#boier_feriwala #বইয়ের_ফেরিওয়ালা
#বইএর_ফেরিয়ালা #Boyer_feriwala
Subscribe Our Channel : http://bit.ly/boierferiwala
জতুগৃহ সুবোধ ঘোষ
jotu griho Subodh Ghosh
এত রাত্রে এটা কোন ট্রেন ? এই শীতার্ত বাতাস, অন্ধকার আর ধোঁয়া ধোঁয়া বৃষ্টির মধ্যে ট্রেনটা যেন হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে ছুটে এসে রাজপুর জংশনের প্লাটফর্মের গায়ে লাগলো।
খুব সম্ভব গঙ্গার ঘাটের দিক থেকে ট্রেনটা এসেছে। এখনো অদূর গঙ্গার বুকে সেই স্টিমারের চিমনি বাঁশির শব্দ শোনা যায়, যে স্টিমারটা একদল যাত্রীকে ঘাটে নামিয়ে দিয়ে একটু হালকা হয়ে আর হাঁপ ছেড়ে আবার ওপারে চলে যাচ্ছে।
প্লাটফর্মের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ট্রেনের এঞ্জিন আস্তে আস্তে হাঁপাতে থাকে। ফাস্ট ক্লাস ওয়েটিংরুমে বয়টা একটু ব্যস্ত হয়ে ওঠে। টেবিল চেয়ার বেঞ্চ আর আয়নাটার ওপর ঝটপট তোয়ালে চালিয়ে একটু পরিচ্ছন্ন করে ফেলে। জমাদার এসে রুমের টুকিটাকি আবর্জনা বড় বড় ঝাড়ুর টান দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যায়।
ঘাটের ট্রেনটা ছোট হলেও এবং যাত্রীর সংখ্যা কম হলেও ফাস্ট ক্লাসের যাত্রী দু-একজন তার মধ্যে পাওয়াই যায় । হয়তো কাটিহারের কোন চিনিকলের মহাজন, অথবা দার্জিলিং-ফেরত কোন চা-বাগানের সাহেব, এই ধরনের কুলিন শ্রেণীর যাত্রীও থাকেন, শুধু সাঁওতাল কুলির দলই নয় ।
কিন্তু আজ এখন যাঁরা এই ক্লান্ত ট্রেন থেকে নেমে ব্যস্তভাবে এসে ফাস্ট ক্লাস ওয়েটিংরুমে আশ্রয় নিলেন, তাঁদের সঙ্গে চিনিকল অথবা চা-বাগানের কোন সম্পর্ক নেই।
কুলির মাথায় বাক্স-বেডিং চাপিয়ে প্লাটফর্মের ওপর দিয়ে ওঁড়ো-ওঁড়ো বৃষ্টির মধ্যে তরতর করে হেঁটে ওয়েটিংরুমে প্রথম এসে ঢুকলেন এক বাঙালী মহিলা । গায়ে কাশ্মিরী পশমে তৈরি একটা মেয়েলী আলস্টার, কানে ইহুদী প্যাটানের ছোট ফিরোজার দুল, খোঁপা বিলিতি ধাঁচে ফাঁপানো ।
তারপরেই যিনি এসে ঢুকলেন, তাঁরও সঙ্গে কুলি, আর তেমনি বাঙ্গ-বেডিংয়ের বহর । চোখে চশমা, গায়ে শাল, দেশী পরিচ্ছদে ভূষিত এক বাঙালী ভদ্রলোক ।
এক ভদ্রলোক আর এক মহিলা, একই ট্রেনের যাত্রী হয়ে এক ওয়েটিংরুমে এসে আশ্রয় নিয়েছেন । এই মাত্র সম্পর্ক, যদি নেহাতই একে সম্পর্ক বলা যায়। ইনি হয়তো ঘন্টা দুয়েক আর উনি ঘণ্টা তিনেক পথপ্রাস্তের এই শিবিরে ট্রেনের প্রতীক্ষায় থাকবেন, তারপর চলে যাবেন যাঁর যাঁর পথে ।
কিন্তু আশ্চর্য, ঘরে ঢোকা মাত্র দুজনে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রথমে চমকে ওঠেন, তারপরেই চিত্ৰবৎ স্তব্ধ হয়ে থাকেন। দুজনেই যেন অপ্রস্তুত ও লজ্জিত, বিরক্ত ও বিড়ম্বিত, এবং একটু ভীতও হয়েছেন। যেন কাঠগড়া থেকে পলাতক ফেরারী আসামীর মত বহুদিন পরে এবং নতুন করে এক আদালত ঘরের মধ্যে দুজনে এসে পড়েছেন। মাধুরী রায়ের আলস্টারে কুচি কুচি জলের ফোঁটা নিঃশব্দে চিকচিক করে । শতদল দত্তও জলেভেজা চশমার কাচ মুছে নিতে ভুলে যায় ।
এটা রাজপুর জংশনের ওয়েটিংরুম, আদালত নয়। জঙ্গ নেই, উকিল নেই, সাক্ষী নেই, সারি সারি সাজানো কতগুলি নিম্পলক লোকচক্ষুও নেই। প্রশ্ন করে লজ্জা দিতে, স্বীকৃতি বা স্বাক্ষর আদায় করতে তৃতীয় কোন ব্যক্তি নেই। তবু এই নিভৃত সান্নিধ্যই দুজনের কাছে বড় বেশি দুঃসহ বলে মনে হয়। সরে পড়তে পারলে ভাল, সরে যাওয়াই উচিত।
শতদল দরজার কাছে এগিয়ে এসে ডাক দেয়—কুলি ।
মাধুরীর জিনিসপত্র ছড়িয়ে পড়ে আছে ঐ বেঞ্চের ওপর। শতদলের জিনিসপত্র স্থূপীকৃত হয়ে রয়েছে ঐ টেবিলটার ওপর।
এক্ষুনি জিনিসপত্র আবার কুলির মাথায় চাপিয়ে শতদল দত্তকে চলে যেতে হবে। কিন্তু কোথায়, তা সে জানে না। শুধু অদৃশ্য লজ্জায় অভিভূত এই ওয়েটিংরুম ছেড়ে অন্য কোনখানে, হয়তো ঐ মুসাফিরখানায়, যেখানে এরকম আলো নেই, আসবাবও নেই, কিন্তু অতীতের এক অস্পষ্ট ছায়াকে এত জীবন্ত মূর্তিতে মুখোমুখি দেখে বিব্রত হওয়ার শঙ্কাও সেখানে নেই। শতদলের ডাকে সাড়া দিয়ে কিন্তু কুলিদের কেউ এল না, এল ওয়েটিংরুমের বয় ।
—হুজুর !
বয়কে উত্তর দিতে হবে । শতদল দত্ত আর একবার দরজা পর্যন্ত পায়চারি করে এগিয়ে যায়, বাইরে উকি দিয়ে তাকায়, গুঁড়ো বৃষ্টির একটা ঝাপটা মুখে এসে লাগে। ফিরে এসে আবার টেবিলটার পাশে দাঁড়ান, যেন নিজেরই চিন্তার ভেতর পায়চারি করে উত্তর সন্ধান করছে শতদল ৷
চুপ করে দাঁড়িয়ে কি ভাবতে থাকে শতদল, বোধহয় ততক্ষণে নিজের মনের অবস্থাটার ওপরই রাগ করে একটু শক্ত হয়ে উঠেছে। এভাবে বিচলিত হওয়ার কোন অর্থ নেই। ওয়েটিংরুমের মধ্যে মাত্র একজন যাত্রীকে দেখে এভাবে পালিয়ে যাওয়ার অর্থ, একটা অর্থহীন দুর্বলতার কাছে হার মেনে যাওয়া
বয় বলে—ফরমাস করুন হুজুর ।
subodh sarkar,subodh ghosh,class 10 bangla golo bahurupi by subodh ghosh,bohurupi by subodh ghosh,bengali story bahurupi by subodh ghosh,subodh,subodh sarkar poem,subodh sarkar poems,subodh sarkar kobita,firoza subodh sarkar,jui ghosh bhattacharya,audio story,asha bhosle,bohurupi,bangla,recitation,bengali,bangla golpo,bengali poem,bangla kobita abritti
#সাহিত্য #বাংলা #পিডিএফ #pdf #বয়ের_ফেরিয়ালা
গ্রুপ: / 2884886. .
পেজ / boier.feriwala
Информация по комментариям в разработке