Скачать или смотреть হরিবাসরে কির্তন পরিবেশন । কেশব মহারাজ ও ভক্তগন

হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌ নাস্তেব নাস্তেব গতিরন্যথা।।

হরি নাম হরি নাম হরি নাম সার। কলিযুগে নাই নাই নাই গতি আর।।
বিনয়ী চৈতন্য মহাপ্রভু বার বার কলিযুগে এই উপদেশ দিয়ে গেছেন। চৈতন্য চরিতামৃতের আদিখন্ডে বলা হয়েছে-

কৃষ্ণ মন্ত্র হৈতে হবে সংসার মোচন। কৃষ্ণ নাম হৈতে পাবে কৃষ্ণের চরণ।। নাম বিনা কলিকালে নাই আর ধর্ম। সর্ব মন্ত্র সার নাম-এই শাস্ত্র মর্ম।। কৃষ্ণ নামে যে আনন্দ সিন্ধু আস্বাদন। ব্রহ্মানন্দ তার কাছে খতোদক সম।। সদা নাম লবে, যথা লাভেতে সন্তোষ। এইমত আচার করে ভক্তি ধর্ম পৌষ।। জ্ঞান কর্ম যোগ ধর্মে নহে কৃষ্ণ বশ। কৃষ্ণবশ হেতু এক-কৃষ্ণ প্রেমে রস।।

হে কলিযুগের মানব।। কৃষ্ণমন্ত্র থেকেই সংসার-সাগর পার হতে পারবে। কৃষ্ণনাম থেকেই কৃষ্ণের চরণ লাভ করবে। নাম বিনা কলিকালে ধর্ম নাই। সর্ব মন্ত্রের সার কৃষ্ণনাম। কৃষ্ণনামে যে আনন্দ, ব্রহ্মানন্দ লাভেও সে আনন্দ লাভ হয় না। সর্বদা নাম করবে, অল্পে সন্তুষ্ট থাকবে, এই মতে আচার করে ধর্ম রক্ষা করবে। জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ, যোগ, ধর্মকার্য্য প্রভৃতিতে কৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করা যায় না। তাঁকে প্রেমের দ্বারা তুষ্ট করতে হয়।

তুমি ভাল করিয়াছ শিখাহ অন্যেরে।

এইমত ভাল কর্ম সেই যেন করে।।

-চৈতন্য চরিতামৃত (মধ্য খন্ড)

তুমি কৃষ্ণনাম গ্রহণ করে উত্তম কাজ করেছ। ইহা অপরকেও শিক্ষা দাও। তোমার মত সৎ কার্য অর্থাৎ কৃষ্ণনাম যেন সেই ব্যক্তিও গ্রহণ করে।

যত্নাগ্রহ বিনা ভক্তি না জন্মায় প্রেমে।

-চৈতন্য চরিতামৃত (মধ্য খন্ড)

যত্ন এবং আগ্রহ ব্যতীত প্রেমে ভক্তি আসে না, অতএব কৃষ্ণপ্রেমে ভক্তিমান হও। তবেই কৃষ্ণ প্রেমে ভক্তির উদয় হবে।।

অধিক শৃগাল সঙ্গে ভেউ ভেউ করি।

সেই মুখে এবে সদা কহি কৃষ্ণ হরি।।

অধিক লোকের সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত। নির্জনে বসে কৃষ্ণ নাম জপ

করবে। অনেকগুলি শৃগাল যেমন একসঙ্গে বসে ভেউ ভেউ করে, সেই রকম এক সঙ্গে অনেকে মিলে চীৎকার করলে বা হরি কৃষ্ণ বললেও কোন ফল হয় না, যদি মনে-মুখে এক না হওয়া যায়।

জীবের দুঃখ দোষ মোর হৃদয় বিদরে।

সর্ব জীবের পাপ প্রভু দেহ মোর শিরে।।

জীবের পাপ লঙ্ঘা মুই করি নরক ভোগ।

সকল জীবের প্রভু ঘুচাহ ভবরোগ।।

স্বয়ং মহাপ্রভু। কলির জীবকে দর্শন করে ব্যথিত হয়ে বলেছেন-হে প্রভু। জীবের দুঃখ আর সহ্য হয় না। সর্বজীবের পাপ প্রভু তুমি আমার মাথায় দাও। সর্বজীবের পাপ গ্রহণ করে আমি নরকে বাস করি, তাতে কোন দুঃখ নাই, তবু তুমি সকল জীবের ভবরোগ দূর কর।

সহজে নির্মল এই ব্রাহ্মণ হৃদয়।

কৃষ্ণের বসিতে এই যোগ্য স্থান হয়।।-চৈতন্য চরিতামৃত ব্রাহ্মণের হৃদয় জন্ম থেকেই সহজ সরল হয়। তাকে সদাচার দ্বারা নির্মল করতে হয়। নির্মল হৃদয়েই শ্রীকৃষ্ণের বসার অর্থাৎ অধিষ্ঠান হবার উপযুক্ত স্থান।

আচার, প্রচার, নামের কর দুই কার্য্য। তুমি সর্বগুরু, তুমি জগতের আর্য্য।।

-চৈতন্য চরিতামৃত (মধ্য খন্ড)

হরিনাম গ্রহণ করে বসে থাকলে চলবে না। সদাচার পালন করবে আর নাম প্রচার করে জীবকে শিক্ষাদান করবে।

তথাপি ভক্ত স্বভাব মর্যাদা রক্ষণ।

মর্যাদা পালন হয় সাধুর ভূষণ।।

কৃষ্ণভক্তের স্বভাব সকলের মর্যাদা রক্ষা করা। সকলকে সম্মান করাই সাধু ব্যক্তির অলঙ্কারস্বরূপ।

প্রভু কহে-বৈষ্ণব দেহ প্রাকৃত কভু নয়। অপ্রাকৃত দেহ ভক্তের চিদানন্দময়।।

-চৈতন্য চরিতামৃত (মধ্য খন্ড)

মহাপ্রভু বললেন-বৈষ্ণবের দেহ কখনও প্রাকৃত মনে করিও না। কৃষ্ণ ভক্তের দেহ অপ্রাকৃত এবং চিদানন্দময় জানবে।

নাম মাত্র ভেদ করে হিন্দুতে যবনে। পরমার্থে এক কহে কোরাণে পুরাণে।।

এক শুদ্ধ নিত্য বস্তু অখন্ড অধ্যায়।

পরিপূর্ণ হৈয়া বৈসে সবার হৃদয়।।

সে প্রভুর নাম গুণ সকল জগতে।
সকল বলেন মাত্র নিজ শাস্ত্রমতে।।

যে ঈশ্বর সেই পুনঃ সর্ব ভাব লয়।

হিংসা করিলেই তাহার হিংসা হয়।।

-চৈতন্য চরিতামৃত

ঈশ্বর এক, শুধুমাত্র নাম ভেদ। হিন্দু বলেন ভগবান, যবন বলে আল্লা। কিন্তু কোরাণ অথবা পুরাণে সেই একই পরমার্থের বিষয় লিখিত আছে। তিনি নিত্য, শুদ্ধ এবং অখন্ড ও অব্যয়। সবার হৃদয়ে তিনি বিরাজিত। সেই প্রভুর নাম এবং গুণ এই জগতে সকলে আপন আপন শাস্ত্রমতে বলে থাকেন। যে তাঁকে যেভাবে ভাবে, তিনি সেই ভাব গ্রহণ করেন। কাউকে হিংসা করলে বা কোনও ধর্মকে হিংসা করলে তাঁরই হিংসা করা হয়।

যে পাপিষ্ঠ এক বৈষ্ণবের পক্ষ হয়।

অন্য বৈষ্ণবের নিন্দে সেই হয় ক্ষয়।।-চৈতন্য চরিতামৃত

যে বৈষ্ণব এক বৈষ্ণবের পক্ষ হয়ে অপর বৈষ্ণবের নিন্দা করে তার বিনাশ হয়।

যত বিধি-নিষেধ সকলেই ভক্তি দাস।

ইহাত যাহার দুঃখ সেই যায় নাশ।।

বিষয় মদান্ধ সব এ মর্ম না জানে।

সূত ধন কুলমদে বৈষ্ণব না চিনে।।-চৈতন্য চরিতামৃত

বিধি-নিষেধ প্রভৃতি সব কিছুই ভক্তি দাস মাত্র। যার ভক্তিতে নিষ্ঠা নাই সেই বিনাশপ্রাপ্ত হয়। বিষয়ী ও অহঙ্কারী মানুষ এর মর্ম জানে না। তারা ধন, পুত্র, কন্যা এবং কুলশীলের অভিমানবশতঃ বৈষ্ণব চিনতে পারে না।