Скачать или смотреть দেশে প্রতিনিয়তই বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা

প্রতিবছর উচ্চ শিক্ষা শেষে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে পা রাখেন। কিন্তু দেশে চাকুরির সংখ্যা না বাড়ায় শিক্ষিত বেকারের হার বাড়ছে। মাধ্যমিক শেষ না করে যে ৪০ শতাংশ তরুণ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়ছে তারাও যোগ হন চাকরিহীন মানুষের পরিসংখ্যানে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, কর্মসংস্থান ও তরুণদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেকটাই অন্ধকারে বাংলাদেশে।

দেশের চাকরির বাজার আর শিক্ষা ক্ষেত্রের অসামঞ্জস্যতা সমস্যা নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব।

'আমি দর্শনে পড়াশুনা করি। কিন্তু এ বিষের ক্ষেত্রে চাকরির অবস্থা খুব ভালো দেখি না।'

বলছিলেন একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকের এক শিক্ষার্থী। কিন্তু এই শিক্ষার্থীর মতো অনেকেই জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষে, ভবিষ্যৎ কি।

শিক্ষার্থীরা মনে করেন, যারা অ্যাপ্লাইড সাইন্সের শিক্ষার্থী না বা যারা আর্টস এমনকি পিওর সাইন্সের শিক্ষার্থী তাদের জন্য বাংলাদেশে চাকরি যথেষ্ট অপ্রতুল।

আবার অনেকেই ঠিক করে রেখেছেন পড়াশুনা শেষ করে সরকারি চাকরীর পরীক্ষায় বসবেন । তবে সে পথ সহজ নয়। তার জন্যও আলাদা করে তৈরি করতে হয় নিজেকে। তাও সেই চেষ্টাও চালাতে হয় বছরের পর বছর।

সরকারি চাকরি ছাড়া উচ্চ শিক্ষিত বেকারদের উপায় হলো বেসরকারি চাকরি। বেসরকারি পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষিজাত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণ ও তৈরি পোশাক খাত, পর্যটন ও পর্যটন সেবা, কারিগরি নির্মাণ খাতকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হয়। কিন্তু এসব খাতের জন্য বিশেষায়িত ও দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষিত কর্মী অনেকসময় খুঁজে পাওয়া যায় না।

প্রযুক্তিবিদ মুনির হাসান বলেন, 'আমাদের ব্যাংকগুলো এখন সব দারুণভাবে প্রযুক্তিভিত্তিক হয়ে গেছে। সেখানে কেনো আমাদের কম্পিউটার সাইন্সের ছেলে-মেয়েদের ইন্টার্র্নি করা সুযোগ দেয় না। সে প্রথম বর্ষ থেকেই করুক। এটা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝতে হবে যে, সে দশ দিন আইটি রুমে বসে আছে। এটা তার অধ্যয়নেরই অংশ।'

কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের তৈরি তারুণ্য উন্নয়ন সূচকে ১৮৩ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬ তম। সূচকে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে তরুণদের কর্মসংস্থান ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রটি। যা নির্ভর করে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের ওপর। শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষাব্যবস্থা কর্মমুখী না হওয়ায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে চলছে।

শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল বলেন, 'আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষাটাকে আরো বেশি জনপ্রিয় করা প্রয়োজন। যারা কারিগরি শিক্ষা নিয়ে এসেছে আমি সবসময় এক ধরণের আনন্দ নিয়ে লক্ষ্য করেছি, তারা কিন্তু অনেক ভালো জানে। আমি আশা করবো, আমাদের দেশের আরো অনেক বেশি ছেলে-মেয়ে যেনো অহেতুক একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাবজেক্টে পড়ে বেকার না থেকে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে নিজেকে কর্মক্ষম করে নেয়। সেটা দেশের জন্যেও লাভ হবে।'

সমস্যা সমাধানে শিক্ষাব্যবস্থায় সিলেবাসগুলোকে সময়োপযোগী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।