Скачать или смотреть শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ইতিহাস ।

১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসঃ পিছু ফিরে দেখা
_____________________________________

ছোটবেলা থেকে মুখস্ত করে এসেছি ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের গণহারে হত্যা করা হয়। কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট নয়, আরও বিস্তারিতভাবে দিনটা সম্পর্কে জানা দরকার।
.
• কী এই বুদ্ধিজীবী হত্যা?

পশ্চিম পাকিস্তানের করা বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী বুদ্ধিজীবীরা। এই ব্যাপারটিকেই অনিরাপদ ধরে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের কুবুদ্ধিজীবীরা তাঁদের সমূলে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়। তারা চিন্তা করেছিলো, একটা নবজন্ম নেওয়া রাষ্ট্রের বুদ্ধিমান মানুষগুলোকে মেরে ফেললে জাতিটা কোনোদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ মুক্তমনা আর মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ না থাকলে জাতি আগাবে কীভাবে?

সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়েই ১৪ ডিসেম্বরের উৎপত্তি।

যদিও যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাঙালী বুদ্ধিজীবী এবং দক্ষ পেশাজীবীদের হত্যা করার যজ্ঞ চলে আসছিলো, কিন্তু এই দিনে সেই যজ্ঞ মহামারীতে রূপ নেয়। শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, ডাক্তার, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক, রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবী... সবাইকে এদিন বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত টর্চার সেলে তাঁদের উপর চালানো হয় অত্যাচার। পরে অবধারিতভাবেই করা হয় হত্যা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই হত্যা সংঘটিত হয়েছিলো রায়েরবাজার আর মিরপুর বধ্যভূমিতে।
.
• পরিকল্পনাকারীঃ

পূর্ব পাকিস্তানের মিলিটারি উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান এই কুৎসিত পরিকল্পনার হোতা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গভর্নরের বাসভবন হতে ফরমানের একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয় যেখানে ছিলো বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের নামের লিস্ট। এই লিস্টের কথা ফরমান নিজেও স্বীকার করেছে যদিও সে "লিস্টটি গণহত্যার জন্য বানানো হয়েছিলো" - এই ব্যাপারটা অস্বীকার করে গেছে।

পাকিস্তানের প্রাক্তন আমলা আলতাফ গওহরও এই লিস্টের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি ফরমানকে অনুরোধ করেছিলেন যেন লিস্ট থেকে সে আলতাফের একজন বন্ধুকে বাদ দেয়। ফরমান সেই অনুরোধ আলতাফের সামনেই রক্ষা করেছিলো।
.
• পরিসংখ্যানঃ

বাংলাপিডিয়া অনুযায়ী, নিম্নের পরিসংখ্যানটি ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ডকে নির্দেশ করে –
১। শিক্ষাবিদ – ৯৯১ জন
২। ডাক্তার – ৪৯ জন
৩। আইনজীবী – ৪২ জন
৪। সাংবাদিক – ১৩ জন
৫। সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী এবং প্রকৌশলী – ১৬ জন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষগুলোর মুখ কালো কাপড়ে মুড়ে টর্চার সেলে নিয়ে যাওয়া হতো। বেশীরভাগের মৃত্যু ঘটেছে বেয়োনেটের এলোপাথাড়ি আঘাতে। বধ্যভূমিতে খুঁজে পাওয়া মৃতদেহগুলোর চোখ এবং হাত বাঁধা ছিলো, সারা দেহ ছিলো ক্ষত বিক্ষত এবং বুক, মাথা অথবা দেহের পেছনে ছিলো বুলেটের ক্ষত।
.
• কারা অংশ নেয়?

মূলত আল বদর বাহিনী। তাদের সাহায্য করেছিলো পাক আর্মি।
যারা জানেন না, তাদের জ্ঞাতার্থে – মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আশরাফুজ জামান খান এবং চৌধুরী মুইন উদ্দিন ছিলো আল বদরের মাথা।
যেহেতু পাক আর্মির বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের ভালোভাবে চেনার কথা না, তাই তাদের সহযোগী বদর বাহিনী এই মহান দায়িত্বটা গ্রহণ করেছিলো। আর মেজর জিয়ার শাসনামলে এই বাহিনীর প্রত্যেককে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিলো।

১৯৭২ সালের ৩ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, “আল বদরের উদ্দেশ্য ছিলো, যারা পাকিস্তান হতে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ অমুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, তাঁদেরকে গোড়াসহ উৎপাটন করা।”
______________________________________
লিখেছেনঃ নির্ঝর রুথ ঘোষ।