3. কর্ম-লক্ষণ – চলনাত্মকং কর্ম – অর্থাৎ চলন বা স্পন্দন, কম্পন নামে যা প্রত্যক্ষ করা যায় তা কর্ম।
অন্নংভট্ট দীপিকা টীকায় কর্মের ২টি লক্ষণ দিয়েছেন
সংযোগ ভিন্নত্বে সতি সংযোগ-অসমবায়িকারণং কর্ম।
অর্থাৎ সংযোগের ভেদবিশিষ্ট হয়ে যা সংযোগের অসমবায়িকারণ হয় তাকেই কর্ম বলে।
উদাহরণ – হস্তপুস্তকসংযোগঃ। এই সংযোগের সমবায়িকারণ হস্ত ও পুস্তক এবং এর সংযোগ। এবং দুটি ভিন্ন স্থানে স্থিত হস্ত ও পুস্তকের সংযোগ সাধিত হলো, সেই হস্তের ক্রিয়াই হস্তপুস্তকসংযোগের অসমবায়িকারণ।
২. কর্মত্বজাতিমদ্ বা। অর্থাৎ যা কর্মত্ব জাতির আশ্রয় তাই কর্ম।
কর্মের প্রকারভেদ - অন্নংভট্ট তর্কসংগ্রহে কর্মের বিভাজন করে বলেছেন-
উৎক্ষেপণাপক্ষেপণাকুঞ্চনপ্রসারণগমনানি পঞ্চ কর্মাণি।
অর্থাৎ কর্ম ৫প্রকার যথা –
১.উৎক্ষেপণ – ঊর্ধ্বদেশসংযোগহেতুরুৎক্ষেপণম্।
অর্থাৎ যে কর্ম ঊর্ধ্বদেশসংযোগের প্রতি কারণ তা উৎক্ষেপণ।
২.অবক্ষেপণ – অধোদেশসংযোগহেতুরবক্ষেপণম্।
অর্থাৎ নিম্নে কোন বস্তু নিক্ষেপ করলে তাকে অবক্ষেপণ বলে।
৩.আকুঞ্চন – শরীরসন্নিকৃষ্টসংযোগহেতুরাকুঞ্চনম্।
অর্থাৎ শরীরের সামনাসমনি সংযোগের প্রতি কারণকে বলে আকুঞ্চন।
৪.প্রসারণ – শরীরবিপ্রকৃষ্টসংযোগহেতুঃ প্রসারণম্।
অর্থাৎ শরীরের দূরবর্তী সংযোগের প্রতি কারণকে প্রসারণ বলে।
৫.গমন – অন্যৎ সর্বং গমনম্।
অর্থাৎ উপরোক্ত ৪টি ছাড়া অন্য সমস্ত কর্মকে গমন বলে।
4. সামান্য - লক্ষণ – নিত্যত্বে সতি অনেক সমবেতত্বম্ সামান্যম্।
বা
নিত্যমেকমনেকানুগতং সামান্যম্।
অর্থাৎ যা নিত্য এবং অনেক অধিকরণে সমবায় সম্বন্ধে বর্তমান তা সামান্য পদবাচ্য। এই সামান্যের নামান্তর জাতি। সত্তা, দ্রব্যত্ব এবং ঘটত্ব সামান্য পদার্থ।
উদাহরণ – অসংখ্য মানুষের মধ্যে অসংখ্য ভেদ রয়েছে, যেমন কেও লম্বা, কাল, গৌর ইত্যাদি। কিন্তু এ সব মানুষদের মধ্যে এমন এক সাধারণ ধর্ম আছে ফলে আমরা পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সকলকে মানুষ বলে অভিহিত করি। এ সাধারণ ধর্মই সামান্য পদবাচ্য।
প্রকারভেদ – অন্নংভট্ট সামান্য কে পরা ও অপরা ভেদে ২ভাগে বিভক্ত করেছেন। কিন্তু বিশ্বনাথ তাঁর ভষাপরিচ্ছেদে সামান্যকে পরা, অপরা এবং পরাপর ভেদে ৩ভাগে বিভক্ত করেছেন। (সত্তা, দ্রব্যত্ব ও ঘটত্ব সামান্য পদার্থ)
১.পরসামান্য- পরম্ অধিকদেশবৃত্তিঃ। অর্থাৎ যে জাতি সত্তা অপেক্ষা অধিকদেশে বিদ্যমান থাকে তা পরসামান্য। যেমন সত্তা।
২. অপরসামান্য – অপরং ন্যূনদেশবৃত্তিঃ। অর্থাৎ যে জাতি সত্তা অপেক্ষা ন্যূনদেশে বর্তমান থাকে তা অপরসামান্য। যেমন ঘটত্ব।
৩. পরাপরসামান্য- দ্রব্যত্ব জাতি সত্তা অপেক্ষা ন্যূনদেশবৃত্তিত্বও ঘটত্ব অপেক্ষা অধিকদেশবৃত্তিত্ব হওয়ায় দ্রব্যত্ব কে পরাপরসামান্য বলা হয়।
5. বিশেষ - লক্ষণ – নিত্যদ্রব্যবৃত্তয়ো বিশেষাঃ।
অর্থাৎ বিশেষ পদার্থ নিত্যদ্রব্যে থাকে।
প্রকারভেদ – বিশেষাঃ তু অন্তা এব।
অর্থাৎ বিশেষ অনন্ত। বিশেষ পদার্থটি যেহেতু নিত্যদ্রব্যে থাকে, এবং নিত্যদ্রব্য অনন্ত অতএব বিশেষও অনন্ত।
উদাহরণ – ক্ষিৎ, অপ্, তেজ্ ও বায়ু এই ৪টি দ্রব্যের উৎপাদক পরমাণু সমুহ এবং আকাশ, কাল, দিক্, মন ও আত্মা নিত্যদ্রব্য সমস্ত নিত্যদ্রব্যে স্থিত বিশেষের সংখ্যা অনন্ত।
6. সমবায় - সমবায়ের লক্ষণ প্রদান করে তর্কসংগ্রহে অন্নংভট্ট বলেছেন - নিত্যসম্বন্ধঃ সমবায়ঃ।
অর্থাৎ - নিত্যত্বে সতি সম্বন্ধত্বং সমবায়ত্বম্। অতএব নিত্য সম্বন্ধকেই সমবায় বলা হয়।
সমবায়ের উপরোক্ত সংজ্ঞায় সংযোগসম্বন্ধে অতিব্যাপ্তি দোষের পরিহারের জন্য নিত্যত্ব পদটি যুক্ত হয়েছ।
আবার আকাশাদি নিত্য দ্রব্যে সমবায় লক্ষণের অতিব্যাপ্তি দোষ নিবারণের জন্য সম্বন্ধ পদটি যুক্ত হয়েছে।
কিন্তু সমবায়ের এই লক্ষণে স্বরুপ সম্বন্ধে পুনরায় অতিব্যাপ্তি দোষের আশংকা থাকার হেতু এটি সমবায়ের নিকৃষ্ট লক্ষণ।
তই ন্যায়দর্শনের অন্যতম পণ্ডিত পঞ্চানন শাস্ত্রী সমবায়ের একটি নির্দোষ লক্ষণ দিয়ে বলেছেন- সম্বন্ধি-ভিন্নত্বে সতি নিত্যত্বে সতি সম্বন্ধত্বম্ সমবায়ত্বম্। অর্থাৎ স্বীয় অনুযোগী ও প্রতিযোগী থেকে ভিন্ন নিত্য যে স্বয়ং সম্বন্ধ তাকে সমবায় বলা হয়।
সমবায়ের স্বরূপ বিশ্লেষণ করে ভাষাপরিচ্ছেদে বিশ্বনাথ ন্যায়পঞ্চানন বলেছেন-
ঘটাদীনাং কপালাদৌ দ্রব্যেষু গুণকর্মণোঃ।
তেষু জ্ঞায়তেশ্চ সম্বন্ধঃ সমবায় প্রকীর্তিতঃ।।
অর্থাৎ ঘটাদি অবয়বীর সঙ্গে, কপালাদি অবয়বের যে সম্বন্ধ, গুণ ও কর্ম নিজের আশ্রয়ে যে সম্বন্ধে থাকে এবং জাতি, দ্রব্য, গুণও কর্মে যে সম্বন্ধে থাকে তাকেই সম্বন্ধ বলা হয়। এ সম্বন্ধের বিনাশে বস্তুর ধ্বংস হয়।
সমবায়ের প্রকৃতি নিরূপণ করে অন্নংভট্ট বলেছেন - সমবায়ের উৎপত্তি ও বিনাশ হয় না। অতএব সমবায় একটি নিত্য পদার্থ। এই সমবায় অযুতসিদ্ধ বস্তুসমুহে থাকে। অযুতসিদ্ধবস্তু অর্থাৎ - যে দুটি বস্তুর মধ্যে একটি তার বিনাশ না হওয়া পর্যন্ত আর একটিতে থাকে, সেই ব্স্তু দুটিকে অযুতসিদ্ধ বলা হয়। এই অযুতসিদ্ধি পাঁচটি সম্বন্ধে উল্লেখ করা যায়, যথা –
১. অবয়ব-অবয়বী সম্বন্ধ, যেমন অবয়ব তন্তু ও অবয়বী বস্ত্রের সম্বন্ধ অযুতসিদ্ধ।
২. দ্রব্য ও গুণের সম্বন্ধ, যেমন রক্তবর্ণ একটি বিশেষ গুণ এবং রক্তজপাপুষ্পের সম্বন্ধ অযুতসিদ্ধ।
৩. ক্রিয়া ও ক্রিয়াবানের সম্বন্ধ,
৪. জাতি ও ব্যক্তির সম্বন্ধ এবং
৫. বিশেষ ও নিত্য দ্রব্যের সম্বন্ধ।
সমবায় ও সংযোগ দুটি মধ্যে নিম্ন পার্থক্যসমুহ হয়েচছ, সেই পার্থক্যগুলো যথা-
১. যুতসিদ্ধ পদার্থের সম্বন্ধ সংযোগ সম্বন্ধ, কিন্তু অযুতসিদ্ধ বস্তুর সম্বন্ধ সমবায় সম্বন্ধ।
২. সংযোগ সম্বন্ধে সংযোগের বিনাশ হলেও বস্তুর বিনাশ হয় না, কিন্তু সমবায় সম্বন্ধের বিনাশে বস্তুর বিনাশ অবশ্যম্ভাবী।
৩. সংযোগ সম্বন্ধ অনিত্য, কিন্তু সমবায় সম্বন্ধ নিত্য।
৪. সমবায় একটি স্বতন্ত্র পদার্থ, কিন্তু সংযোগ সম্বন্ধ গুণ পদার্থের অন্তর্গত একটি গুণ মাত্র।
৫. সমবায় এক, কিন্তু সংযোগ অনেক।
৬. সংযোগ সম্বন্ধ সর্বদা দুটি দ্রব্যের মধ্যে হয়, কিন্তু সমবায় সম্বন্ধ দ্রব্য, গুণ, কর্ম, নিত্য দ্রব্য বিশেষেও সম্ভব।
৭. সমবায় সম্বন্ধ সর্বদা বৃত্তিনিয়ামক আধার আধেয় সম্বন্ধে সম্ভব হয়, কিন্তু সংযোগ সম্বন্ধ সর্বদা বৃত্তি নিয়ামক নয়।
For notes on অভাব, see part 8 তর্কসংগ্রহ.
Информация по комментариям в разработке