Скачать или смотреть জাহান্নামের বিস্তারিত বর্ণনা। মোহাম্মদ শরীফ হোসাইন মিয়াজী। সহকারী অধ্যাপক ‍রূপসা আহমদিয়া আলিম মাঃ।

ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী, জাহান্নাম একটি শাস্তির স্থান যা আল্লাহ তা'আলার নাফরমান বা পাপী মানুষদের জন্য নির্ধারিত। কুরআন এবং হাদিসে জাহান্নামের বর্ণনা বিভিন্ন আকারে এসেছে, যেখানে এর কঠিন ও ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

১. জাহান্নামের নাম ও স্তরসমূহ
কুরআনে বিভিন্ন নাম ও স্তরের জাহান্নামের উল্লেখ রয়েছে। জাহান্নামের কয়েকটি নাম হলো:

জাহান্নাম: সাধারণভাবে জাহান্নাম শব্দটি নরকের শাস্তির স্থান বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
লাযা: এর অর্থ হলো 'জ্বলন্ত আগুন'।
হাবিয়া: অর্থাৎ 'ভয়ানক গর্ত'।
হুতামা: এর মানে 'যে ভেঙে টুকরো টুকরো করে'।
সাকার: অতি উত্তপ্ত আগুন।
২. আগুনের ভয়াবহতা
জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের তুলনায় অনেক গুণ বেশি ভয়াবহ এবং উত্তপ্ত। কুরআনে বলা হয়েছে, "জাহান্নামের আগুনের তাপ অত্যন্ত তীব্র" (সূরা তাওবা, ৯:৮১)।

৩. খাওয়া-দাওয়া
জাহান্নামে বসবাসকারীদের খাবার ও পানীয় অত্যন্ত কষ্টদায়ক হবে। তাদের জন্য নির্ধারিত খাবারগুলো হলো:

যাক্কুম গাছ: এটি হলো একটি অভিশপ্ত গাছ, যা ভীষণ তিক্ত এবং তীব্র কষ্টদায়ক।
ধোঁয়ার গরম পানি: তাদের পানীয় হিসেবে গরম পানির সাথে মিশ্রিত দুর্গন্ধযুক্ত পানি দেওয়া হবে।
পুঁজ ও রক্তের পানীয়: পাপীদের জন্য এমন পানীয় থাকবে, যা তাদের আরও কষ্ট দিবে।
৪. শাস্তির ধরন
জাহান্নামে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বর্ণনা রয়েছে। কিছু প্রধান শাস্তি হলো:

চামড়া পুড়ানো: আল্লাহ পাপীদের চামড়া পুড়িয়ে দেবেন, এরপর তা আবার ফিরিয়ে দেবেন, যেন শাস্তি অব্যাহত থাকে (সূরা নিসা, ৪:৫৬)।
লৌহের হাতুড়ি: তাদের উপর লৌহের হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হবে।
জাহান্নামের পোশাক: তাদের পোশাক হবে আগুনের তৈরি, যা তাদের শরীর পুড়িয়ে দিবে।
৫. শাস্তির স্থায়ীত্ব
জাহান্নামে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে (যারা শিরক বা আল্লাহকে অবিশ্বাস করেছে) অথবা কিছু সময়ের জন্য থাকবে যদি তাদের ঈমান থাকে কিন্তু পাপের কারণে শাস্তি পায়। ঈমানদারদের জন্য শাস্তির পর ক্ষমার সুযোগ থাকতে পারে, তবে চিরকালীন অবস্থান শিরককারীদের জন্য নির্ধারিত।

৬. পুনরাবৃত্তি ও আশাহীনতা
জাহান্নামের অধিবাসীরা বারবার শাস্তি পাবে, এবং তারা এই শাস্তি থেকে মুক্তির জন্য আহাজারি করবে, কিন্তু তাদের প্রতি কোনো দয়া দেখানো হবে না।

৭. জাহান্নামের দরজা
কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জাহান্নামে একাধিক দরজা থাকবে (সুরা হিজর, ১৫:৪৪), এবং প্রতিটি দরজা হবে পাপী ও নাফরমানদের জন্য নির্ধারিত।

৮. মুক্তির কোনো পথ নেই
জাহান্নামের অধিবাসীদের জন্য মুক্তি বা রেহাই পেতে কোনো পথ থাকবে না। আল্লাহ তা'আলা কুরআনে বলেছেন, জাহান্নামে প্রবেশকারীরা তা থেকে মুক্তি পাবে না এবং তাদের শাস্তি কমানো হবে না।

ইসলামে জাহান্নামের এই কঠিন ও ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনাগুলি মানুষের কাছে সতর্কবার্তা হিসেবে উপস্থাপিত, যাতে মানুষ পাপ থেকে বিরত থাকে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করে।