#snakebites
সাপের সাত - সতেরো ও বিগ ফোর
দীপক চক্রবর্তী
গোখরো
Spectacled Cobra
বৈজ্ঞানিক নাম -- Naja naja
আঞ্চলিক নাম --
খরিশ, আলগোখরো, কালীগোখরো, দুধে গোখরো, তঁপ, বিরিহা গোখরো, তেতুলিয়া,খড়মপাইয়া, বাসুকী, গোমা, ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।
আকৃতি --
একবার দেখলেই সাপটিকে চেনা খুব সহজ। রাস্তা ঘাটে, বাসস্ট্যান্ডে, স্টেশন চত্তরে, মাঝে মধ্যেই সাপুড়েদের ঝাঁপির ভিতর থেকে ফণা তুলে সাপুড়েদের বাঁশির দিকে লক্ষ্য করে ধীরে ধীরে এই সাপটিকে দুলতে দেখা যায়। (অবশ্য বর্তমানে এভাবে সাপের খেলা দেখানো সম্পূর্ণ বেআইনি।) সাপটিকে চেনার সহজ উপায় ফণার পিছনে গরুর ক্ষুরের মতো চিহ্ন থাকে। ঠিক যেনো ' U ' আকৃতির এবং দু'পাশে ফুটকি মতো। গায়ের রঙ সাধারণত বাদামী হলুদ, কালচে হলুদ, ধূসর কালো, কালচে চকলেট। পাঁচ থেকে ছয় ফুট মতো লম্বা হয়। মুখের সামনে উপরে ছোট দুটি বিষ দাঁত থাকে। আর বিষগ্রন্থি দেখতে ঠিক যেনো বাদাম আকৃতির যা চোখের পিছনে অবস্থিত। এদের আঁশ চকচকে এবং মসৃণ।
বাসস্থান --
ধান ক্ষেত, ইঁদুরের গর্ত, শস্যের গোলা, পুরোনো ইটের পাঁজা, উইঢিবি,ভাঙ্গা বাড়ি, মাটির ঘর, বিচলির গাদা, প্রভৃতি স্থানই এদের আনাগোনা বেশি লক্ষ্য করা যায়।
খাদ্য --
শুরুতেই জেনে রাখা ভালো সাপেদের খাদ্য তালিকায় কিন্তু দুধ নেই। এটা আমাদের নিছক বিশ্বাস। গোখরোর প্রিয় খাদ্য হলো ইঁদুর, ব্যাঙ, কীটপতঙ্গ, গিরগিটি, টিকটিকি, ইত্যাদি।
স্বভাব --
সাপটি মুলত নিশাচর। রাত্রিকালীন চলাফেরায় খুবই পটু। এবং দিনের চেয়ে রাতে ভালো দেখতে পায় বলে সঠিক নিশানায় আঘাত আনতে পারে। সেকরণে গ্রামেগঞ্জে রাত্রি বেলা অন্ধকারে এই সাপটির কামড়ে অনেক মানুষই আক্রান্ত হন। এর বিষের ধরণ নিউরোটক্সিন। স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া নাশ করে। ১৫ থেকে ১৮ মিলিগ্রাম মারণ মাত্রার এই সাপের বিষ কোনো মানুষের শরীরে রক্তে মিশলে উপযুক্ত বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা না হলে মৃত্যু অবধারিত।
কেউটে
Monocied Cobra
বৈজ্ঞানিক নাম -- Naja kaouthia
আঞ্চলিক নাম --
কালীনাগ, কালকেউটে,আলকেউটে,পদ্মকেউটে, মাকড়া,গড়িভাঙা, গুমোকেউটে, আলাদ, ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।
আকৃতি --
গোখরোর মতো ফনা আছে। এই সাপটিকেও একবার দেখলেই চেনা খুব সহজ। কেউটে সাপটিকে চেনার সহজ উপায় হলো এই সাপটির ফণাটি গোখরো থেকে সামান্য ছোটো এবং গোলাকার। ফণার পিছনে একটি গোল চিহ্ন থাকে ঠিক যেনো খড়মের মতো। গায়ের রঙ সাধারণত বাদামী হলুদ, কালচে হলুদ, ধূসর কালো, কালচে চকলেট এবং ধুসর বা কালোর সঙ্গে হলদে - কালো ডোরা কাটা মত লক্ষ্য করা যায়। সাড়ে চার ফুট থেকে পাঁচ ফুটের মতো লম্বা হয়। মুখের সামনে উপরে ছোট দুটি বিষ দাঁত থাকে। এদের আঁশও চকচকে এবং মসৃণ।
বাসস্থান --
পাকাধান ক্ষেত, ইঁদুরের গর্ত, শস্যের গোলা, পুরোনো ইটের পাঁজা, উইঢিবি,ভাঙ্গা বাড়ি, মাটির ঘর, বিচলির গাদা, গাছের কোটর, কাশফুল বা ছনের বন প্রভৃতি স্থানই এদের আনাগোনা বেশি লক্ষ্য করা যায়।
খাদ্য --
সাপেদের খাদ্য তালিকায় দুধ নেই আগেই উল্লেখ করেছি। এটা আমাদের নিছক বিশ্বাস। কেউটের প্রিয় খাদ্য হলো ইঁদুর, ব্যাঙ, টিকটিকি। এছাড়াও মাছ, ছোট সাপ, ধরে খায়। স্বভাব --
এই সাপটিও মুলত নিশাচর। রাত্রিকালীন চলাফেরায় খুবই পটু। এবং দিনের চেয়ে রাতে ভালো দেখতে পায় বলে সঠিক নিশানায় আঘাত হানতে পারে। সেকরণে গ্রামেগঞ্জে রাত্রি বেলা অন্ধকারে এই সাপটির কামড়ে অনেক মানুষই আক্রান্ত হন। এর বিষের ধরণ নিউরোটক্সিন। স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া নাশ করে। ১৫ থেকে ১৬ মিলিগ্রাম মারণ মাত্রার এই সাপের বিষ কোনো মানুষের শরীরে রক্তে মিশলে উপযুক্ত বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা না হলে মৃত্যু অবধারিত।
চন্দ্রবোড়া
Russell’s Viper
বৈজ্ঞানিক নাম -- Daboia russelii
আঞ্চলিক নাম --
পুটুলিয়াবোড়া, কেউরিয়াবোড়া, রক্তবোড়া, সৌলিয়াবোড়া, বাঘুয়াবোড়া, চন্দনবোড়া, উলুবোড়া, রক্তছোটে, ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।
আকৃতি --
এদের দেহ মোটা সোটা এবং ভারি ও খসখসে। লেজের দিকটা হঠাৎই সরু হয়ে গেছে। মাথা ত্রিকোণ এবং ঘাড়ের থেকে চওড়া। এই সাপটিকেও একবার দেখলেই খুব সহজেই চেনা যায়। চন্দ্রবোড়া চেনার জন্য সর্প বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার পরে না। যতদুর জানা যায় ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে ডঃ পি রাসেল প্রথম চন্দ্রবোড়া সম্বন্ধে বিস্তৃত বিবরণ দেন এবং তাঁর নাম অনুসারেই চন্দ্রবোড়াকে রাসেল ভাইপার বলা হয়। চন্দ্রবোড়ার পীঠের দিকটা হলদে বাদামী বা মেটে হলুদের মতো দেখতে। পীঠের উপর তিন সারি গোল গোল কালো বা গাঢ় বাদামী ছোপ থাকে। প্রায় চার সাড়ে ফুট মতো লম্বা হয়।
বাসস্থান --
পুরোনো বাড়ি, ঝোপঝাড়, ইঁদুরের গর্ত, দীর্ঘদিন ধরে পরে থাকা ইটের স্তুপ, বেনাবন, ও কাঁটাজঙ্গলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। ইদানিং কখনো কখনো খাবারের সন্ধানে রাত্রিবেলা এমনকি দিনের বেলাতেও বসতবাড়িতে দেখা মিলছে।
খাদ্য --
এদের প্রিয় খাদ্য ব্যাঙ, টিকটিকি, ইঁদুর, গিরগিটি, পাখি।
স্বভাব --
চন্দ্রবোড়া ভীষণ অলস প্রকৃতির হলেও মানুষের পক্ষে মারাত্মক বিপদজনক কারণ ফণাহীন এই সাপটি নিজের শরীর সহ মাথাটিকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যে কোনো মুহূর্তে কামড়ে দিতে পারে। এই সাপ গাছে উঠতে পারে। তবে চন্দ্রবোড়া সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। এর বিষ হেমাটোক্সিন মানব শরীরের রক্ত তঞ্চনকে নষ্ট করে দেয়। ৪২ মিলিগ্রাম বিষ যদি মানুষের রক্তে মিশে যায় তবে খুব তাড়াতাড়ি বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা শুরু না হলে মৃত্যু অবধারিত। চন্দ্রবোড়ার বিশেষ একটি স্বভাব হলো অন্যান্য বিষধর সাপেদের থেকে এর অবস্থান এই সাপটি নিজে থেকে জানিয়ে দেয়। সাপটির কাছাকাছি মাটিতে কোনো কম্পন অনুভূতি হলে বা সামনা সামনি কেউ এসে পরলে ফোঁ-ও-ও- ও স্ স্ স্ অনেকটা এরকম শব্দ শোনা যায়। ঠিক যেনো অনেকটা প্রেসার কুকারের হুইসেলের শব্দের মতো। কালাচ নিয়ে বিস্তারিত অনত্র লেখা আছে দেখে এখানে আর সময় নষ্ট করে লিখলাম না।
Информация по комментариям в разработке