Скачать или смотреть রাখী পূর্ণিমা উৎসব | rakhi purnima utsab | baudhik ||

রাখী পূর্ণিমা উৎসব
ভাষণের বিষয়
প্রাচীন কাল থেকে হিন্দু সমাজে রক্ষাবন্ধন বা রাখী বন্ধন প্রথা বা উৎসব অক্ষুণ্ণ ধারায় চলে আসছে । আমাদের পূর্বপুরুষেরা সমাজে স্নেহের বন্ধনে পরস্পরকে আবদ্ধ রাখার জন্য রক্ষাবন্ধন প্রচলন করেন । সমাজ - সুরক্ষার জন্য ভগবান বিষ্ণু বামন অবতার রূপে--
যেন বদ্ধো বলীরাজা দানবেন্দ্র মহাবলঃ।
তেন ত্বাং অনুবধ্নামি রক্ষে মা চল মা চল ।।
—মহাবলশালী দানবরাজ বলিকে এই স্নেহ - সুত্রেই আবদ্ধ করেছিলেন । রাখী মানে রক্ষার বন্ধন । প্রিয়জনের মঙ্গল কামনায় , তার বিপদ - আপদ থেকে রক্ষার কামনায় যে মঙ্গল সূত্র বাঁধা হয় সেটি রাখীরই নামান্তর মাত্র । এই রক্ষাবন্ধনের মাধ্যমে সমাজের শক্তিমান দুর্বলকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে । নারী তার সম্মান রক্ষার জন্য যে কোন পুরুষের , তিনি সম্পূর্ণ অপরিচিত হলেও তার হাতে রাখী বেঁধে তাঁকে নিজের ধর্ম - ভাই করে নেন এবং সেই পুরুষ প্রাণকে তুচ্ছ করে হলেও , নিজের সেই ধর্ম বোনকে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করেন । এই পরিপ্রেক্ষিতেই রাজপুত রমণীরা রাখী পরিয়ে সেই “ রাখো ভাই লাজ ” বলে যে আহ্বান করেছিলেন তা আজও ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছে । রাখীবন্ধনের যে একটি উদ্দীপনাময় ঐক্য সূত্র আছে সেটি অনুধাবন করেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ । ১৯০৫ সনে বঙ্গ - ভঙ্গ রদ করার আন্দোলনকে তীব্রতর করে তোলার জন্য ১৬ ই অক্টোবরে কলকাতার প্রকাশ্য রাজপথে - অপূর্ব শোভাযাত্রার মাধ্যমে তিনি রাখীবন্ধন উৎসব উদযাপন করেন এবং এর ফলে সেই আন্দোলনে একটি অখণ্ড ভাবাত্মক পরিবেশ রচিত হয়েছিল । রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ - রাখীবন্ধন উৎসবটিকে একটি জাতীয় রূপ দিয়েছে । সমাজের সুরক্ষা নির্ভর করে সমাজের পারস্পরিক ঐক্য ও সংগঠনের উপর । একতা ও সংগঠন - সম্ভবপর হয় সমাজে মানুষের জন্য অকৃত্রিম ভাল । সঙ্ঘকার্যের আধার হল সমাজের প্রতি অকুণ্ঠ - অকৃত্রিম স্নেহ - ভালবাসা ভক্তির ভাব । পবিত্র ভারতবর্ষে অতি প্রাচীনকাল থেকে সমাজকে এক বিরাট পুরুষরূপে জনমানসের সামনে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে । এ সমাজ “ সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্ৰপাদ ” বলে বর্ণিত এবং পূজিত হয়ে আসছে এখানে । সমাজ হল ঈশ্বরের ব্যক্ত স্বরূপ এই ধ্যান জ্ঞানেই সমাজসেবায় এগিয়ে যাওয়া উচিত । সম্পূর্ণ সমাজ একটি শরীরের মত , আর বিভিন্ন জনগোষ্ঠী হল এর অবয়ব । অঙ্গ না থাকলে অঙ্গী নেই - অঙ্গী না থাকলে অঙ্গ শব্দই মূল্যহীন । ঠিক তেমনই বিভিন্ন জনগোষ্ঠির সমন্বয়েই সৃষ্টি হয় সমাজ শরীর । এই জনগোষ্ঠীগুলি যখন এই পারস্পরিক রক্ত - সম্পর্ক বা সাংস্কৃতিক সম্বন্ধকে ভুলে গিয়ে সীমিত গোষ্ঠী স্বার্থের চক্রে পড়ে তখন সমাজ ও গোষ্ঠী দুটিরই ক্ষতি হয় । তাই প্রত্যেক গোষ্ঠীর তার নিজের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করেই - বৃহৎ সমাজের মাঝে নিজেকে বিলীন করলে দুটিরই পুষ্টি সাধন হবে । সেই কারণেই সঙ্ঘ সমাজের মাঝে অকৃত্রিম প্রেম , একতা ও সেবা ভাব সৃষ্টি করার মাধ্যম হিসাবে এই উৎসব পালন করে । সমাজের কোন অঙ্গই উপেক্ষণীয় বা অস্পৃশ্য নয় । জাতি , ভাষা , সম্প্রদায় , পন্থ প্রভৃতি সমাজের কোন অঙ্গই অন্য অঙ্গ থেকে আলাদা নয় । ভারতীয় সংস্কৃতি ও পরম্পরাই বিভিন্ন প্রান্ত ও অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের ভিতরে দিয়ে - বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে মাত্র । তাই একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্যটির কোন সম্পর্ক নেই একথা ভাবাই ভুল । ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি প্রদেশকে সংস্কৃতি ও পরম্পরার দিক থেকে আলাদা আলাদা ভেবে আমেরিকা , রাশিয়ার মত এখানেও যুক্তরাষ্ট্রীয় ( ফেডারেল ) শাসন ব্যবস্থা প্রচলন হল মারাত্মক ভুলে ভরা । এরই ভয়াবহ পরিণতিতে দেশে আজ আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ ( টেরিটোরিয়াল ন্যাশনালিজম ) মাথা চাগা দিয়ে উঠেছে । তাই দেখি প্রত্যেক জনগোষ্ঠী ভাষা সংস্কৃতি পরম্পরায় অন্য জনগোষ্ঠী থেকে নিজেদেরকে সম্পূর্ণ পৃথক ভেবে এবং তাদের হাত থেকে নিজের জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার নামে পারস্পরিক সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছে । এখানেই শেষ নয় , এই বিভেদ ভাবনার পরিণাম স্বরূপে স্বাধীন সার্বভৌমত্বের দাবীও আমরা শুনতে পাচ্ছি । স্বাধীন গোর্খাল্যাণ্ড , ঝাড়খণ্ড , উদয়াচল , অসম ইত্যাদি সব আন্দোলনই বিচ্ছিন্নতাবাদের শিকার । রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এই বিশাল হিন্দু সমাজকে এক শরীর ও এক আত্মা বলে ভাবে । এই একাত্ম ভাব নতুন করে সৃষ্টির নয় এটি আছেই ; দরকার তার পুনর্জাগরণের । চীন - পাকিস্থানের ভারত আক্রমণের বিপদ মুহূর্তে বা একাত্মতার আবাহন স্বরূপ একাত্মতা রথ যাত্রার সময়ে তার অনুভুতি আমাদের ঘটেছে । এই একাত্মতার ভাব যখন আমরা বিস্মৃতি হয়েছি - তখন বিদেশীরা ভারত আক্রমণ করেছে এবং আমাদের মাতৃভূমি , পুণ্যভূমি ভারত বারে বারে আয়তনে সঙ্কুচিত হয়েছে । সেই একাত্মতার ভাব জাগিয়ে তোলা ও পরস্পরের মাঝে স্নেহের সম্পর্ক স্থাপন করার জন্যই সঙ্ঘ এই রাখী বন্ধন উৎসব পালন করে থাকে ।.. রাখী , এক গুচ্ছ সূতার সমষ্টি নয় - এ হল স্নেহ ও ভালবাসার বাঁধন । এতে সংমিশ্রিত হয়ে আছে শ্রদ্ধা ও বীরত্বের ভাব । সম্পূর্ণ সমাজ একটি পরিবার বা একটি শরীরের মত সুসংবদ্ধ হয়ে থাকলেই তার প্রকৃত শক্তি প্রকাশ পায় । তাই সমস্ত ভেদাভেদের ঊর্দ্ধে উঠে , স্নেহসূত্রে পরস্পরে আবদ্ধ হয়ে হিন্দু জাতির কল্যাণের জন্য আত্মোৎসর্গের মানসিকতাযুক্ত এক সদা জাগ্রত জাতীয় জীবনের আমরা পুনর্জাগরণ ঘটাব -এই সঙ্কল্প নিয়ে অগ্রসর হলেই আমাদের এই রক্ষাবন্ধন উৎসব সার্থক হবে ।
#GeetTripurasundari#BaudhikTripurasundari