Скачать или смотреть ইন্টারনেট এর ইতিহাস / The history of the Internet

আপনি এই ভিডিও টি দেখছেন, আপনার মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকার কারণে। আর আমিও ভিডিও টি আপলোড করেছি ইন্টারনেটের মাধ্যমেই। আপনি কি জানেন এই ইন্টারনেট কিভাবে আমাদের হাতের মুঠোয় এলো। তার পেছনে রয়েছে রোমাঞ্চকর ইতিহাস এবং বেশ কয়েকটি প্রযুক্তির সমন্বয়ের ফলাফল।

ইন্টারনেটের ইতিহাস একটি দীর্ঘ এবং বাস্তবভিত্তিক প্রক্রিয়া।যার শুরুটা ছিল একটি সামরিক প্রকল্প হিসেবে,এবং যা পরে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থায় রূপ নেয়। এ প্রসঙ্গে, মি. বার্নাস লি বলেছিলেন তার আশা এই আবিষ্কার খুবই ইতিবাচক একটা জগত তৈরি করবে। এই গ্রহের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মানুষকে এটা একত্রিত করবে, কারণ এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে ভার্চুয়াল জগতে যোগাযোগ সম্ভব হবে।


অবশ্যই! ইন্টারনেটের ইতিহাস বেশ আকর্ষণীয় এবং কয়েকটি ধাপে এর বিবর্তন ঘটেছে। নিচে সহজভাবে ইন্টারনেটের সম্পূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরা হলো।
ইন্টারনেটের ইতিহাস (History of the Internet)
ইন্টারনেট কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আবিষ্কার নয়। এটি বহু বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। এর ইতিহাসকে কয়েকটি পর্বে ভাগ করা যায়:
পর্ব ১: প্রাথমিক ধারণা ও আরপানেট (ARPANET) - (১৯৬০-এর দশক)
ষাটের দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলছিল ঠান্ডা যুদ্ধ বা Cold War। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে চেয়েছিল, যা পারমাণবিক আক্রমণের পরেও টিকে থাকতে পারবে। তাদের ভয় ছিল যে, একটি কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেলে পুরো দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
 মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (ARPA) এই
এই সময়ে লরেন্স রবার্টস এবং লিওনার্ড ক্লেইনরকের মতো বিজ্ঞানীরা "প্যাকেট সুইচিং" নামক একটি ধারণা নিয়ে আসেন। এই পদ্ধতিতে ডেটাকে ছোট ছোট প্যাকেটে ভাগ করে বিভিন্ন পথে গন্তব্যে পাঠানো হয় এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর পর প্যাকেটগুলো আবার একত্রিত হয়ে মূল ডেটায় পরিণত হয়। এর ফলে নেটওয়ার্কের কোনো একটি অংশ নষ্ট হলেও ডেটা অন্য পথে ঠিকই পৌঁছে যেতে পারে।
 এই ধারণার উপর ভিত্তি করে ১৯৬৯ সালে ARPANET (Advanced Research Projects Agency Network) চালু হয়। এটিকেই ইন্টারনেটের পূর্বসূরি বলা হয়।
১৯৬৯ সালের ২৯ অক্টোবর, ক্যালিফোর্নিয়ার UCLA বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে প্রথম বার্তা পাঠানো হয়। বার্তাটি ছিল "LOGIN"। কিন্তু সিস্টেম ক্র্যাশ করায় শুধুমাত্র প্রথম দুটি অক্ষর "LO" পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। এটিই ছিল ইন্টারনেটের প্রথম পদক্ষেপ।
পর্ব ২: নেটওয়ার্কের বিস্তার ও প্রোটোকলের জন্ম - (১৯৭০-১৯৮০-এর দশক)
TCP/IP-এর উদ্ভাবন: সত্তরের দশকে বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছিল, কিন্তু তারা একে অপরের সাথে কথা বলতে পারত না। এই সমস্যার সমাধানে (Vinton Cerf) এবং (Robert Kahn) TCP/IP (Transmission Control Protocol/Internet Protocol) তৈরি করেন।
এখানে TCP এর কাজ হলো ডেটা প্যাকেটগুলো সঠিকভাবে গন্তব্যে পৌঁছেছে কিনা তা নিশ্চিত করে।
আর IP এর কাজ হলো প্রতিটি প্যাকেটকে সঠিক ঠিকানায় (IP Address) পৌঁছেছে কিনা তা নিশ্চিত করে।
 ১৯৮৩ সালের ১ জানুয়ারি, আরপানেট সম্পূর্ণভাবে TCP/IP প্রোটোকলে স্থানান্তরিত হয়। এই দিনটিকে ইন্টারনেটের জন্মদিন হিসেবেও অনেকে বিবেচনা করেন। এর ফলে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক একে অপরের সাথে যুক্ত হতে শুরু করে এবং একটি "নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক" বা "ইন্টারনেট" গড়ে ওঠে।
 এই সময়ে (E-mail) এবং ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) চালু হয়। ইন্টারনেট বনাম ওয়েব: অনেকেই ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে (Web) একই জিনিস মনে করেন, কিন্তু তা সঠিক নয়। ইন্টারনেট হলো পরিকাঠামো (রাস্তা), আর ওয়েব হলো সেই পরিকাঠামোর উপর দিয়ে চলা তথ্য (গাড়ি)।
টিম বার্নার্স-লি'র অবদান: প্রথম ব্রাউজার ও ওয়েবসাইট: ১৯৯০ সালে টিম বার্নার্স-লি প্রথম ওয়েব ব্রাউজার "WorldWideWeb" এবং বিশ্বের প্রথম ওয়েবসাইট তৈরি করেন।
মোসাইক ব্রাউজার: ১৯৯৩ সালে মোসাইক (Mosaic) নামক একটি গ্রাফিক্যাল ওয়েব ব্রাউজার মুক্তি পায়, যা ছবি ও টেক্সট একসাথে দেখাতে পারত। এটি ব্যবহার করা খুব সহজ হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের আগ্রহ দ্রুত বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে এটি नेटস্কেপ নেভিগেটর (Netscape Navigator) এবং ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার (Internet Explorer)-এর মতো ব্রাউজারের জন্ম দেয় ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে ইন্টারনেট-ভিত্তিক ব্যবসার (যেমন- Amazon, eBay) জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়। একে "ডট-কম বুম" বলা হয়। যদিও ২০০০ সালের পর অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়, তবে এটি ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
ওয়েব ২.০ (Web 2.0): এই দশকে ইন্টারনেট একমুখী ব্যবস্থা থেকে দ্বিমুখী ব্যবস্থায় পরিণত হয়। ব্যবহারকারীরা শুধু তথ্য গ্রহণই নয়, নিজেরাও কনটেন্ট তৈরি করতে শুরু করে। ব্লগ, উইকিপিডিয়া, এবং সোশ্যাল মিডিয়া (যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার) এর বড় উদাহরণ।
পর্ব ৫: মোবাইল ও আধুনিক যুগ - (২০১০-বর্তমান)
স্মার্টফোনের বিপ্লব: ২০০৭ সালে আইফোন বাজারে আসার পর স্মার্টফোনের ব্যবহার দ্রুত বাড়তে থাকে। এর ফলে ইন্টারনেট মানুষের পকেটে চলে আসে। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ডেস্কটপ ব্যবহারকারীকে ছাড়িয়ে যায়।
ক্লাউড কম্পিউটিং ও IoT: এখন আমাদের ডেটা আর নিজেদের ডিভাইসে সীমাবদ্ধ নেই। ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে আমরা যেকোনো জায়গা থেকে ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারি। এছাড়া, ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT)-এর মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ডিভাইস (যেমন- স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, ঘড়ি) ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হচ্ছে।
পরিশেষে বলবো,
একটি সামরিক প্রকল্প হিসেবে যাত্রা শুরু করে ইন্টারনেট আজ বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের শিক্ষা, বিনোদন, বাণিজ্য এবং যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এর বিবর্তন এখনও চলছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং আরও নতুন প্রযুক্তি এর ভবিষ্যৎকে নতুন রূপ দেবে।