রাসুলুল্লাহ সা. এক নারীকে বলেন,
فانظري أين أنت منه، فإنما هو جنتك ونارك
দেখো, স্বামীর কাছে তোমার অবস্থান কোথায়। নিশ্চয়ই স্বামীই তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম। (মুসনাদে আহমাদ)
অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. তিন শ্রেণির হতভাগার কথা উল্লেখ করেন, যাদের সালাত তাদের শ্রবণেন্দ্রিয় অতিক্রম করে না; কবুল হওয়া তো দূরের কথা।
ثلاثة لا تجاوز صلاتهم آذانهم، العبد الآبق حتى يرجع، وامرأة باتت وزوجها عليها ساخط، وإمام قوم وهم له كارهون
এই তিন শ্রেণির হতভাগার মধ্যে এক শ্রেণি হলো এমন নারী, যে এমতাবস্থায় রাতযাপন করেছে যে, তার স্বামী তার ওপর অসন্তুষ্ট। (তিরমিজি)
আরেক হাদিসে এ-ও এসেছে,
إذا الرجل دعا زوجته لحاجته فلتأته، وإن كانت على التنور
স্বামী তার কোনো প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকলে সে যেন তার কাছে চলে আসে; যদিও সে চুলায় থাকে। (তিরমিজি)
মুআজ রা.-এর হাদিসে এ কথা এসেছে,
لا تؤذي امرأة زوجها في الدنيا، إلا قالت زوجته من الحور العين: لا تؤذيه قاتلك الله، فإنما هو عندك دخيل، يوشك أن يفارقك إلينا.
কোনো নারী দুনিয়াতে তার স্বামীকে কষ্ট দিলে সেই স্বামীর জান্নাতি হুরে ঈন স্ত্রী তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, তুই তাঁকে কষ্ট দিস না। আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুন। তিনি তো তোর কাছে সাময়িক আগমনকারী। শীঘ্রই তিনি তোকে ছেড়ে আমাদের উদ্দেশ্য চলে আসবেন। (মুসনাদু আহমাদ, মুসতাদরাকে হাকিম, ইবনু মাজাহ, তাবারানি)
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
أيما امرأة ماتت وزوجها راض عنها دخلت الجنة
যেকোনো নারী যদি এমতাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, তার স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি)
বিয়ের পর একজন নারীর ওপর তার স্বামীর হক সবচে বেশি। এমনকি মায়ের হকের ওপরও স্বামীর হক তখন অগ্রগণ্য হয়ে যায়। বাবা-মা’র সিদ্ধান্ত আর স্বামীর সিদ্ধান্ত বিরোধপূর্ণ হলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেওয়া অপরিহার্য হয়ে যায়। স্বামীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় একজন নারীর জাহান্নাম এবং জান্নাত। স্বামীর গুরুত্ব এত বলেই তো রাসুল বলেছেন, ‘আমি কোনো মানুষকে যদি অন্য কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে নারীদের আদেশ দিতাম, তারা যেন নিজ স্বামীদের সিজদা করে। কারণ, যেহেতু আল্লাহ তাদের ওপর স্বামীদের জন্য অসংখ্য হক রেখেছেন।’ অর্থাৎ আল্লাহ এবং তার রাসুলের পর সকল বৈধ বিষয়ে স্বামীর সিদ্ধান্তের চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কোনো নারীর জন্য হতে পারে না। সিজদা-সংক্রান্ত এমন কথা কিন্তু কোনো হাদিসে মায়ের ব্যাপারেও বলা হয়নি।
তিরমিজি এবং আবু দাউদের উপরিউক্ত বর্ণনাটি মুসনাদু আহমাদ গ্রন্থেও এসেছে। সেখানে শেষে এই অংশটি বর্ধিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এ-ও বলেছেন,
والذي نفسي بيده لو كان من قدمه إلى مفرق رأسه قرحه تجري بالقيح والصديد ثم استقبله فلحسته ما أدت حقه
ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি স্বামীর পা থেকে মাথার সিঁথি পর্যন্ত জখম থাকে, যেখান থেকে রক্ত-পূঁজ ঝড়তে থাকে, তারপর সে তার সামনে আসে, অনন্তর স্ত্রী তার এসব চেটে ফেলে, তবুও স্ত্রী তার হক আদায় করতে পারবে না।
সাহাবি জায়দ বিন সাবিত রা. সুরা ইউসুফের একটি আয়াতের আলোকে বলেন, স্বামী আল্লাহর কিতাবের বিধান অনুযায়ী নেতা।
الزوج سيِّدٌ في كتاب الله ، وقرأ قوله تعالى : ( وألفيا سيدها لدى الباب )
উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন,
النكاح رق ، فلينظر أحدكم عند من يرق كريمته
বিয়ে হলো দাসত্ব। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন ভালো করে দেখে নেয়, কার কাছে নিজেদের সম্মানিত মেয়েকে দাসী বানাচ্ছে।
এখানে স্পষ্ট, উমর রা. মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আগে ভেবেচিন্তে নিতে বলেছেন। কারণ, যেইমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে তখন থেকে তার সবকিছু হয়ে যাবে তার স্বামী। স্বামীই তার নেতা। স্বামীই তার দুনিয়া, স্বামীই তার আখিরাত। এমনকি বাবা-মা’র ধাপও চলে যাবে দ্বিতীয় স্তরে। স্বামীর হক ঠিক রাখার পর তাকে অন্যান্য হক সামাল দিতে হবে। এমনকি নারীর জান্নাতকেও স্বামীর আনুগত্যের সঙ্গে শর্তযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বিয়ে না করলে তা আলাদা কথা। কিন্তু বিয়ে করে ফেললে সকল বৈধ বিষয়ে স্বামীর সিদ্ধান্তের নিজেকে সঁপে দিতে হবে। এমনকি বাবা-মা’কে পর্যন্ত স্বামীর ওপর প্রাধান্য দিতে গেলে তা হবে জুলুম এবং হতভাগ্যের কারণ। পাশাপাশি এ নারীর নসিবে জুটবে নিষ্পাপ জান্নাতি হুরে ঈনদের বদদুয়া।
ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন,
فالمرأة عند زوجها تشبه الرقيق ، والأسير ، فليس لها أن تخرج من منزله إلا بإذنه ، سواء أمرها أبوها ، أو أمها ، أو غير أبويها ، باتفاق الأئمة .
নারী তার স্বামীর কাছ দাসী এবং বন্দীসদৃশ। সুতরাং স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার ঘর থেকে বের হওয়া বৈধ নয়; এমনকি যদি তার বাবা কিংবা মা কিংবা এ ছাড়া অন্য কেউ তাকে বের হতে আদেশ করে, তবুও। এটা ইমামগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত।
এমনকি কোনো স্বামী যদি সঠিকভাবে স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয় এবং আল্লাহর দেওয়া সীমারেখা ঠিক রাখে, আর কোনো কারণে সে স্ত্রীকে নিয়ে অন্য কোনো এলাকায় চলে যেতে চায়; কিন্তু স্ত্রীর বাবা-মা এতে বাধ সাধে, তাহলে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বাবা-মা জালিম। স্ত্রীর জন্য এ ব্যাপারে বাবা-মা’র নির্দেশ মান্য করা বৈধ নয়। বরং তার ওপর তা-ই অপরিহার্য, যা তার স্বামীর সিদ্ধান্ত। হ্যাঁ, স্বামী যদি স্বেচ্ছায় তাকে এখানে থাকার অনুমতি দেয়, তাহলে ভিন্ন কথা।
আজকাল তো অনেক বাবা-মা এসব ব্যাপারে বেশ বাড়াবাড়ি করে। বিয়ের পরও মেয়ের ওপর এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করে রাখে, যেখানে জামাইয়ের মতামত হয়ে যায় গৌণ। এসব বাবা-মা বাহ্যত দীনদার হলেও আদতে তারা জালিম। আর জুলুম কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকারে রূপ নেবে।
সাধারণত এ ধরনের বাবা-মা’র সঙ্গে জামাইদের অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকে। সর্বাবস্থায় তা প্রকাশিত হয় না। কোথাও বা প্রকাশিত হলে সংসার ভাঙন পর্যন্ত গড়ায়। এ ক্ষেত্রে কখনো-বা স্ত্রীরা বাবা-মা’র পক্ষ নিয়ে স্বামীর কাছে তালাক পর্যন্ত চেয়ে বসে; যেহেতু স্বামী বেচারা তার বাবা-মা’র নির্দেশমতো বা মনমতো চলে না। এমন নারীর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে,
أيما امرأة سألت زوجها الطلاق غير ما بأس فحرا
Информация по комментариям в разработке