Скачать или смотреть শ্রীমদ্ভাগবতম (প্রথম স্কন্ধ দ্বিতীয় অধ্যায় শ্লোক ৬-১০)। প্রবক্তা : উত্তমস্বরূপ নিতাই দাস।।

প্রথম স্কন্ধ, দ্বিতীয় অধ্যায়: শ্লোক ৬ থেকে ১০ এর বর্ণনা

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার প্রথম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ৬ থেকে ১০ নম্বর শ্লোকগুলি ভগবৎ-তত্ত্ব এবং ভক্তিযোগের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে। এই শ্লোকগুলিতে মহর্ষি সূত গোস্বামী শৌনকাদি ঋষিদের কাছে ভগবানের চিন্ময় স্বরূপ, তাঁর বিভিন্ন অবতারের উদ্দেশ্য, এবং ভক্তিযোগে তাঁর সেবা করার মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন।

শ্লোক ৬:

স বৈ পুংসাং পরো ধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে।
অহৈতুক্যপ্রতিহতা যয়াত্মা সুপ্রসীদতি।।

বর্ণনা: এই শ্লোকে বলা হয়েছে যে, মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম হলো অহৈতুকী ও অবিচ্ছিন্ন ভক্তির মাধ্যমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা। এই ধরনের ভক্তি, যা কোনো জাগতিক কামনা বা ফলাফলের দ্বারা প্রভাবিত নয় এবং যা কোনো বাধা দ্বারা বিঘ্নিত হয় না, তা আত্মাকে সম্পূর্ণভাবে প্রসন্ন করে। এর মাধ্যমে আত্মা প্রকৃত শান্তি ও আনন্দ লাভ করে।

শ্লোক ৭:

বাসুদেবকথা প্রশ্নঃ পুরুষাং ত্রীন্ পুনাতি হি।
বক্তারং পৃচ্ছকং শ্রোতৃংস্তৎপাদসলিলা যথা।।

বর্ণনা: এই শ্লোকে ভগবান বাসুদেবের কথা বা লীলা আলোচনা করার মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, বাসুদেবের লীলা বা কথা সম্পর্কে প্রশ্ন করা তিনটি ব্যক্তিকে পবিত্র করে তোলে: যিনি বর্ণনা করেন (বক্তা), যিনি প্রশ্ন করেন (পৃচ্ছক), এবং যিনি শোনেন (শ্রোতা)। ঠিক যেমন গঙ্গার জল সবাইকে পবিত্র করে, তেমনই ভগবানের কথা সবাইকে শুদ্ধ করে।

শ্লোক ৮:

স এষ পুরুষোঽব্যক্তো সূক্ষ্মস্তমব্যক্তসৃষ্টিনাৎ।
আত্মানমাত্মনা বিশ্বং স্বেনৈবাত্মানমাত্মনা।।

বর্ণনা: এই শ্লোকটি ভগবানের সূক্ষ্ম এবং অব্যক্ত স্বরূপের উপর আলোকপাত করে। বলা হয়েছে যে, সেই পরম পুরুষ (ভগবান) অব্যক্ত ও সূক্ষ্ম। তিনি নিজেই নিজের দ্বারা এই অব্যক্ত সৃষ্টিকে প্রকাশ করেন এবং তিনিই নিজের দ্বারাই এই সমগ্র বিশ্বকে নিজের মধ্যে প্রকাশ করেন। এটি ভগবানের সর্বময় কর্তৃত্ব এবং সৃষ্টির উৎস হিসেবে তাঁর ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়।

শ্লোক ৯:

এতাবান্ সঙ্খ্যযোগাভ্যাং স্বধর্মনিষ্ঠয়া তপাঃ।
ত্যাগে ব্রহ্মচর্যেন চ যথাত্মা পরিদৃশ্যেত।।

বর্ণনা: এই শ্লোকে সঙ্খ্যযোগ, স্বধর্ম নিষ্ঠা, তপস্যা, ত্যাগ এবং ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে আত্মোপলব্ধির পথের কথা বলা হয়েছে। এই সমস্ত প্রক্রিয়াগুলি অনুশীলন করার মাধ্যমে আত্মাকে উপলব্ধি করা যায় এবং ভগবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। এটি বোঝায় যে, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য এই সাধন পদ্ধতিগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শ্লোক ১০:

কামস্য নেন্দ্রিয়প্রীতির্লাভো জীবেত যাবতা। জীবস্য তত্ত্বজিজ্ঞাসা নার্থো যশ্চেহ কর্মভিঃ।।

বর্ণনা: এই শ্লোকে কামনার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, ইন্দ্রিয় সুখের জন্য কামনা করা উচিত নয়, বরং কেবলমাত্র জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী লাভ করাই কামনার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। জীবনের মূল উদ্দেশ্য হলো তত্ত্বজিজ্ঞাসা বা আত্মতত্ত্ব ও পরমাত্মতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। এই শ্লোকে অনর্থক কর্মের পরিবর্তে আত্মজ্ঞানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

#শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা #ভাগবতপুরাণ #ভক্তিযোগ #তত্ত্বজিজ্ঞাসা #সনাতনধর্ম #আধ্যাত্মিকতা #ভগবানশ্রীকৃষ্ণ #আত্মোপলব্ধি #ধর্ম #মোক্ষ