Скачать или смотреть প্রত্যন্ত সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারালো মৎস্যজীবী

প্রত্যন্ত সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারালো মৎস্যজীবী
———————————————
সুন্দরবন ঃ বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হল এক মৎস্যজীবীর। মৃতের নাম কার্তিক মণ্ডল(৫৬)। বৃহষ্পতিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের ২ নম্বর পীরখালি জঙ্গলের জোড়া বঙ্কীতলা খালের কাছে।কার্তিক বাবুর দুই সঙ্গী মাঝি জয়দেব মন্ডল ও তুষার মন্ডল কার্যত বাঘের সাথে লড়াই করেই তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। কিন্তু তাকে প্রানে বাঁচাতে পারেননি।

দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের গোসাবা থানার বালি ১ গ্রামপঞ্চায়েতের সত্যনারায়ণপুর থেকে গত বুধবার রাত আটটা নাগাদ একটি ভাড়া করা নৌকা ও দুই সঙ্গী মাঝি জয়দেব মন্ডল ও তুষার মন্ডল কে সাথে নিয়ে সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন কার্তিক বাবু।বৃহষ্পতিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ নিজেদের নৌকা নোঙর করে যখন সকলে কাঁকড়া ধরার দোন তুলছিলেন ঠিক তখনই জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে আচমকা লাফিয়ে পড়ে কার্তিক বাবুর উপরে। মুহূর্তে তাকে নিয়ে নৌকা থেকে নদীর জলে পড়ে যায় বাঘটি। বেশ কিছুক্ষণ লডাই করার পর কার্তিক বাবুর ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয় বাঘ। এরপর শিকার কে ধরে টানতে টানতে জঙ্গলের ভিতর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঘ প্রস্তুত হলে,কার্তিক বাবুর দুই সঙ্গী নৌকার হাল এবং কাঁকড়া ধরার শিক নিয়ে বাঘের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে লড়াই করেন। দীর্ঘক্ষণ লড়াইয়ে বেগতিক বুঝে বাঘ শিকার কে নদীর জলে ফেলে জঙ্গলে পালিয়ে যায়।দুই সঙ্গী কার্তিক বাবুকে জল থেকে উদ্ধার করলেও ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়েছে।
অবশেষে সঙ্গীকে উদ্ধার করেন নৌকায় করে জয়দেব ও তুষার বাবু সত্যনারায়ণপুর গ্রামে ফিরে আসেন।
মৃতদেহ সত্যনারায়ণপুর গ্রামে আসতেই এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া । পরে সেখান থেকে মৃতদেহ গোসাবা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে,সেখান থেকে গোসাবা থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।অন্যদিকে বনদফতরও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানাগেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী মেনকা মন্ডল কে নিয়ে এক দরিদ্র পরিবার। কার্তিক বাবু কোন রকমে দীনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন।
কার্তিক বাবুর দুই ছেলে গোপাল ও শ্রীনাথ মন্ডল পড়াশোনা ছেড়ে দিলেও একমাত্র মেয়ে সাধনা মেদনীপুরের একটি কলেজে নার্সিং কোর্স নিয়ে পড়াশোনা করছে। বিগত ৫-৬ বছর সংসারে অভাব অনটন প্রখর ভাবে দেখা দেওয়ায় এবং একমাত্র মেয়ে সাধনা মন্ডলের পড়াশোনার খরচ যোগাতে বাড়তি রোজগারের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরতে যাওয়া শুরু করেন কার্তিক বাবু।
অন্যান্য বারের মতো বুধবার রাতে বাড়ী থেকে বেরিয়ে মাছ কাঁকড়া ধরার জন্য সুন্দরবনের জঙ্গলে গিয়েছিলেন।বৃহষ্পতিবার ভোরে কাঁকড়া ধরার সময় আচমকা বাঘের আক্রমণে কার্তিক বাবুর মৃত্যু হয়।
এমন দুঃসংবাদের কথা শুনে সত্যনারায়ণপুর গ্রামে হাজীর হয়ে মৃতের পরিবার কে স্বান্তনা জানিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেন “সেভ্ টাইগার অ্যাফেক্টেড ফ্যামিলি(ষ্টাফ)” অন্যতম সদস্য তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিক্ষক অমল নায়েক।
অমল বাবু বলেন “অভাবের তাড়না একটু বেশী রোজগারের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কতশত মৎস্যজীবী বাঘের আক্রমণে এমন প্রাণ হারিয়েছে।পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়লো আরও একটি পরিবার।তিনি আরো বলেন কার্তিক বাবুর মেয়ে যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে সেদিক দিয়ে “সেভ্ টাইগার অ্যাফেক্টেড ফ্যামিলি(ষ্টাফ)” সর্বক্ষণ অসহায় পরিবারে পাশে থাকবে। ”