পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রায় অর্ধশত বছর হতে চললেও দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি হয়নি।
যদিও বুধবারের এক ফোনালাপের বরাতে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সাথে গভীর সম্পর্ক চায় পাকিস্তান।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের চোখে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রকাশ্য অবস্থান এবং বিচারের বিরোধিতা করায় দুই দেশের সম্পর্ক একবারে তলানিতে রয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে, এমনটিই ধারণা পাকিস্তানে নিযুক্ত সাবেক বাংলাদেশের হাই কমিশনার সোহরাব হোসেনের
তিনি বলেন, ভারতের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের। আবার দুদেশের সাধারণ নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্বও রয়েছে। তবে এগুলোর পরও ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা এখনো পর্যন্ত হয়নি।
"পাকিস্তানের সাথে ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্ক। ভারতের সামনে পাকিস্তান কোন শক্তিই না, তবে সমস্যা হচ্ছে পাকিস্তানের সাথে চীন রয়েছে।"
ভারতের সাথে চীনের সম্পর্ক বৈরী হয়ে গেছে। চীন চেষ্টা করছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে যে ভারত বিরোধিতা রয়েছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করা।
দুদেশের সম্পর্কে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ক্ষত এখনো বড় কাঁটা হয়ে আছে।
ছবির উৎস,AFP
ছবির ক্যাপশান,
দুদেশের সম্পর্কে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ক্ষত এখনো বড় কাঁটা হয়ে আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক একরকম, আবার ভারতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক আরেক রকম। চীনের বিষয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান এক মেরুতে থাকলেও ভারতের সাথে সে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই দুটি দেশ বিপরীত মেরুতে রয়েছে।
"এই দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক নয়, বরং দ্বন্দ্ব রয়েছে।"
২. বাণিজ্য
বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব রয়েছে চীনের। আর পাকিস্তানের সমর্থনে রয়েছে চীন। দেশটির সাথে বাংলাদেশেরও সুসম্পর্ক চলছে।
এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক গভীর করতে পারে কি?
আফসান চৌধুরীর বক্তব্য, "হবে না। কারণ পাকিস্তানকে আসলে আমাদের কোন দরকার নাই।"
"পাকিস্তানের সাথে ট্রেড হবে না। আমাদের ট্রেড স্বাভাবিকভাবেই হবে ভারতের সাথে।"
তিনি বলেন, "পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য নাই, পড়তে যাই না, অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্যও যাই না। তাহলে সম্পর্ক উন্নয়ন করে লাভ কী?"
এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের আমদানি বিষয়ক সম্পর্ক থাকলেও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এসব দেশের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং বাংলাদেশ রপ্তানি করে থাকে ইউরোপের দেশগুলোতে।
৩. বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পাকিস্তানের বিরোধিতার প্রতি সমর্থন রয়েছে।
মি. চৌধুরীর চোখে, "এখানে পাকিস্তানের দালালি করেছে এর চেয়ে বড় পাপ আর বাংলাদেশে নাই। যে দেশকে আমরা রাজনৈতিকভাবে পাপিষ্ঠ দেশ বলে মনে করছি, অন্য সব রাজনৈতিক দল, বিএনপি-কে বলছি পাকিস্তানপন্থী, জামাতকে বলছি পাকিস্তানপন্থী, যুদ্ধাপরাধীদের বলছি সবই তো পাকিস্তানকেন্দ্রিক। সেখানে পাকিস্তানের সাথে কিভাবে সুসম্পর্ক হবে আমাদের?"
তিনি মনে করেন ইমরান খানের সাথে শেখ হাসিনার কথা হলেই সেটি সুসম্পর্ক বয়ে আনবে না।
৪. ক্ষমা প্রার্থনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই চেয়েছে যে পাকিস্তান তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাক। কিন্তু পাকিস্তান সেটা কখনো করেনি।
১৯৭৪ সালে সিমলা চুক্তির পর যে আলোচনা শুরু হয়েছিল তাতে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, আর বাংলাদেশ এবং ভারত পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের ফেরত পাঠানো শুরু করে।
এই ঘটনার কারণেই পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে এবং দেশটির কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিল।
এক ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় সবার সম্মতিতে যে চুক্তি হয়, তাতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
চুক্তির বিবরণ অনুযায়ী, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের জনগণের কাছে অনুরোধ করেছেন যেন তারা তাদের (পাকিস্তানকে) ক্ষমা করে দেন এবং অতীতের কথা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যান।
তবে বাংলাদেশ বলে যে, ওই ক্ষমা চাওয়া যথাযথ হয়নি।
"ওরা দুঃখ প্রকাশ করেছিল, ক্ষমা চায়নি", বলেন আফসান চৌধুরী।
"ভূট্টো দুঃখ প্রকাশ করেছিল। কারণ ওদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশ ছিল না। এটা ছিল ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়া বলেছিল যে তুমি অন্তত কিছু বল, তা না হলে আমরা তোমার সাথে কী করবো।"
মি. চৌধুরীর মতে, একাত্তরের এর যুদ্ধটা আমাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হলেও সেটা ভারত কিংবা পাকিস্তান কারো জন্যই মুক্তিযুদ্ধ ছিল না।
পাকিস্তানের পক্ষে মাফ চাওয়া সম্ভব না। কারণ মাফ চাইতে হলে সেনাবাহিনীর হয়ে মাফ চাইতে হবে। আর পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থায় এখনো অনেক বড় অংশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
"সেই সেনাবাহিনীর হয়ে কেউ ক্ষমা চাইবে, কোন সিভিলিয়ান বা আর্মি, সে তো টিকতে পারবে না। তাই ক্ষমা চাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না," তিনি বলেন।
জুলফিকার আলী ভূট্টো বলেছিলেন যে, যুদ্ধে এতো বেশি মানুষ মারা গিয়েছে তার জন্য তিনি খুবই দুঃখিত। কিন্তু মাফ করে দিয়েন-এই কথাটি কাঠামোগতভাবে বলা সম্ভব নয়।
৫. আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিক
বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি বা উর্দুভাষী জনগণের সংখ্যা ৫ লাখের ওপরে, যাদের মধ্যে সাড়ে তিন লাখের বসবাস বিভিন্ন এলাকায় শরণার্থী ক্যাম্পে।
যেসব পাকিস্তানি নাগরিক বাংলাদেশে আটকে পড়ে তাদেরকে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার বিষয়ে সুযোগ দেয়া হয়েছিল স্বাধীনতার পর পর।
কিন্তু সে বিষয়টিও বাস্তবতা পায়নি। বাংলাদেশ থেকে নিজেদের আটকে পড়া নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়নি পাকিস্তান।
এ বিষয়ে রুকসানা কিবরিয়া বলেন, "১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের পর যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাতে পাকিস্তানে একটি বিশাল মুহাজির জনগোষ্ঠী রয়েছে। বিশেষ করে
Информация по комментариям в разработке