Скачать или смотреть আলবার্ট আইনস্টাইন এবং স্টিফেন হক এরমধ্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ে মতবাদে পার্থক্য। Description Follow .

আলবার্ট আইনস্টাইন এবং স্টিফেন হকিং-এর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ে মতবাদের পার্থক্য বিশ্লেষণ

ভূমিকাআলবার্ট আইনস্টাইন এবং স্টিফেন হকিং বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী বিজ্ঞানী ছিলেন, যাঁদের কাজ মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কাজ করলেও, তাঁদের তত্ত্বগুলো একে অপরের পরিপূরক এবং কখনো কখনো ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে। এই প্রতিবেদনে তাঁদের মূল তত্ত্ব ও অবদান, তাঁদের মতবাদের পার্থক্য ও মিল এবং তাঁদের গবেষণার পদ্ধতি ও প্রভাবের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হবে

মূল তত্ত্ব এবং অবদানআলবার্ট আইনস্টাইন: সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং মহাজাগতিক দৃষ্টিভঙ্গিআলবার্ট আইনস্টাইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (General Relativity), যা ১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয়। এই তত্ত্ব স্থান (space) এবং কাল (time)-কে একীভূত করে স্থান-কাল (spacetime) নামক একটি একক কাঠামোতে।

তাঁর তত্ত্ব অনুসারে, ভর এবং শক্তি স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দেয়, যা আমরা মাধ্যাকর্ষণ (gravity) হিসেবে অনুভব করি। এই তত্ত্ব মহাবিশ্বের বৃহৎ আকারের কাঠামো এবং গতিশীলতা ব্যাখ্যা করার জন্য একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে।

আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা কৃষ্ণগহ্বর (black holes) এর অস্তিত্বের গাণিতিক ভিত্তি প্রদান করে, যদিও তিনি নিজে কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে স্বতন্ত্র কোনো তত্ত্ব দেননি । তাঁর সমীকরণগুলো দেখায় যে, যথেষ্ট পরিমাণে ভর একটি ছোট অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হলে তা স্থান-কালকে এমনভাবে বাঁকিয়ে দিতে পারে যে আলোও সেখান থেকে পালাতে পারে না।

প্রাথমিকভাবে, আইনস্টাইন মহাবিশ্বকে স্থির (static) এবং অপরিবর্তনীয় (unchanging) মনে করতেন এবং এই ধারণা বজায় রাখার জন্য তাঁর সমীকরণগুলোতে একটি মহাজাগতিক ধ্রুবক (Cosmological Constant) যুক্ত করেছিলেন।

যদিও পরে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ আবিষ্কারের পর তিনি এটিকে তাঁর জীবনের "সবচেয়ে বড় ভুল" বলে আখ্যায়িত করেন ।

🔥🔥♥️স্টিফেন হকিং:---
কৃষ্ণগহ্বর এবং কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণস্টিফেন হকিং একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এবং বিশ্বতত্ত্ববিদ হিসেবে তাঁর জীবনব্যাপী গবেষণায় কৃষ্ণগহ্বর এবং মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন ।

তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত তত্ত্বগুলির মধ্যে অন্যতম হলো হকিং বিকিরণ (Hawking Radiation),

যেখানে তিনি দেখান যে কৃষ্ণগহ্বর সম্পূর্ণ কালো নয়, বরং এটি কণা নির্গত করে এবং ধীরে ধীরে শক্তি হারায় ও বাষ্পীভূত হয় । এই তত্ত্বটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা (quantum mechanics) এবং সাধারণ আপেক্ষিকতাকে একত্রিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।

হকিং মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং তার নিয়তি (fate) নিয়েও কাজ করেছেন।

তিনি এবং রজার পেনরোজ দেখান যে, সাধারণ আপেক্ষিকতার কাঠামোতে মহাবিশ্বের একটি শুরু (বিগ ব্যাং) এবং কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রে একটি সিঙ্গুলারিটি (singularity) থাকা অপরিহার্য । তিনি "নো-বাউন্ডারি প্রপোজাল" এর মতো তত্ত্ব দিয়ে মহাবিশ্বের সূচনার একটি কোয়ান্টাম ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন,

যেখানে সময়ের শুরু একটি সিঙ্গুলারিটি হিসেবে নয়, বরং একটি মসৃণ বাঁকা পৃষ্ঠ হিসেবে উপস্থাপিত হয়।
তাঁর কাজ কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের বিকাশে একটি ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা মহাবিশ্বের চরম পরিস্থিতিতে (যেমন বিগ ব্যাং বা কৃষ্ণগহ্বরের অভ্যন্তর) মাধ্যাকর্ষণকে কোয়ান্টাম স্তরে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে।

♥️♥️👍পার্থক্য এবং মিল আইনস্টাইন পার্থক্য .
পার্থক্যসমূহ তত্ত্বের ভিত্তি:♥️ আইনস্টাইনের কাজ সম্পূর্ণভাবে চিরায়ত পদার্থবিদ্যা (classical physics) এবং সাধারণ আপেক্ষিকতার উপর ভিত্তি করে গঠিত, যা বৃহৎ পরিসরে মহাবিশ্বের আচরণ ব্যাখ্যা করে।

এর বিপরীতে, হকিং তাঁর গবেষণায় কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এবং সাধারণ আপেক্ষিকতাকে একীভূত করার চেষ্টা করেছেন, বিশেষ করে কৃষ্ণগহ্বর এবং মহাবিশ্বের সূচনার মতো চরম পরিস্থিতিতে ।

হকিং-ই প্রথম দেখান যে কৃষ্ণগহ্বর হকিং বিকিরণের মাধ্যমে কণা নির্গত করে এবং ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হয়, যা কৃষ্ণগহ্বরকে সম্পূর্ণ "কালো" থাকার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে ।

মহাবিশ্বের সূচনা:♥️♥️ আইনস্টাইন প্রাথমিকভাবে একটি স্থির মহাবিশ্বে বিশ্বাসী ছিলেন এবং মহাজাগতিক ধ্রুবক যুক্ত করেছিলেন । যদিও পরে তিনি সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ধারণা মেনে নেন, কিন্তু মহাবিশ্বের সূচনার কোয়ান্টাম দিক নিয়ে তাঁর সরাসরি কোনো তত্ত্ব ছিল না।

হকিং, তাঁর "নো-বাউন্ডারি প্রপোজাল" এর মতো তত্ত্বের মাধ্যমে, মহাবিশ্বের সূচনার একটি কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যেখানে সময়ের একটি স্পষ্ট শুরু থাকতে পারে।

♥️ মহাবিশ্বের গতিশীলতা: আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ধারণাকে সমর্থন করে (যদিও তিনি প্রথমে এর বিরোধিতা করেছিলেন)। হকিংও মহাবিশ্বের গতিশীলতা এবং এর বিবর্তন নিয়ে কাজ করেছেন, বিশেষ করে বিগ ব্যাং তত্ত্বের প্রেক্ষাপটে ।

♥️ মহাকর্ষীয় তরঙ্গ: উভয় বিজ্ঞানীর তত্ত্বই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্বের পূর্বাভাস দিয়েছিল, যা সম্প্রতি কৃষ্ণগহ্বর একীভূতকরণের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। এই তরঙ্গগুলি আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা এবং হকিং-এর ভবিষ্যদ্বাণীগুলির সত্যতা নিশ্চিত করেছে

উপসংহারআলবার্ট আইনস্টাইন এবং স্টিফেন হকিং উভয়েই তাঁদের সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ছিলেন, যাঁরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে চিরতরে পরিবর্তন করেছেন। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা মহাবিশ্বের বৃহৎ কাঠামোর একটি চিরায়ত বর্ণনা প্রদান করেছে, যেখানে হকিং তাঁর কাজকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে একত্রিত করে মহাবিশ্বের চরম পরিস্থিতি, বিশেষ করে কৃষ্ণগহ্বর এবং এর সূচনার রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাঁদের পদ্ধতির ভিন্নতা থাকলেও, তাঁদের কাজগুলি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে এবং আমাদের মহাবিশ্ব বোঝার যাত্রায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তাঁদের সম্মিলিত উত্তরাধিকার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে ।