১) ভগবান #শ্রীকৃষ্ণ'র চরণে নূপুরের নাম কি
২) ভগবানের চরণে একটি নূপুর ছোট আরেকটি বড়, এর কারণ কি
৩) #বৈতরনী নদীর উৎপত্তি কিভাবে হলো
---------------------------------------------
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে দুটি নূপুর আছে, একটি নূপুরের নাম হচ্ছে কর্ণব মুনি, আরেকটির নাম হল বিশ্ববসু মুনি।
ত্রেতা যুগে কর্ণব মুনির গুরু ছিলেন বিশ্ববসু মুনি, তো একদিন কর্ণব মুনি তাঁর গুরুদেবের চরণ সেবা করছিলেন, চরণ সেবা করতে করতে তাঁর নখের আঁচড় লেগে গুরুদেবের চরণে একটু কেটে যায় এবং রক্ত বের হতে থাকে, এবং তাঁর গুরু ক্রোধান্বিত হন, এবং ক্রোধিত হয়ে বলতে লাগলেন– "তোমার নখের আঁচড় লেগে আমার পা কেটে গিয়েছে, তুমি দেখে কাজ করতে পারোনা? সেবা করার সময় তোমার মনযোগ কোথায় থাকে তুমি এই কি কাজ করলে? আমার এখন রক্ত বের হচ্ছে, তাই আমি তোমায় অভিশাপ দিলাম, পরের জন্মে তোমার ব্যাঙ হয়ে জন্ম হবে, তো বিশ্ববসু মুনি তাঁর শিষ্যকে অভিশাপ দিলেন যে যেহেতু তার মনোযোগ ছিল না, তাঁর পায়ের থেকে রক্ত বের করে ফেলেছে, গুরুদেবের চরণ থেকে তার নখের দ্বারা, সেই কারণেই সে পরের জন্মে ব্যাঙ দেহ লাভ করবে, আর কর্ণব মুনি তখন খুব ব্যথিত হলেন, তার গুরুদেবের নিকট করুণায় বিনম্রভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকলেন...
তখন তার গুরুদেব করুণামিত হয়ে বলতে লাগলেন, "যেহেতু আমি তোমাকে অভিশাপ দিয়েছি, সেটি আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো না, তবে একটি উপায় রয়েছে, সেটি হচ্ছে ত্রেতাযুগে যখন ভগবান শ্রীরামচন্দ্র নীলা করবেন, তখন ভগবানের কৃপায় তুমি উদ্ধার লাভ করবে। সেই আশীর্বাদ পেয়ে কর্ণব মুনি শান্ত হলেন, এবং ভগবান শ্রীরামচন্দ্র যখন ত্রেতাযুগে লীলা করেছিলেন, বনবাসের সময়, সীতা মাতাকে রাবণ যখন হরণ করেছিলে, ভগবান শ্রীরামচন্দ্র খুব ব্যথিত হলেন, তিনি কান্না করছিলেন তার বিরহে, তিনি তাঁর তীর ধনুর্বাণ মাটিতে রেখে যখন কান্না করছিলেন, তখন তাঁর নয়ন যুগল থেকে অশ্রু বের হচ্ছিল, এবং সেটি দেখে শ্রীলক্ষ্মণ করুণামৃত হয়ে তাঁর জ্যোষ্ট ভ্রাতাকে দেখলেন। ভ্রাতা লক্ষ্মণ দেখলেন শ্রীরাম কান্না করেছিলেন, তাঁর অশ্রু চোখে থেকে যখন গা বেয়ে মাটিতে পড়ছিলো, তখন সেই স্থান থেকে রক্ত বেরোচ্ছে, রক্তের গঙ্গা সৃষ্টি হচ্ছিল, লক্ষ্মণ এটি দেখে বুঝতে পারলেন না। লক্ষ্মণ এর কারণ তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শ্রীরামচন্দ্র থেকে জানতে চাইলেন, এবং শ্রীরামও দেখলেন সত্যি তো ওর এর কারণ কি
তখন দেখলেন যে যেখানে তাঁর তীর, ধনুক রয়েছে, তার নীচে সেই ব্যাঙ প্রায় মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছে, ধনুকের আঘাতে সেই ব্যাঙটির শরীর আহত হযল, কিন্তু ভগবান দেখলেন যে ব্যাঙটির গায়ে যে অশ্রু পড়ছিল, তার অশ্রু এবং ব্যাঙের রক্ত, দুটি মিলে একটি নদীর মত সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। তখন ভগবান বলতে লাগলেন– "তুমিতো সাধারণ কোন ব্যাঙ নও, তুমি কে "শ্রী রামচন্দ্র আরো বলতে লাগলেন– "কোন সর্প তোমাকে যদি ধরতে আসে, তখন তুমি চিৎকার করো, বাঁচার জন্য তুমি চিৎকার করো, কিন্তু এখন যখন আমার ধনুকের নিচে তুমি চাপা খেয়েছো, তুমি কেন চিৎকার করোনি
তখন সেই ব্যাঙটি বলতে লাগলো যে, যখন সাপ আমাকে ধরে, তখন আমি বাঁচার জন্য চিৎকার করি, আপনার কাছে নালিশ প্রার্থনা জানাই, যেন আপনি আমাকে রক্ষা করবেন, কিন্তু এখন আপনি নিজেই ধনুকের দ্বারা আমার প্রাণনাশ করলেন, এখন আমি কার কাছে নালিশ জানাব, সেই ভেবে আমি চুপ করে ছিলাম।
তখন ভগবান বললেন, "যেহেতু আমার অবচেতন মনে হলেও, আমার কারণে তোমার মৃত্যু হয়েছে, তাই এখন আমি তোমাকে বাঁচাতে পারবো না, তবে তুমি বলো তোমার শেষ ইচ্ছা কি"
তখন ব্যাঙটি তার পূর্ব জন্মের তার গুরুদেবের নিকট আঘাত পেয়ে যে অভিশাপ পেয়েছে সেই কথাটি শ্রীরামচন্দ্র কে বললেন।
তো ব্যাঙটি তার শেষ ইচ্ছা ভগবান শ্রীরামচন্দ্র থেকে চাইলেন ও বলতে লাগলেন– "আমি আমার নিজের জন্য কিছুই চাইছি না, তবে আমার গুরুদেব যেন সর্বদা আপনার শ্রীচরণে থাকতে পারেন, সেই ইচ্ছা আমি প্রার্থনা করি"।
তো ভগবান সেটি শুনে খুব সন্তুষ্ট হলেন এবং ব্যাঙকে বলতে লাগলেন– "আমি তোমাকে বরদান দিচ্ছি যে তুমিও আমার চরণে স্থান পাবে, কিন্তু এখন আমি কিছু করতে পারবো না, এই জন্মে নয় পরবর্তী দ্বাপর যুগে আমি শ্রীকৃষ্ণলীলায় আসব তখন তুমি এবং তোমার গুরুদেব আমার চরণে নূপুর হয়ে থাকবে। তো সেই কারণে আমরা দেখতে পাই ভগবানের চরণে একটি নূপুর বড় আরেকটি ছোট।
বাম চরণে বিশ্ববসু মুনি আর ডান চরণে কর্ণব মুনি থাকেন। শিষ্য গুরুদেব থেকে বড় বা সমান হতে পারে না, সেই কারণেই কর্ণব মুনি ছোট নূপুর রূপে এবং গুরুদের বড়ো নূপুর ডন চরণে।
ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের অশ্রু এবং ব্যাঙের রক্ত মিলে, বৈতরনী নদীর সৃষ্টি হয়েছিল, তো নরকের চারপাশে এই নদী অবস্থিত, রক্তবর্ণ মিশ্রিত রং এবং অনেক গরম।
ব্রাহ্মণরা বলে থাকে বৈতরণী নদী পার করতে হবে মৃত্যুর পর, বৈতরণী নদী পার করার জন্য একটি গাভী প্রয়োজন, গাভীকে পূজা করে সে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে পূজা দিতে হয়, বৈতরণী নদী পার করার পর পাপীকে নরক যেতে হয়, এই বৈতরণী নদী খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ভালোভাবে পার হতে পারে, সেইজন্য পূজটি দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ সেই গাভী পূজা যদি না দিয়ে থাকে তো শ্রাদ্ধের পূর্বে, তাদেরকে বৈতরণী নদী পার হতে অনেক কষ্ট পেতে হয় এবং নরকে গিয়ে কষ্ট পেতে হয়।]
Информация по комментариям в разработке