Скачать или смотреть রান্না পুজো vlog | বাড়ির মনসা পুজো | গ্ৰাম বাংলার উৎসব

রান্নাপুজোর ইতিকথা

সাবেক কালের বেশ কিছু জিনিস কিন্তু আজও প্রথা হিসেবে রয়ে গেছে। রান্নাপুজো সেই রকমই সুপ্রাচীন এক আঞ্চলিক প্রথা।
এখন প্রশ্ন হল, রান্না তো রোজই হচ্ছে, কিন্তু তার আবার পুজোপাঠ কিসের? আছে সে এক বিশেষ দিন। ভাদ্র সংক্রান্তি। সেদিনেই হয় রান্নাপুজো। এছাড়াও শ্রাবণ সংক্রান্তি, আশ্বিনে মহালয়ার আগে রান্নাপুজো হয়েই থাকে। রান্না পুজোর বিভিন্ন ভাগ ও নাম আছে। গাবরা রান্না, ইচ্ছে রান্না, বুড়ো রান্না প্রভৃতি।
সেকালের নিরিখে রান্নাপুজো মানেই বিরাট আয়োজন। বিশাল ধুম লেগে যাওয়া। সব পরিবারের জ্ঞাতিগোষ্ঠী মিলে মেতে ওঠা। সে এক মহাযজ্ঞ একেবারে!
পদও নয় নয় করে অনেক। সব্জি, শাকের পাশাপাশি মাছের পদের সমাহার। মাসের সেরা সব্জি দিয়ে নিবেদিত হবে ভোগ। চালতার টক, কচুশাক বাদ দেওয়াই যাবেনা। মাছের মধ্যে ইলিশ তো চাইই চাই। আর সঙ্গে থাকবে পান্তাভাত।
সন্ধ‌্যার পর থেকে কাটাকুটি, বাছাবাছি আর রাত বারোটার পর থেকে রান্না। সে এক হইহই কাণ্ড। রই রই ব্যাপার!
তবে এই রান্না পুজোর পিছনের ইতিহাসটা কী? সেটাই বলি এবার।
শ্রাবণ মাসে নদী-নালা ফুলে-ফেঁপে ওঠে। দেব-দেবীদেরও নিদারুণ কষ্ট। ভূমিহারা, গৃহহারা তাঁরা। অগত্যা উপায়ান্তর না দেখে সেই সময় গৃহস্থের ঘরে আশ্রয় খোঁজা। গৃহস্থের ঘরের ধানের গোলায়, গোয়ালঘরে, উনুনের ভেতর তাঁদের উপস্থিতি এই সময় বাড়ে। তাই মনসা দেবীকে সন্তুষ্ট করতেই এই পুজো-পাঠ, রীতিনীতি।
ভোরবেলা স্নান করে উনুনে আলপনা আঁকেন বাড়ির মহিলারা। কখনও পাঁচটা বা সাতটা সাপ, সঙ্গে পেঁচা, ধানের শিষ, লক্ষ্মীর ঝাঁপি থাকে। এছাড়া ফুল, শালুক লতা তো থাকবেই।
তবে একেকটা পরিবারের রীতিনীতি হয়তো প্রকার ভেদে আলাদা হলেও মূল উদ্দেশ্য হয় দেবীকে সন্তুষ্ট করা। সেই উপলক্ষে পুজোপাঠ ক'রে, খাবার-দাবার দিয়ে, পরিবারের সবাইকে রক্ষা করার আর্জি জানানো হয়।
অনেক বাড়িতে আবার লক্ষ্মীপুজো হয় সেদিন। তবে শুধু পুজো দিয়ে খুশি করা এমনটা নয়। তেনারা যে শরণে বরণে তৃপ্ত তার প্রমাণও থাকে ভুরি ভুরি।
এসব নিয়ে গল্পগাথাও বিস্তর। অনেকে আবার পদ্মপাতায় সযত্নে বেড়ে দেন খাবার। মনসা গাছকে তুলসী মঞ্চের আদলে তৈরি করে তাতে তেল সিঁদুর মাখিয়ে তারপর ভোগ নিবেদন করা হয়। প্রার্থনা এই যে নাগকুল যেন কোনও গৃহস্থের ক্ষতি না করে।
এই রান্না পুজোর দুটো ভাগ। রান্না ও পান্না। রাত বারোটার পর রান্না করে রাখা হয়। আর পরের দিন হয় পান্না, মানে জল ঢালা পান্তা ভাত পরিবেশন করা হয় সবার পাতে।
প্রথা মতে পান্নার দিন প্রথমে হয় উনুন পুজো। ভাদ্র সংক্রান্তিতে গেরস্থ ঘরে উনুন জ্বলবে না। থালায় আগের দিন রেঁধে রাখা খাবার সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া হয় পান্নায়।
আবার কেউ কেউ পান্নার দিনটিকে অরন্ধন পুজোও বলে। প্রচলিত বিশ্বাস, আগের দিন রান্না হলেও যতই গরম পড়ুক না কেন, কোনও রান্না করা খাবার নষ্ট হয়ে যায় না। এবং এই বিশ্বাসের শিকড় এতটাই মজবুত যে, এই ভোগপ্রসাদ গ্রহণ করলে শরীরের রোগ ব্যাধি দূরে থাকে বলেও মনে করা হয়।
পুরাণ মতে, লক্ষ্মী-সরস্বতীর মতো মনসাও শিবের কন্যা। তাই মনসার কদর বাংলার প্রতি ঘরে বিদ্যমান। আর সেই কারণে ভাদ্র মাসে মা মনসার পুজো হয়। মনসা পুজোর একটি বিশেষ অঙ্গ এই রান্না পুজো বা উৎসব।

কলমে ও ভিডিওগ্ৰাফিতে ‪@myself_mishu‬

copyright protected. don't use my text or video without permission.
#উৎসব #রান্নাপুজো #মনসা