হবিগঞ্জ জেলাঃ
হবিগঞ্জ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের একটি জেলা। ১৯৮৪ সালে হবিগঞ্জকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। এর আগে ১৮৭৪ সাল থেকে হবিগঞ্জ মহকুমা সিলেট জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। হবিগঞ্জ এর পূর্ব নাম ছিল হাবিবগঞ্জ।
অবস্থান ও আয়তনঃ
হবিগঞ্জ জেলার আয়তন ২,৬৩৬.৫৮ বর্গ কিলোমিটার। জেলার উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলা এবং পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলা অবস্থিত।
নামকরণ ও ইতিহাসঃ
সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অনুসারী সৈয়দ নাছির উদ্দিন (রঃ) এর পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত খোয়াই, করাঙ্গী সুতাং, বিজনা, রত্না প্রভৃতি নদী বিধৌত হবিগঞ্জ একটি ঐতিহাসিক জনপদের নাম । ঐতিহাসিক সুলতানসী হাবেলীর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সুলতানের অধঃস্তন পুরুষ সৈয়দ হেদায়েত উল্লাহর পুত্র সৈয়দ হবিব উল্লাহ খোয়াই নদীর তীরে একটি গঞ্জ বা বাজার প্রতিষ্ঠা করেন । তাঁর নামানুসারে হবিবগঞ্জ থেকে কালক্রমে তা হবিগঞ্জে পরিণত হয় । ইংরেজ শাসনামলে ১৮৬৭ সালে হবিগঞ্জকে মহকুমা ঘোষণা করা হয় সর্বশেষ ১৯৮৪ সালের ০১ মার্চ ( ১৭ ফাল্গুন ১৩৯০ বাংলা) জেলায় উন্নীত হয় ।
উপজেলা সমূহঃ
০৯ টি (হবিগঞ্জ সদর, লাখাই, মাধবপুর, চুনারুঘাট, বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ)।
সংসদীয় আসনঃ
২৩৯ হবিগঞ্জ-১ (বাহুবল-নবীগঞ্জ)-জনাব আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী
২৪০ হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ)-জনাব এ্যাড. ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল
২৪১ হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ)-আলহাজ্ব এডভোকেট মো: আবু জাহির
২৪২ হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট)-জনাব ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন
অর্থনীতিঃ
বর্তমান সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ করিডোরে পরিণত হয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। ভৌগোলিক অবস্থার কারণে বাণিজ্যের নানা খাতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে এক সময়ে পিছিয়ে থাকা এই জনপদটি। মূলত গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এরই মধ্যে শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে হবিগঞ্জ। জেলার মাধবপুর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের শিল্পকারখানা। জেলার গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল হচ্ছে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। জেলায় মোট ২৪ টি চা বাগান এবং ০৩ টি রাবার বাগান রয়েছে। জেলায় ০৩ টি গ্যাস ফিল্ড রয়েছে।
১) রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড- আবিষ্কার-১৯৬০ সাল।
২) হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড- আবিষ্কার-১৯৬৩ সাল।
৩) বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড- আবিষ্কার-১৯৯৮ সাল।
শিক্ষা ব্যবস্থাঃ
জেলার শিক্ষার হারঃ ৪৫%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জ, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, জেলার সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় যা ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।
নদ-নদীঃ
কুশিয়ারা, খোয়াই, সুতাং, রত্না, শুটকী, সোনাই, করাঙ্গী, ঝিংড়ী, ভেড়ামোহনা, বরাক, বিজনা প্রভৃতি।
ঐতিহ্যঃ
হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং শুধু দেশের নয় এটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এখানে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার। ঐতিহাসিক কমলারানীর দীঘি, লক্ষীবাওর জলাবন, ৬শ’ বছরের প্রাচীন বিথঙ্গলের আখড়া, প্রাচীন মসজিদসহ রয়েছে অনেক পুরাকীর্তি। গ্রামের চারপাশ বেষ্টিত পরিখাকে চমৎকার ‘লেক’সহ পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা । সাধারণত কয়েকটি পাড়া বা মহল্লা নিয়ে গঠিত হয় গ্রাম। কিন্তু এই সংজ্ঞা অচল বানিয়াচং গ্রামের ক্ষেত্রে। ১২০টি মহল্লা নিয়ে গঠিত বানিয়াচং গ্রামে সোয়া লাখ মানুষের বসবাস। ৩২ দশমিক ৪৩ বর্গমাইল আয়তনের বিশাল ভুখণ্ডটি মানুষের কাছে ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
দর্শনীয় স্থানঃ
হবিগঞ্জ জেলার অন্যতম কিছু দর্শনীয় স্থান হল:
সৈয়দ নাসির উদ্দিনের মাকবারা
মশাজানের দিঘী
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
বিতঙ্গল আখড়া - বৈষ্ণব ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান (বানিয়াচং)
বানিয়াচং রাজবাড়ি - বানিয়াচং
চা বাগান
আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জি - বাহুবল
রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য - চুনারুঘাট
তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ- মাধবপুর
ফয়েজাবাদ হিল বধ্যভূমি - বাহুবল
তেলিয়াপাড়া চা বাগান - মাধবপুর
বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড - নবীগঞ্জ
শংকরপাশা শাহী মসজিদ - হবিগঞ্জ সদর
বাল্লা স্থল বন্দর - চুনারঘাট (বাংলাদেশ ২৩ নং সীমান্ত স্থল বন্দর)
রাধানন্দ জমিদার বাড়ি (হাতিরথান জমিদার বাড়ি)
দি প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট- পুটিজুরী,বাহুবল।
লক্ষ্মীবাওর সোয়াম্প ফরেস্ট - বানিয়াচং
কালারডুবা পর্যটন কেন্দ্র - বানিয়াচং
গ্রিনল্যান্ড পার্ক - চুনারুঘাট
ফ্রিডম ওয়ার্ল্ড পার্ক - হবিগঞ্জ
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
বিখ্যাত সূফি সাধক- মাওলানা আব্দুল হামিদ
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা- বিপিন চন্দ্র পাল
বাংলার প্রথম এটর্নি জেনারেল- তারাকিশোর চৌধুরী
বিখ্যাত ভূপর্যটক- রামনাথ বিশ্বাস
মুক্তিযুদ্ধের চীফ অব স্টাফ- মেজর জেনারেল এম এ রব
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেক্টর কমান্ডার-মেজর জেনারেল (অবঃ) সি আর দত্ত, বীর উত্তম
আধুনিক বাংলা সাহিত্যিক ও রম্যলেখক- সৈয়দ মুজতবা আলী
জাতীয় ইতিহাসবিদ ও বিভাগীয় কমিশনার- সৈয়দ মুর্তজা আলী
বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি (২য়)-সৈয়দ এ. বি. মাহমুদ হোসেন
বুয়েটের প্রথম উপাচার্য- ডক্টর এম এ রশীদ
সমাজসেবক, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা- স্যার ফজলে হাসান আবেদ
আইনজীবী ও পরিবেশবিদ- সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
রাজনীতিবিদ- এনামুল হক মোস্তফা শহীদ
জগৎজ্যোতি দাস (১৯৪৯-১৯৭১) -
রাজনীতিবিদ, তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য- সৈয়দ মহিবুল হাসান
সাবেক প্রধান বিচারপতি- সৈয়দ জে. আর. মোদাচ্ছির হোসেন -
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর- মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী-মাহবুব আলী
ফুটবলার, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, মানবসেবক এবং হবিগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন
অর্থনীতিবিদ- ড. রেজা কিবরিয়া
বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার- জাকের আলী অনিক
কন্ঠশিল্পী আশিক
Информация по комментариям в разработке