Скачать или смотреть ফিলিস্তিন এর ইতিহাস: অন্ধকার উচ্ছেদ করল এই নতুন পরিবর্তনের সময়

ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইন, সরকারিভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নামে পরিচিত । মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের নির্বাসনে ঘোষিত একটি রাষ্ট্র, যেখানে পনের নভেম্বর উনিশ শত আটাশি সালে আলজিয়ার্স শহরে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) এবং প্যালেস্টাইন জাতীয় পরিষদ (পিএনসি) একপাক্ষিক ভাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল । উনিশ শত আটাশি সালে ঘোষণার সময়ে কোনো অঞ্চলেই পিএলওর নিয়ন্ত্রণ ছিল না । যদিও তারা যে অঞ্চলগুলি দাবি করেছিল আন্তর্জাতিকভাবে সেইগুলি ইসরাইলের দখলে রয়েছে । উনিশ শত সাত চল্লিশ সালে জাতিসংঘ দ্বারা প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন বিভাগ যেভাবে প্রস্তাবিত হয়েছিল, সেখানে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড (গাজা ভূখণ্ড ও পশ্চিম তীর) ছাড়াও ইসরায়েল শাসনাধীন কিছু অঞ্চল এবং জেরুজালেমকে ঘোষিত রাষ্টের রাজধানী হিসাবে দাবি করে তারা।

উনিশ শত চোয়াত্তর সালে আরব লীগ শীর্ষ বৈঠকে স্থির হয়েছিল, পিএলও ফিলিস্তিনের জনগণের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি এবং তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠিত আহবান জানিয়েছিল। বাইশ নভেম্বর উনিশ শত চোয়াত্তর, থেকে একটি জাতি হিসেবে পিএলওকে " রাষ্ট্রহীন-সত্ত্বা " রূপে পর্যবেক্ষক অবস্থা রাখা হয়েছিল। যারা কেবলমাত্র জাতিসংঘে তাদের বক্তব্য রাখতে পারতেন, কিন্তু ভোট দেবারর কোনো ক্ষমতা ছিল না।

ফিলিস্তিন সমস্যার প্রেক্ষাপট,

ভূমধ্যসাগরের পূর্বে দশ হাজার চার শত উনত্রিশ বর্গমাইলব্যাপী ফিলিস্তিন দেশটি ছিল উসমানীয় খেলাফতের অধীন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যারা ছিল ব্রিটেন-বিরোধী জোটে ৷ তখন যুদ্ধ জয়ে ফিলিস্তিনদের সহযোগিতা পাওয়ার আশায় উনিশ শত সতের সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোর যুদ্ধে জয়ী হলে এই ভূমিতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে বলে আশ্বাস দেন ৷ যা ইতিহাসে "বেলফোর ঘোষণা" হিসেবে পরিচিত ৷ যেহেতু ফিলিস্তিন অঞ্চলে আরবীয়রা ছিল ইহুদিদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি, সেহেতু ঘোষণাটি তাদের অনুকূল বলেই ধরে নেয় স্থানীয় আরবীয়রা ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের প্রয়োজনে দুর্লভ বোমা তৈরির উপকরণ কৃত্রিম ফসফরাস তৈরি করতে সক্ষম হন ইহুদি বিজ্ঞানী ড. হেইস বাইজম্যান ৷ ফলে আনন্দিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন কী ধরনের পুরস্কার তিনি চান? উত্তর ছিল- "অর্থ নয়, আমার স্বজাতির জন্য এক টুকরো ভূমি আর তা হবে ফিলিস্তিন ৷ ফলে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডটি ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয় ব্রিটেন ৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর ব্রিটেন স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকারে উনিশ শত আটারো সাল থেকে ত্রিশ বছর দেশটিকে নিজেদের অধীন রাখে ৷ মূলত এই সময়টিই ফিলিস্তিনকে আরব-শূন্য করার জন্য কাজে লাগায় ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি ৷
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদকরণ,

উনিশ শত বিশ সালে জাতিপুঞ্জ ঘোষণার মাধ্যমে ব্রিটিশরা ম্যান্ডেটরি প্যালেস্টাইন প্রতিষ্ঠা করে। ব্রিটিশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দলে দলে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে জড়ো হতে থাকে, যাকে আলিয়াহ বলা হয়। অতঃপর ব্রিটিশ সরকার একদিকে ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিন উন্মুক্ত করে দেয়, অন্যদিকে ব্রিটিশ বাহিনীর সহযোগিতায় ইহুদি মিলিশিয়ারা ফিলিস্তিনদের বিতাড়িত করে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য গড়ে তুলতে থাকে ৷ তার মধ্যে তিনটি প্রধান সংগঠন ছিল হাগানাহ, ইরগুন ও স্ট্যার্ন গ্যাং যারা হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ আর ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টির মাধ্যমে ফিলিস্তিনদের বাধ্য করে ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যেতে ৷ সংগঠনগুলোর গণহত্যার কথা যখন আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারিত হচ্ছিল তখন পরিস্থিতকে নিজেদের অনুকূলে আনার জন্য গুপ্ত সংগঠন হাগানাহ বেছে নেয় আত্মহনন পন্থা ৷ উনিশ শত চল্লিশ সালে এসএস প্যাট্রিয়া নামক একটি জাহাজকে হাইফা বন্দরে তারা উড়িয়ে দিয়ে দুই শত ছিয়াত্তর জন ইহুদিকে হত্যা করে ৷ উনিশ শত বিয়াল্লিশ সালে আরেকটি জাহাজকে উড়িয়ে দিয়ে সাত শত উনত্তর জন ইহুদিকে হত্যা করে ৷ উভয় জাহাজে করে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসছিল আর ব্রিটিশরা সামরিক কৌশলগত কারণে জাহাজ দুটিকে ফিলিস্তিনের বন্দরে ভিড়তে দিচ্ছিল না ৷ হাগানাহ এভাবে ইহুদিদের হত্যা করে বিশ্ব জনমতকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করে ৷ পাশাপাশি ইহুদিদের বসতি স্থাপন ও আরবদের উচ্ছেদকরণ চলতে থাকে খুব দ্রুত ৷ এর ফলে ২০ লাখ বসতির মধ্যে বহিরাগত ইহুদির সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় পাঁচ লাখ চল্লিশ হাজার ৷ এ সময়ই উনিশ শত চল্লিশ সালের উনত্রিশ নভেম্বর ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইঙ্গ-মার্কিন চাপে জাতিসংঘে ভোট গ্রহণ করা হয়, তাতে তেত্রিশটি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে, তেরোটি বিপক্ষে এবং দশটি ভোট প্রদানে বিরত থাকে৷ প্রস্তাব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হয়েও ইহুদিরা পেলো ভূমির সাতান্ন পারসেন্ট আর ফিলিস্তিনীরা পেলো তেতাল্লিশ পারসেন্ট তবে প্রস্তাবিত ইহুদি রাষ্ট্রটির উত্তর-পশ্চিম সীমানা ছিল অনির্ধারিত ফলে ভবিষ্যতে ইহুদিরা সীমানা বাড়াতে পারে ৷ এভাবে ইহুদিদের কাঙ্ক্ষিত ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হয়ে পড়ে।

ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা,

ফিলিস্তিন অঞ্চলের কার্যত মালিকানা লাভের পর ইহুদি বসতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং ফিলিস্তিনদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশে রাতে তাদের ফোন লাইন, বিদ্যুৎ লাইন কাটা, বাড়িঘরে হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, জোর করে জমি দখল এবং বিভিন্নভাবে নারী নির্যাতনের মতো কাজে জড়িয়ে পড়লো স্থানীয় ও বহিরাগত ইহুদি ও সরকারের মদদপুষ্ট সেনাবাহিনী।

ফলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিরা আরব দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

এরপরই উনিশ শত আটচল্লিশ সালের বারো মে রাত বারোটা এক মিনিটে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করে ইহুদি জায়নবাদীরা, যাদের প্রধান ছিলেন দাভিদ বেন গুরিয়ন ৷ দশ মিনিটের ভেতর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, অতঃপর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ব্রিটেন স্বীকৃতি দেয় ।

দর্শক আজকেরমত এখানেই বিদাই নিচ্ছি, দেখা হবে ইনশায়াল্লাহ্ আগামী কোন পর্বে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন। আল্লাহ্ হাফেজ।


Subscribe Our Channel 👉 bit.ly/39dKyvE

#আহ্কামেজিন্দেগী
#ahkamaizindegi