স্বপ্নপুরী দেখতে যেহেতু অনেক সময় লাগবে তাই ভোরে ঘুম থেকে উঠে চলে আসলাম দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়াগামী বাস স্ট্যান্ডে। ফুলবাড়িয়াগামী গেটলক বাসে উঠে পড়লাম, ভাড়া নিল জনপ্রতি ৬০টাকা। ফুলবাড়িয়ার ঢাকা মোড়ে নামলাম। এখান থেকে স্বপ্নপুরীর লোকাল ইজি বাইক ছাড়ে। তবে লোকাল ইজিবাইক ৫/৬ জন মানুষ না ভরা পর্যন্ত ছাড়ে না। আর আমরা মাত্র ২জন। তাই ইজিবাইক ড্রাইভারকে বললাম বাকি মানুষ ভরলে ডাক দিয়েন আমরা রাস্তার পাশের হোটেলে গিয়ে নাস্তা খাচ্ছি। সকালের নাস্তা করার সুযোগ চলে আসলো। হোটেলে ঢুকে জনপ্রতি ৪০টাকার মধ্যেই সব্জি-পরোটা, চা হয়ে গেল। খাওয়া শেষে ইজিবাইক ড্রাইভারও ডাকতে চলে এসেছে। উঠে পড়ে রওনা দিলাম স্বপ্নের স্বপ্নপুরীর উদ্দেশে।
স্বপ্নপুরী গুগল লোকেশন- https://goo.gl/maps/h2UGG7hembn
স্বপ্নপুরীর কাছে যখন পৌছালাম তখন সকাল ৯.৩০ বাজে। প্রবেশ মুখে জনপ্রতি ৫০টাকার টিকিট কেটে ঢুকে গেলাম স্বপ্নময় স্বপ্নপুরীতে। ধুকেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এতো সুন্দর পার্ক এর আগে কখনই দেখিনি। সব জাগায় বাহারি ফুলের গাছ, কারুকার্যমণ্ডিত রঙিন ভাস্কর্য। হেঁটে হেঁটে ঘুরছি আর অবাক হচ্ছি। ঢাকার ফ্যান্টাসি কিংডম বা নন্দন পার্ক যারা দেখেছেন তারা দেখলে অবাক হয়ে যাবেন যে দিনাজপুরে ফ্যান্টাসির থেকে সুন্দর এমন পার্ক থাকতে পারে। এটা সত্যি যে স্বপ্নপুরীর রাইড গুলো ফ্যান্টাসির মত এতো উন্নত না। কিন্তু যদি চারপাশের সৌন্দর্যের কথা বলি তাহলে সেই দিক দিয়ে স্বপ্নপুরী সেরা।
হাটতে হাটতে প্রথমে গেলাম স্বপ্নপুরীর “আদিম যুগের আজব যাদুঘরে”। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ১০টাকা। ১০ফিট মাটির নিচে যাদুঘর। অন্ধকারের মধ্যে হেঁটে ঢুকতে হয়, ডিম লাইটের আলোয় কিছুটা আলোকিত, ভিতরে আদিম মানুষ এবং অদ্ভুত সব প্রাণীর মূর্তি সেই সাথে বাজছে অদ্ভুত সব সাউন্ড, মিউজিক এবং আর্তনাদ। যেন এক অদ্ভুতুড়ে পরিবেশ।
এরপর চলে আসলাম ক্যাবল কার রাইডের কাছে, সিড়ি বেয়ে ৩তলা বিল্ডিং এর উপর থেকে ক্যাবল কারে উঠতে হবে। টিকিট জনপ্রতি ৩০টাকা! এখন পর্যন্ত আমার উঠা সব থেকে সস্তা ক্যাবল কার এটি। এর থেকেও সস্তা আর কোন ক্যাবল কার বাংলাদেশে আছে বলে আমার মনে হয় না। ক্যাবল কারটি স্বপ্নপুরীর কিছুটা অংশের উপর দিয়ে ঘুরে আসে।
মাত্র কয়েকমিনিটের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ শেষে এবার ঘুরতে ঘুরতে চলে আসলাম সেভেন ওয়ান্ডার এর কাছে। প্রবেশমূল্য ২০টাকা। পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্যের মিনি রেপ্লিকা এখানে আছে। তবে রেপ্লিকার নির্মাণগুলো বেশ হাস্যকর। অরিজিনালের সাথে ২০% মিল আছে কিনা সন্দেহ। যাই হোক, টাকা খরচ করে যেহেতু ঢুকেছি, তাই মজা নিতে ছাড় দিলাম না। সব গুলার সাথে ছবি তুললাম। অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল পৃথিবীর সাত আশ্চর্য ঘুরে ঘুরে দেখবো কিন্তু টাকা পয়সার অভাবে সেটা তো মনে হয় কখনো সম্ভব হবে না। তাই সস্তায় সেভেন ওয়ান্ডারের সাথে ছবি তুলে নিলাম। হা হা হা।
এরপর গেলাম আইস ওয়ার্ল্ডে। এটা মনে হয় স্বপ্নপুরীর সব থেকে ফালতু প্লেস ছিল। একেবারেই সুন্দর না, ভেবেছিলাম ভিতরে হয়ত বরফ থাকবে, ধোঁয়া থাকবে মজা হবে। কিন্তু সেরকম কিছুই না। সাদা রঙের প্লাস্টার করা দেওয়াল, কয়েকটা পেঙ্গুইনের মূর্তি ছাড়া আর কিছুই নাই। ঠাণ্ডা করার জন্য এক দুইটা এসি চোখে পড়লো যা আবার বন্ধ ছিল। ঠাণ্ডা তো লাগছিলই না, বরং বাইরের থেকে এখানে বেশী গরম লাগছিল। সব থেকে বাজে ব্যাপারটা হল এটার ভিতরে পানির পাইপ এমনভাবে সেট করসে যেন গোসলের শাওয়ারের মত পানি পড়ে। গা একদম ভিজিয়ে দিবে। হাতে মোবাইল, ক্যামেরা থাকলে সেগুলা ভিজিয়ে দিয়ে ইলেকট্রনিক জিনিসের ক্ষতি করে দিবে। মেজাজ খারাপ করে এখান থেকে বের হয়ে গেলাম।
সামনে গিয়ে পেলাম ফিশ ওয়ার্ল্ড।
ফিশ ওয়ার্ল্ড গুগল লোকেশন- https://goo.gl/maps/smBo987uKC62
প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০টাকা। এখানে মাছ, এবং বিভিন্ন জলজ প্রাণীর ভাস্কর্য দেখতে পারবেন।
স্বপ্নপুরী মসজিদটা বেশ সুন্দর।
স্বপ্নপুরী মসজিদ গুগল লোকেশন- https://goo.gl/maps/EMm5vKab1C92
মসজিদের গেটের সামনে বিশাল বড় পুকুর আছে। পুকুরে বেশ বড় বড় মাছও আছে। পুকুরে গোসল করতে চাইলে জনপ্রতি ১০টাকা লাগবে। তবে ওযু করা ফ্রি।
এছাড়া স্বপ্নপুরী তে নাগরদোলা, বোটিং, মিনি জু, ফিশ ওয়ার্ল্ড, ডাইনাসর ওয়ার্ল্ড, ম্যাজিক কর্নার, মহা মায়া ইন্দ্রজাল, রংধনু আর্ট গ্যালারী, প্রাণী জগৎ, নভোথিয়েটার ইত্যাদি সহ আরও অনেক রাইড বা ভিজিটং প্লেস আছে। বেশিরভাগ জায়গাই বিভিন্ন ভাস্কর্যের দিয়ে তৈরি। সেই সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘুরেও স্বপ্নপুরীর মাত্র ৬০ভাগ জায়গা দেখা হয়েছে। এখনো অনেক বাকি। কিন্তু এখানে আর সময় না দিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম।
স্বপ্নপুরীর গেট থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত কিছু লোকাল সি.এন.জি ছাড়ে, ভাড়া জনপ্রতি ৪০টাকা।
যেভাবে এসেছিলাম ঠিক একই ভাবে ফুলবাড়িয়া ফিরে গেলাম।
এবারের যাত্রা রংপুরের উদ্দেশে। কিন্তু সেই গল্প পরবর্তী পর্বে বলবো।
*কিছু কথা*
পরের পর্ব আসার জন্য সবাইকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার অনুরোধ করবো। কারণ আমার নিজেকেই ছবি ইডিট, ভিডিও ইডিটিং, স্টোরি লেখা সব একাই করতে হয়। তার উপর চাকরী সামলাতে হয়। সব মিলিয়ে সময় দিতে আমার খুব কস্ট করতে হয়। তাই আমার লেখা শেষ হওয়া মাত্রই আপনরা পোস্ট পেয়ে যাবেন। আমি যথাসাধ্য চেস্টা করি আমার লেখা দ্রুত সবার কাছে তুলে ধরার জন্য। তাই আপনাদের সকলের ধৈর্য এবং সহযোগিতা কামনা করছি।
অনেকে ভুলবশত আমার বাক্তিগত ফেসবুক আইডিতে মেসেজ করছেন। কিন্তু অপরিচিত কারও মেসেজ ফেসবুকের সিকিউরিটির কারণে মেসেজগুলো আমার ইনবক্সে আসছে না। তাই সবাইকে অনুরোধ করবো, পেজের ভিতরের মেসেজ অপশন থেকে মেসেজ দিতে। পেজের ইনবক্স কিংবা কমেন্টের উত্তর আমি দ্রুত দেওয়ার চেস্টা করি।
লেখায় কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ব্যাঙ্গ,ঠাট্টা,উপহাস এর পরিবর্তে আপনার সৎ মন্তব্য,উৎসাহ কামনা করছি। সবাই ভাল থাকবেন। আপানদের ভ্রমণ সুখকর হোক।
আমার আরও বিভিন্নসব জায়গা ভ্রমণের A to Z বর্ণনা জানতে আমার ফেসবুক ট্র্যাভেল পেজ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ট্র্যাভেল পেজ- / seamtraveler
এছাড়া আমাকে ইন্সটাগ্রামে (Instagram) ফলো করতে পারেন।- / seamanower
Информация по комментариям в разработке