এ এক জীবন মরণের ব্যাপার করে তোলা হলো, সারা দেশের মানুষের কাছে, বিশেষ করে সেই মানুষজন যাঁদের রাজ্যে নির্বাচন মাত্র মাস চার, পাঁচ মাসের মধ্যেই। আপনি এখনও ফর্মই পাননি? কেন পাননি? আপনার তো ভোটার তালিকাতে নাম ছিল, তাও কেন ফর্ম দিল না? এনিউমারেশন ফর্ম ঠিক করে ভরা হলো কি না। আপনি তো ভরলেন কিন্তু তারপরে সেই এনিউমারেশন ফর্ম বি এল ও ঠিক করে আপলোড করেছে তো? আপনার ভায়রাভাই এর নাম ২০০২ এর লিস্ট এ নেই, ও তো ছিল দুবাই এ, এদিকে তার বৃদ্ধ বাবা মার নামও নেই। তাদের কী হবে? সুখেন্দুবাবু যাচ্ছেতাই কাটাকুটি করে ফেলেছে ফর্ম এ, কী হবে? আপনার কাজের জায়গা পালটে গেছে, এখন ঠিকানা আলাদা, ছুটি নিয়ে যাবার উপায়ও নেই। কী হবে? ৫ বছরের মেয়েটাকে অ্যাডপ্ট করেছিল সিঙ্গল মাদার ঝর্ণা, মেয়ের বয়স এখন ১৮, তার কী হবে? বি এল ও আত্মহত্যা করেছে, এখন কে তার কাজগুলো করবে? আবার সব শুরু থেকেই হবে? ১০০ টাকা করে মতুয়া সংঘের কার্ড কিনেছেন যিনি তিনি জানতে পারলেন ঐ কার্ডের কোনও দামই নেই, তাহলে কি তাঁকে আবার ফিরে যেতে হবে কাঁটাতার বেড়া পারকরে ওপারে, ঐ দেশে? এবং খেয়াল করেছেন যে এতশত করার পরেও আপনি একটা কথাই ভেবে যাচ্ছেন আপনার, নিকট আত্মীয় পরিজনের নাম থাকবে তো ফাইনাল লিস্ট এ? না থাকলে কাকে ধরবেন? দিদি না দাদা কে? হ্যাঁ আপনার গত দু মাস গেছে এই চিন্তায়, আগামী আরও কিছুদিন এই চিন্তাতেই কেটে যাবে। কেন? কারণ রাষ্ট্রের নির্বাচন কমিশন স্পেশ্যাল ইনটেন্সিভ রিভিশন অফ ভোটার লিস্ট এর কাজ করছেন। হ্যাঁ মাস খানেক পরে আপনি জানতে পারবেন আপনার নাম ভোটার তালিকাতে আছে কি না, আর যদি না থাকে তাহলে তারপরে? ভাবতেও হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে। আপনার চাকরি আছে কি না? আপনার রোজগারে দুটো ছেলেমেয়ের স্কুলের ফিজ, ডাক্তার বদ্যি, খাবার দাবার, সামাজিকতার দায় মেটানো যাচ্ছে কি না? আপনার রিটায়ারমেন্টের পরেও আপনার ঘরে দুজন বেকার বসে আছে কি না? আপনার বাজারে যাবার আগে প্রতিদিন হাত কাঁপে কি না? রেশনে এক সপ্তাহ চাল গম না পেলেও আপনার সংসার চলে কি না? আপনার পাড়ায় রাস্তার অবস্থা কেমন? রোজ কারেন্ট চলে যাচ্ছে কি না? না এসব ভাবার সময় কোথায় বিশ্বের সবথেকে বড় গণতন্ত্রে আপনার আপাতত একমাত্র চিন্তা ভোটার লিস্ট এ নাম টা আছে কি না। পরধান সেভক মাত্র গতকালই বলেছেন বিশ্ব এখন রামময়, ভারত হলো মাদার অফ ডেমোক্রাসি, কাজেই আপনার ঐ ভোটার লিস্ট নিয়েই চিন্তা সেই বিশাল গণতান্ত্রিক ইকো সিস্টেমের সঙ্গে এক্কেবারে খাপে খাপ পঞ্চুর বাপ। আচ্ছা এটাও কি তার সঙ্গে খেয়াল করেছেন আমাদের দেশে ২০২৪ এ লোকসভা নির্বাচনে মাত্র ৬৫.৭৯% ভোট পড়েছিল। এর মানে কী? মানে খুব পরিস্কার, ৩৫% মানুষ এই নির্বাচন ইত্যাদিকে তেমন গুরুত্ব দেন না, বা ভোট দেবার প্রয়োজনীয়তাই মনে করেন না। তার মানে হল এই ভোটার তালিকা সংশোধন আসলে ভোট বা নির্বাচনের থেকে অনেক বড় কিছু, অন্তত ভোটার তালিকা সংশোধনের থেকে অনেক আলাদা উদ্দেশ্য নিয়েই আনা হয়েছে। এটা একটা অস্ত্র, আর তার এক নম্বর টার্গেট হল পশ্চিমবঙ্গ, আমাদের বাংলা। যে ভাবে হোক, যে কোনও পদ্ধতিতে হোক, ডাউটফুল ভোটারের সংখ্যা বাড়াতে হবে, যে ভাবে হোক সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে মুসলমান ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাইরে রাখতে হবে, হ্যাঁ, টার্গেট লকড, প্রতিটা আসনে কমসম করে ৭/৮ হাজার ভোটার বাদ দিতে হবে, যার সিংহ ভাগ থাকবে মুসলমান। এক মুসলমান বিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে এই এস আই আর এর মাধ্যমে, এক চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে আসলে সেই লক্ষ্যকেই অর্জন করার চেষ্টা চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এক্কেবারে সেই তালে তাল মিলিয়ে গতকালও বিরোধী দলনেতা বলেছেন দেড় কোটি নাম বাদ যাবে, তারপর দেখবো কে কোথায় দাঁড়িয়ে। কখন বলছেন? আজ ২৬ তারিখ, ৯ তারিখ নাগাদ সংশোধিত ভোটার তালিকা বের হয়ে যাবে, এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৫/১৮ লক্ষ্য নাম বাদ যাবার কথা শুনছি আমরা, যার মধ্যে সাড়ে ছ কি সাত লক্ষ্য ভোটার তো মৃত। যখন সংযোজনের কাজ শুরু হবে তখন নতুন ভোটার তু যোগ হবে, সেটা এই রকম একটা সংখ্যাই হবে, মানে সাড়ে ছ কি সাত লক্ষ। তাহলে এক দেড় কোটির কথা আসছে কোথ্বেকে? এক রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কি তাহলে ব্লাফ দিচ্ছেন?
Информация по комментариям в разработке