সেই একই অভিযোগ এসেছে। নতুন গভর্নর চাই। নিয়োগ তিনি দেন ঠিকই। কিন্তু বার বার একই অভিযোগ। যোগ্য লোক পাওয়া খুব সহজ নয়। খলিফা কিছুটা চিন্তাগ্রস্ত।

অবশেষে উমাইর ইবনে সাদ (রাঃ) নিয়োগ পেলেন হিমস নগরীর গভর্নর পদে। তিনি তখন শামদেশে নিয়োজিত জিহাদের সেনাপতি হিসেবে। মহানবী (সাঃ) এর স্নেহধন্য সাহাবী। খলিফার আদেশ পেয়ে উমাইর ছুটলেন নতুন কর্মস্থলে...।

এক বছর হয়ে গেছে এর মাঝে ।
হিমস থেকে কোন অভিযোগ আসেনি !
খলিফাকে গভর্নর না কোন চিঠি লিখলেন , না এলো কোনো রাজস্ব ...!
কিছুটা বিস্মিত খলিফা জরুরী পত্র দিয়ে ডেকে পাঠালেন গভর্নর উমাইরকে।

পত্র পাওয়ামাত্র তৈরী উমাইর নিত্য ব্যবহার্য ব্যাগে ওজুর পাত্র আর খাবারের প্লেট ঢুকিয়ে রওয়ানা দেন মদিনার দিকে।
দীর্ঘ পায়ে চলা পথ। উমাইরের চুল দাঁড়িও যেনো আরো দীর্ঘ হয়েছে মদিনায় পৌছাতে পৌঁছাতে!

অবিরাম পথ চলায় ক্লান্ত শ্রান্ত বিধ্বস্ত গভর্নরকে দেখে বিস্মিত খলিফা জানতে চান
: এই অবস্থা কেন তোমার?
: কই আমার তো কিছুই হয় নি। আমি বেশ আছি। বরং সাথে নিয়ে এসেছি আমার গোটা দুনিয়া।

: কি আছে তোমার দুনিয়ায়?
: আমার ব্যাগে আছে পানি পান ও ওজু করার জন্য পাত্র, গোসলের বালতি, খাবার প্লেট আর পানির মশক। এটাই আমার দুনিয়া।

: তুমি কি হেঁটে এসেছো?
: জ্বী, আমিরুল মোমেনিন।

: প্রশাসনের পক্ষ থেকে কি তোমাকে ঘোড়া দেয়া হয়নি?
: বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি আর আমিও চাই নি।

: বাইতুল মালের রাজস্ব পাঠাওনি কেন?
: যারা বিভিন্ন এলাকা থেকে কর নিয়ে আসতো, তাদের সাথে কথা বলে সেই অঞ্চলের অভাব অভিযোগ এবং অতি দরিদ্রদের তালিকা করে সেখানেই তাদের সাহায্য ও অঞ্চলসমূহের উন্নয়নের জন্য খরচ করেছি। রাজধানীতে পাঠানোর মতো অবশিষ্ট থাকলে আমি নিশ্চয়ই পাঠিয়ে দিতাম।

স্থানীয় পর্যায়ে রাজস্বের যথাযথ ব্যবহারের নতুন পদ্ধতি জেনে খলিফা ভীষণ খুশি হলেন এবং তাকে পুনরায় স্বপদে যোগ দিতে বললেন। কিন্ত উমাইর বিনয়ের সাথে পদ ফিরিয়ে দিলেন। তিনি তার পরিবারের সাথে মদিনায় বসবাস করতে চান। খলিফা আবেদন মঞ্জুর করলেন।


কিছুদিন চলে গেছে।
কিছুটা কৌতুহলের বশেই খলিফা ওমর পর উমাইর এর প্রকৃত অবস্থা যাচাই করার জন্য তার বিশ্বস্ত একজন গোয়েন্দা হারেসকে পাঠালেন। হারেসের হাতে ১০০ দিনারের এক‌টি থলে দিয়ে বললেন , যদি তার আর্থিক অবস্থা সত্যিই শোচনীয় হয়ে তবে নিজের পরিচয় জানিয়ে আমার সালাম দিয়ে এই থলেটি তাকে উপহার দিয়ে এসো।

হারেস একদিন পৌঁছে গেলেন উমাইর ইবনে সাদ (রাঃ) এর দরোজায়। পরিচয় গোপন করে মুসাফির হয়ে তার আতিথ্য প্রার্থনা করলেন। উমাইর হারেসকে সাদরে বরণ করে নিলেন। হারেস তার বাড়িতে থাকলেন তিনদিন। এই তিন দিন হারেস খেতে পেলেন শুধু এক‌টি করে পাতলা যবের রুটি!

চতুর্থ দিন উমাইরের একজন প্রতিবেশী হারেসকে নিজের বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণের অনুরোধ জানালেন। দয়ালু সেই প্রতিবেশী বললেন, আপনার উপস্থিতিতে উমাইর ভীষণ বিপদে পড়ে গেছেন। অতিথি আপ্যায়নের কারনে উনি সস্ত্রীক গত তিনদিন শুধু পানি খেয়ে আছেন, তা না'হলে তারা প্রতি রাতে এক‌টি পাতলা যবের রুটি ভাগ করে খেতেন...!

হারেস অবশেষে নিজের পরিচয় জানিয়ে উমাইরকে খলিফা ওমরের পক্ষ থেকে সালামসহ সেই থলে তার হাতে তুলে দিলেন। কিন্তু উমাইর বিনয়ের সাথে সেই উপহার ফিরিয়ে দিলেন।

সবকিছু শুনে ভেতর থেকে উনার স্ত্রী বললেন , উপহার ফিরিয়ে দেবেন না। বরং এই অঞ্চলে যারা দরিদ্র তাদের মধ্যে ভাগ করে দিন। উমাইর খলিফার দেয়া উপহার গ্রহন করলেন এবং শেষ কানাকড়ি পর্যন্ত দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিলেন।

মদিনা ফেরত হারেসের কাছে খলিফা শুনলেন তার অভিজ্ঞতা। তিনি আবার ডেকে পাঠালেন উমাইরকে। উমাইর কালবিলম্ব না করে ছুটলেন খলিফার দরবারে...!

খলিফা তাকে কাছে বসিয়ে জানতে চাইলেন ,
: আমার পাঠানো দিনারগুলো দিয়ে কি করেছো?
: মুদ্রাগুলো যখন আমাকে দিয়েই দিয়েছেন, তখন আর জেনে কি হবে?

: আমি অনুরোধ করছি, বলো কি করেছো?
: নিজের (সম্ভবত আখেরাত বোঝাতে চেয়েছেন) জন্য সঞ্চয় করে রেখেছি, যেদিন সন্তান ও সম্পদ কোন কাজে আসবে না...!

আমিরুল মোমেনিন ওমর কাঁদতে কাঁদতে বললেন , আমি ঘোষণা দিচ্ছি যে তুমি সেসকল মহান ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত, যারা নিজেরা অভাবী হওয়া সত্বেও অন্যদের নিজেদের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

তিনি উমাইরকে ৬০ সা ( এক সা হলো তিন কেজি তিনশত গ্রাম) খাবার আর এক জোড়া পোশাক উপহার দিলেন।
উমাইর বিনয়ের সাথে খাবার ফিরিয়ে দিলেন প্রয়োজন নেই জানিয়ে ! তবে এক‌টি পোশাক গ্রহণ করলেন এই বলে " আমার স্ত্রীর জন্য নিচ্ছি, কারণ একটি ছাড়া দ্বিতীয় পোশাক নেই তার ...! "


   / ruhuliaachannel  


www.facebook.com/Ruhuliaa