Скачать или смотреть ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ: বাংলাদেশের অন্ধকার অধ্যায় II দ্য রিপোর্ট লাইভ II The Report Live

২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ: বাংলাদেশের অন্ধকার অধ্যায়
বিডিআর বিদ্রোহের সূচনা হয় অস্ত্র লুটের মাধ্যমে। বাংলাদেশের ইতিহাসের পৃষ্ঠপুরোষে একটি অন্ধকারের অধ্যায়, ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ। এই দুঃখজনক ঘটনা ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালের সকালে ঘটে, যখন বাংলাদেশের জনগণ একটি ভয়ানক মুহূর্তে সাক্ষী হয়। ঘটনাটি ঢাকার তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) হেডকোয়ার্টারে সংঘটিত হয়েছিলো।
সকাল ৯টা বার্ষিক বিডিআর প্যারেড পর মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ তাঁর বক্তব্য শুরু করেছিলেন। তবে, তাঁর বাক্যগুলি পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হতে পারার আগে, অসন্তুষ্ট বিডিআর সদস্যদের একটি গ্রুপ দরবারের ভেতর একটি সংঘর্ষ আরম্ভ করে দেয়, যা প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৫৭ সেনাবাহিনী ও ১৭ নাগরিকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

পিলখানার ভিতরে অনেকগুলি গণকবর পাওয়া যায় যেখানে, বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও তাঁর স্ত্রীর কবরসহ সেনা কর্মকর্তাবৃন্দ।

পরবর্তীতে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এবং আরো ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছিলো। তবে, অভিযোগের অভাবে ২৭৭ জনকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছিল।
ষড়যন্ত্রকারীরা বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিয়েছিলো এই বিশেষ অনুষ্ঠানের বৈঠক আয়োজনকে সামনে রেখেই । জাতিসংঘ মিশনে যাওয়ার সুযোগ না থাকা, রেশন-বৈষম্য, ডাল-ভাত কর্মসূচির নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগসহ নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল।

চলুন জেনে নেওয়া যাক ঠিক কী নৃশংসতা ঘটেছিল ওইদিনটিতে:

বার্ষিক দরবারকে মুখ্য করে ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় পিলখানায় দরবার হলে সারাদেশ থেকে আসা বিডিআর জওয়ান, জেসিও, এনসিওসহ ২ হাজার ৫৬০ জন সদস্যে উপস্থিত ছিলো। সাড়ে ৯টা নাগাদ বক্তব্য চলাকালীন সময়ে সিপাহী মাঈন মঞ্চের উপরে উঠে ডিজির দিকে অস্ত্র তাক করেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএ বারি তারপর তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে জুতার ফিতা দিয়ে বেঁধে নিরস্ত্র করেন। সঙ্গে সঙ্গে বিপথগামী বিডিআর জওয়ানদের একটি অংশ দরবার হলে ঢুকে মহাপরিচালকের সামনে তাদের নানা দাবি নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দেন। মহাপরিচালক শাকিল সবাইকে বারবার শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান এবং প্রত্যেক কর্মকর্তাকে নিজ নিজ ইউনিট সামাল দিতে বলেন। এরপর পরই সিপাহী সেলিম রেজার নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র দল দরবার হলে ঢুকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।সেই সময় প্রায় তিন হাজার মতো সৈনিক এবং জেসিও যে যেভাবে সম্ভব জানালা বা দরজা দিয়ে লাফিয়ে বের হয়ে যান। অন্যদিকে সিপাহীরা বাইরে গিয়ে নিজেদের সংগঠিত করে।

লাল সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বাঁধা বিডিআরের একদল সৈনিক দরবার হল ঘিরে কিছুক্ষণ পর গুলি করেন। ’ মুখে কাপড় বাঁধা একজন সৈনিক অস্ত্রহাতে পর্দা সরিয়ে মঞ্চে ঢুকে চিৎকার করে বলে, ‘ভেতরে কেউ আছেন? সবাই বের হন। ’ একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের দিকে তাকিয়ে দুটি গুলি করেন তিনি। এরপর ডিজিসহ একে একে অন্য কর্মকর্তারা পর্দা সরিয়ে বাইরে আসেন। মঞ্চের নিচে নেমেই কর্মকর্তারা ডিজি শাকিলকে মধ্যে রেখে গোল হয়ে দাঁড়ান। একজন সৈনিক চিৎকার করে অশালীন ভাষায় তাদের সিঙ্গেল লাইনে দাঁড়াতে বলেন।

এরপরই একে একে হত্যা করা হয় তাদের। শুরু হয় পিলখানাজুড়ে তাণ্ডব। চলে সেনা কর্মকর্তাসহ তাদের পরিবারকে হত্যা, নির্যাতন, জিম্মি, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা।

২৬ ফেব্রুয়ারির রাতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে প্রায় ৩৩ ঘণ্টার বিদ্রোহের অবসান ঘটলে পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ।