দক্ষতা উন্নয়ন এবং জনশক্তি রপ্তানি: বাংলাদেশের ঐতিহাসিক যাত্রা | Sudokkho News
জনশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে আমরা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছি। কিন্তু দক্ষতা উন্নয়ন ছাড়া এই সাফল্য কতটা টেকসই? চলুন, বাংলাদেশে জনশক্তি রপ্তানির ঐতিহাসিক যাত্রা এবং দক্ষতা উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়ে বিশ্লেষণ করি। জনশক্তি রপ্তানির যাত্রা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পরপরই। -*১৯৭৬ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান: মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে প্রবেশের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেন। তার শাসনামলে প্রবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। জেনারেল এরশাদের শাসনামল: জনশক্তি রপ্তানি ব্যবস্থাপনার কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে ‘বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (BMET) প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বাজার: সত্তর এবং আশির দশকে, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯৮০-এর দশকে, প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান। মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি ১৯৯০-এর দশকে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বাজার হয়ে ওঠে। ১৯৯২ সালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে গেলে, বাংলাদেশের জন্য কৃষি এবং নির্মাণ খাতে কাজের সুযোগ তৈরি হয়। বর্তমানে, প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন। অনেক শ্রমিক বৈধ পদ্ধতি এড়িয়ে ভিসা পাচ্ছেন, যার ফলে প্রবাসে সমস্যায় পড়ছেন। মালয়েশিয়ার উন্নত প্রযুক্তি এবং আধুনিক চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মতো দক্ষতা অনেক শ্রমিকের নেই। বর্তমানে, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (BAIRA) এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কাজ করছে।
আপনারা কি জানেন, বাংলাদেশের জনশক্তির বৃহৎ অংশ এখনো অদক্ষ বা সীমিত দক্ষতাসম্পন্ন? অথচ, দক্ষতা এমন একটি শক্তি যা শুধু ব্যক্তির জীবনই বদলে দেয় না, পুরো দেশের অর্থনীতিকেও পাল্টে দিতে পারে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বা NSDA, দক্ষ জনশক্তি তৈরির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি দেশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। আজকের আধুনিক বাংলাদেশে, NSDA প্রায় সব প্রধান শিল্পে দক্ষ কর্মী সরবরাহ করছে। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, বা BMET, দক্ষতা উন্নয়নের প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তাদের অধীনে ৬৪টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে প্রতি বছর লক্ষাধিক কর্মী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
BMET-এর বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, যেমন বিদেশি ভাষার কোর্স, কর্মীদের আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলছে। SEIP, অর্থাৎ স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম, একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। ২০২৫ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের অধীনে পাঁচ লক্ষ দক্ষ কর্মী তৈরি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গার্মেন্টস, আইটি, এমনকি অ্যাডভান্সড মেশিন অপারেশন—SEIP এর মতো উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। দক্ষ কর্মীরা আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে গিয়ে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আনছেন। ২০২২ সালে, এই দক্ষ কর্মীদের মাধ্যমে অর্জিত রেমিট্যান্স ছিল ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থ কেবল দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে না, গ্রামীণ উন্নয়নেও অবদান রাখছে। NSDA ও BMET-এর মতো সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা বুঝে স্থানীয় শ্রমিকদের দক্ষ করে তুলছে। পাশাপাশি BAIRA-এর মতো সংগঠন দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করেছে। বাংলাদেশ সরকার আগামী পাঁচ বছরে আরও ২০টি আধুনিক টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর ফলে দেশীয় শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমরা আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারেও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারব। দক্ষতা উন্নয়নের এই কার্যক্রম টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের পথেও বড় ভূমিকা রাখছে। দক্ষতা বিনিয়োগ মানে একটি দেশের ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করা। দক্ষতা উন্নয়নের এই প্রচেষ্টাগুলো আমাদের দেশের জন্য একটি আশার আলো।
দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকার, NSDA, BMET, এবং BAIRA-এর প্রতিটি উদ্যোগ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গল্পে নতুন অধ্যায় যোগ করছে, বর্তমানে, বাংলাদেশ বছরে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করে। তবে, দক্ষ শ্রমিক বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা আগামী পাঁচ বছরে এই সংখ্যা ৩০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে পারি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ। আরও আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা। সরকারের নতুন নীতিমালা, যা বৈধ উপায়ে শ্রমিক প্রেরণে জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু দক্ষতা উন্নয়ন ছাড়া এই অগ্রযাত্রা সম্ভব নয়। দক্ষ জনশক্তি তৈরি, রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করা, এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা আমাদের ভবিষ্যৎ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। আমরা একসঙ্গে এই যাত্রাকে আরও সফল করতে পারি। ধন্যবাদ।
Keyword:
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর নিয়োগ পরীক্ষা প্রশ্ন,রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রশ্ন,রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রশ্ন সমাধান,রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে সার্কুলার 2022,দক্ষ জনশক্তি,রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহকারী পরিচালক প্রশ্ন,জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো নিয়োগ,জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো প্রশ্ন,জনশক্তি ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরো,কর্মসংস্থান ও জনশক্তি,কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস,বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা এবং উন্নয়নের পূর্বশর্ত
দক্ষতা উন্নয়ন এবং জনশক্তি রপ্তানি: বাংলাদেশের ঐতিহাসিক যাত্রা | Sudokkho News
Информация по комментариям в разработке