সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর|| শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর || ঈশা খাঁর রাজধানী ছিল || Sonargaon Museum || Bangladesh Folk Art & Crafts Foundation
বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষার্থে বাংলাদেশের লোকশিল্পের সংরক্ষণ, বিকাশ ও সর্বসাধারণের মধ্যে লোকশিল্পের গৌরবময় দিক তুলে ধরার জন্য ১৯৭৫ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের উদ্যোগে সোনারগাঁয়ের “বড়সর্দারবাড়ি” তে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলার লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন’, যা সোনারগাঁও জাদুঘর নামে পরিচিত এখানে আরো রয়েছে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, কারুপল্লী ও একটি বিশাল লেক
সর্দার বাড়ি
গেট হাউজের প্রহরীদের কুঠুরি পার হলে আছে প্রকাণ্ড জলসা ঘর। প্রায় ৩০ ফুট উঁচু ছাদ পজন্ত মনমুগ্ধক্র কারুকাজ। পরের দ্বিতল ভবনের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। নিচতলায় ও দ্বিতল বারান্দায় পাঁচ ফুট পর পর সুনিপুণ কারুকার্যময় খিলান। কার্নিশে লতাপাতার মনোরম কারুকাজ। জার সুন্দজ দেখে চোখ সরানো দায়।
ভবনের নিচ তলায় রুমের সংখ্যা ৪৭টি আর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ৩৮টি রুম। ৮৫টি রুম সহ সম্পূর্ণ ভবনের আয়তন ২৭ হাজার ৪০০ বর্গফুট।
মুলত ভবনঅটি ৩ টি অংশে বিভক্ত
যতদূর জানা যায় পিছনের ভবনটি মুঘল আমলের প্রথমদিকে নির্মিত। মধ্যভাগের লাল বর্গাকার ভবনটি বাংলার বারো ভূইয়ার সময় নির্মিত হয়েছে। সামনের অংশটি ১৯০২ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল।
ভবনটিতে ১০টি গ্যালারী রয়েছে। গ্যালারিগুলোতে কাথেখোদাই করেকারুশিল্প, চাসাবাদে বেবহিত নাংল ,পটচিত্র , মাটি ও কাঠ দিয়ে তয়রি চাকা, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন ইত্যাদি।
বাড়ির পূর্ব ও পশ্চিমে প্রকাণ্ড দুটি দিঘি রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমের দিঘিটি খুবই মনকাড়ে। বাড়িটির প্রতিচ্ছবি পরে দিঘির জলে। দেখতে অসাধারন লাগে তখন। বাড়ির পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুইপাশের দিঘিতেই একাধিক ইটের তৈরী বাঁধানো ঘাট নেমে গেছে দিঘির জলের নিচ পর্যন্ত। পশ্চিমের দিঘির একটি ইটের তৈরী বাঁধানো ঘাটের দুই দিকে দুজন ইংরেজ অশ্বারোহীর মূর্তি রয়েছে।
এই ভবনটিতে মাত্র দু'টি গ্যালারি। এই দুইটি গ্যালারির মধ্যে একটি গ্যালারি কাঠের তৈরি, যা প্রাচীন ও আধুনিক কালের নিদর্শনসমৃদ্ধ। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রাকৃতিক, বৈশিষ্ট্য কাঠ এবং কাঠ থেকে বিভিন্ন কারুপণ্য তৈরি এবং সর্বশেষ বিক্রির সামগ্রিক প্রক্রিয়া, অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে সুন্দর মডেল দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই দুটি ভবনের বাইরে রয়েছে পাঠাগার, ডকুমেন্টেশন সেন্টার, সেমিনার হল, ক্যান্টিন, কারুমঞ্চ, গ্রামীণ উদ্যান ও বিভিন্ন রকমের বৃক্ষ, মনোরম লেক, লেকের মাঝে ঘুরে বেড়ানোর জন্য
কারুপল্লীতে বৈচিত্র্যময় দোকান গুলোতে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আর্থিকভাবে অবহেলিত অথচ দক্ষ কারুশিল্পীর তৈরি বাঁশ- বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি, নকশিকাঁথা, একতারা, পাট, শঙ্খ, মৃৎ শিল্প ও ঝিনুকের সামগ্রী ইত্যাদি কারুপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে।
এছাড়া প্রতি বৈশাখ মাসে এখানে আয়োজিত হয় লোকশিল্প মেলা। এ মেলায় লোকসংগীত, যাত্রাপালা, কবিগান ইত্যাদি লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানমালা পরিবেশন করা হয়। মেলায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসেন লোকজ শিল্পী ও কারুশিল্পীরা। মাটি, বাঁশ, বেত, কাপড়সহ বিভিন্ন হস্ত শিল্পজাত সামগ্রী বিক্রি হয় এ মেলায়। এছাড়াও জাদুঘরের সম্মুখে অবস্থিত লেকে নৌকাভ্রমণ ও শীত মৌসুমে টিকেট কেটে মাছ ধরার ব্যবস্থা আছে।দর্শণার্থীদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য রয়েছে ক্যান্টিন।
জাদুঘরে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন বাংলার প্রাচীন সুলতানদের ব্যবহৃত অস্ত্র শস্ত্র, তৈজসপত্র, পোশাক, বর্ম, অলংকার ইত্যাদি।বাংলার প্রাচীন ও মধ্য যুগের লোকশিল্পের অনেক নিদর্শন রয়েছে এখানে, রয়েছে বাংলার প্রাচীন মুদ্রা।
সবকিছু মিলিয়ে এ জাদুঘর যেন ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীদের কাছে অনেক পছন্দ ও শিক্ষণীয় স্থান হিসেবে মনের কোঠায় জায়গা করে নিয়েছে।
লোকশিল্প জাদুঘরে যাবেন যেভাবে
রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা হয়ে উত্তরদিকে সোনারগাঁওয়ের অবস্থান। তাই খুব অল্প সময়ে অল্প খরচে সোনারগাঁওয়ে যাওয়া যায়।
বাসে যেতে চাইলে ঢাকার গুলিস্তান থেকে হকি স্টেডিয়ামের পাশের বাস কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। এখানে স্বদেশ পরিবহনসহ আরও বেশ কয়েকটি বাস সোনারগাঁও যায়।
যে কোনো একটি পরিবহনে উঠে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় নামতে হবে। চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় উঠে পর্যটক নগরী সোনারগাঁওয়ে যেতে হবে। রিকশা ভাড়া নেবে ২০-৩০ টাকা।
Информация по комментариям в разработке