আব্দুর রাজ্জাক বলছে ফজরের আজান হলেও সাহরি খাওয়া যায়।
যারা বলে ফজরের আজান হলেও সাহরি খাওয়া যায় তাদের কথা সঠিক না।তারা সঠিকটা না জেনেই আজানের সময় সাহরি খেয়ে নিজেদের রোজা নষ্ট করতেছে।
আল্লাহ কুরআন কারিমে বলেন,
وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ [٢:١٨٧]
আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। [সূরা বাকারা-১৮৭]
(বুখারী- ৬১৭) উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফজরের পূর্বে তাহাজ্জুদ আযান ছিল এই তাহাজ্জুদের আজানকে পুজি করে শায়খ (আব্দুর রাজ্জাক বলছে), ফজরের আজান হলেও সাহরি খাওয়া যায় ।
যারা বলে আজান হলেও সাহরি খাওয়া যায় তাদের কথা সঠিক না।তারা সঠিকটা না জেনেই আজানের সময় সাহরি খেয়ে নিজেদের রোজা নষ্ট করতেছে।
(বুখারী- ৬১৭)
৬১৭. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলাল (রাযি.) রাত থাকতেই আযান দেন। কাজেই ইবনু উম্মে মাকতূম (রাযি.) আযান না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা (সাহরীর) পানাহার করতে পার। ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) বলেন, ইবনু উম্মে মাকতূম (রাযি.) ছিলেন অন্ধ। যতক্ষণ না তাঁকে বলে দেওয়া হত যে, ‘ভোর হয়েছে, ভোর হয়েছে’-ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না। (৬২০, ৬২৩, ১৯১৮, ২৬৫৬, ৭২৪৮; মুসলিম ১৩/৮, হাঃ ১০৯২, আহমাদ ৪৫৫১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৯০)
এই হাদিসে পরিষ্কার ভবে ও কুরআনের আয়াত থাকার পরেও শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মানুষকে বিপদগামী করছে।
উপরোক্ত হাদীসে উদ্দেশ্য হল সাহরীর আজান বা ফজর তথা সুবহে সাদিক শুরু হবার আগের তাহাজ্জুদের আজান। যা হযরত বেলাল রাঃ সুবহে সাদিক হবার আগে সবাইকে জাগানোর জন্য দিতেন।
সুতরাং উক্ত হাদীস পেশ করে সুবহে সাদিকের পরও খানা খাওয়ার বৈধতা প্রমাণ করা যায় না। যদি কেউ সুবহে সাদিকের পর ফজরের আজান দেবার সময়ও খানা খায়, তাহলে তার রোযা অবশ্যই নষ্ট হয়ে যাবে। তার রোযাটি হবে না
.*. আমরা সুনানে আবু দাউদের সেই হাদিস নিয়ে আলোকপাত করবো যে হাদিসের মাধ্যমে কতিপয় সালাফী ভাইয়েরা এ বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে 'যে ফজরের আযান হয়ে গেলেও সাহরী খাওয়া চালিয়ে যেতে পারবে।'
দলিল হিসাবে তাঁরা সুনানে আবু দাউদের এই হাদিসটি পেশ করতেছে,'হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন,
অর্থ: ‘তোমাদের কেউ যখন আজান শোনে, আর এ সময় তার হাতে খাবারের প্লেট থাকে, সে যেন আজানের কারণে খাবার বন্ধ না করে, যতক্ষণ না সে পেট ভরে খেয়ে নেয়।’ সুনানে আবু দাউদ,হাদিস নং ২৩৫০
সেই কথিত শায়খগন এই হাদিসের অনুবাদের ক্ষেত্রে জালিয়াতিরও আশ্রয় নেন নিজেদের পক্ষ্য থেকে অনুবাদে 'সাহরী খাবার সময়' অতিরিক্ত বৃদ্ধি করার মাধ্যমে।
তারা অনুবাদ করে 'রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ( সাহরী খাবার সময় ) তোমাদের কেউ ফজরের আযান শুনতে পেলে সে যেন হাতের বাসন রেখে না দেয় । বরং নিজের প্রয়োজন সেরে নেয় । সহীহ আবূ দাঊদ ২৩৫০
অথচ হাদিসের মূল মতনে দেখুন তাতে 'সাহরী খাবারের সময়' বাক্য কোথাও লেখা নেই।
عن أبي هريرة قال قال رسول الله ﷺ إذا سمع أحدكم النداء والإناء على يده فلا يضعه حتى يقضي حاجته منه
অর্থ: ‘তোমাদের কেউ যখন আজান শোনে, আর এ সময় তার হাতে খাবারের প্লেট থাকে, সে যেন আজানের কারণে খাবার বন্ধ না করে, যতক্ষণ না সে পেট ভরে খেয়ে নেয়।’ সুনানে আবু দাউদ,হাদিস নং ২৩৪২
.*. যাইহোক_মূল_আলোচনায়_যাই, মুহাদ্দিসীনে কেরাম সুনানে আবু দাউদের সেই হাদিসের ব্যাখ্যায় নিম্নোক্ত কথা বলেছেন:
সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় "نداء"(নিদা) শব্দটি উল্লেখ রয়েছে, যার অর্থ নামাজের জন্য ডাকা,আহ্বান করা।
ক. এখন সেই "نداء"(নিদা) তথা ডাকা দ্বারা মাগরিবের নামাযের ইকামতও উদ্দেশ্য হতে পারে যে,যখন কেউ রোজা রাখে এবং মাগরিবের নামাযের ইকামত এমন অবস্থায় দেওয়া হয় যে তার সামনে খানা হাজির থাকে তাহলে সে যেন তার প্রয়োজন পূরণ করে নেয়।
এই অর্থের সমর্থন পাওয়া যায় সহীহ ইবনে হিব্বানের বর্ণনায়
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যখন মাগরিবের নামাযের ইকামত দেয়া হয় এবং তোমাদের কেউ রোযাদার হয়, তখন সে যেন মাগরিবের নামাযের আগেই খেয়ে নেয় এবং রাতের খাবারের জন্য তাড়াহুড়া না করে। সহীহ ইবনে হিব্বান ৫/৪২২।
এ কারণেই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) যে দিন রোজা রাখতেন এবং রাতের খাবার যদি এসে যেতো তাহলে প্রথমে খাবার খেতেন তারপর নামায পড়তেন।
এমনটায় রয়েছে সহীহ ইবনে হিব্বানে
সহীহ ইবনে হিব্বান ৫/৪২০
খ. হাদিসের সেই "نداء"(নিদা) তথা ডাকা দ্বারা মাগরিবের আযানও উদ্দেশ্য হতে পারে এবং যদি আযান উদ্দেশ্য হয় তাহলে হয়তো মাগরিবের আযান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যে, যদি পাত্রটি অন্য কোন উদ্দেশ্যে হাতে নেয়া হয়, এমতাবস্থায় আযান হয়ে যায়, তাহলে এখন পাত্রটি রাখার পূর্বে ইফতার করে ফেলো,দেরি করবে না।
মিরকাতুল মাফাতিহে এসেছে,
ইবনে হাজার রহ. আল্লামা তীবী রহ.এর অনুসরণে ইঙ্গিতে বলেন,যে এই হাদীসে ইফতার দ্রুত করার উদ্দেশ্য নেওয়াও সহীহ হবে। অর্থাৎ উদ্দেশ্য এই হবে যে, যখন তোমাদের কেউ মাগরিবের আযান এমতাবস্থায় শুনবে যে তার হাতে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে পাত্র থাকে, তখন সে যেন তা দ্বারা দ্রুত ইফতার করে এবং সেটা রাখা পর্যন্ত ইফতার কে বিলম্বিত না করে। মিরকাতুল মাফাতিহ ৪/১৩৮৪
গ. সেই "نداء"(নিদা) তথা ডাকা দ্বারা হযরত বিলাল (রা.)-এর সেই আযানও উদ্দেশ্য হতে পারে যা তিনি সুবহে সাদিক হওয়ার আগে রাতে আযান দিতেন। তখন উদ্দেশ্য হবে যে,যদি বিলাল রা. এর আযান হয় এবং কেউ সেহরি খেতে থাকে তাহলে সে সেহরি খাওয়া বন্ধ করবে না বরং আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রা. আযান না দেওয়া পর্যন্ত খেতে থাকবে।
সুতরাং এখনও যদি কেউ সুবহে সাদিক হওয়ার আগেই আযান দেয় এবং সেহরি খাওয়ারত ব্যক্তি জানে যে এখনো সুবহে সাদিক হয়নি, তাহলে সে সুবহে সাদিক পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া চালিয়ে যেতে পারে।
Информация по комментариям в разработке