ভালোবাসা পাবেন কীকরে? কয়েকটি সহজ উপায়।
১। যত্রতত্র রোজ-দিন, ছবি তুলতে পোজ দিন। আগে ভিড়-রাস্তায়, কিংবা পাহাড়ের মাথায়, হঠাৎ এক-ঠ্যাঙা-সারসের মতো পোজ দিয়ে ছবি তুলতে লাগলে, লোকে পাগল ভাবত। সেসব ইনহিবিশন আর নেই। এখন যেখানে-সেখানে গৌর-নিতাই কিংবা মেরিলিন-মনরো সেজে ছবি তুলুন। তাজমহল-পুজোমন্ডপ-শ্রাদ্ধবাসর, রণে-বনে-নিউটাউনে, রাজদ্বারে শ্মশানে চ, সামনে স্মার্টফোন ফিট করে গান চালিয়ে নাচতে লেগে যান। নাচতে পারুন, না পারুন, কিস্যু এসে যায়না। লোকে জানবে রিল হচ্ছে। প্রাণখুলে বেঁচে নিন, ক্যামেরায় নেচে নিন। ইহজগতে সম্ভ্রম পাবেন, পরাজগত, অর্থাৎ সোশাল মিডিয়ায় পাবেন ভালোবাসা। শয়ে শয়ে উপচে পড়বে।
২। নিজের ঢাক নিজে পেটান। দামী জিনিসের ছবি দিন। আলমারি-কাবার্ড, নিজের না থাকলে দোকানে গিয়ে ছবি তুলে আনুন। বিয়ের আড়ম্বরের ছবিতে ফাটিয়ে দিন, নিজের বিয়ে হলে ভালো, নইলে অন্যেরও চলবে। কেতের থালাবাটি-কাঁটা-চামচের ছবি তুলুন। নিজের না থাকলে রেস্তোরাঁয় পেয়ে যাবেন। আর রেস্তোরাঁ যদি যানই, তো, খাবারের ছবি একদম ভুলবেন না। আমি খাব কেউ দেখবেনা, তা হবেনা, তা হবেনা। দেখবে এবং ভালোবাসা দেবে।
৩। একটা ঢাউস গাড়ি জোগাড় করুন। নিজের না থাকলে বন্ধুর, তাও না হলে ধার করে। লং ড্রাইভে চলে যান উলুবেড়িয়ার উত্তরে। কিংবা বিষ্ণুপুরের পশ্চিমে। গাড়ির সঙ্গে ছবি দিন। শীর্ষাসন করে ছবি দিন। হাঁপাতে হাঁপাতে টিলার মাথায় উঠে স্ট্যাচু-অফ-লিবার্টির মতো তুলে ফেলুন সেলফি। সিগনাল থাকলে তখনই পোস্ট করে দিন। সঙ্গে-সঙ্গে পবেন ভালোবাসা। নগদ, এবং হাতে-হাতে আদায়।
৪। এবার ওস্তাদের মার। এমন কিছু করুন, যা, এর আগে কেউ কক্ষনো করেনি। ফাইটার প্লেনের ককপিটে উঠে পড়ে বলুন, আমি প্লেন চালাচ্ছি। এটা একেবারেই কেউ চালায়নি তা নয়, কিন্তু তারা কেউ ছবি তুলে পোস্ট করেনা। ফাইটার প্লেন খুব কঠিন মনে হলে একটা স্পেসসুট ধরণের জামা বানান। তারপরে অন্ধকারে ছবি তুলে বলুন এখন আমি মহাকাশে। কিন্তু পুরুলিয়ায় চলে যান। বা শিমুলতলা। লাট্টু পাহাড়ে উঠে বলুন, আমি মঙ্গলগ্রহে। ব্যস এক ঝটকায় আপনি হিট। পেতে থাকবেন অন্তহীন ভালোবাসা।
কিন্তু এসবে সমস্যা একটাই। আপনি এত পরিশ্রম করে ভালোবাসা জোটাতে গিয়ে কোথায় শিমুলতলা নাকি মঙ্গলগ্রহে একলা পড়ে থাকবেন। আর আমরা কোনো ছবি না দিয়েই গুরুচণ্ডা৯র ভাটে ঠেক দেব। বইমেলায় ফুর্তি করব। আপনি সেই তো একলাই থাকলেন, ভালোবাসা পেয়ে লাভ কী হল? তার চেয়ে ভেবে দেখুন, গুরুর সাইটে আসবেন কিনা। ছবি-টবি দিয়ে ভেবে থাকার চাপ নেই। এমনিই ফুর্তি। আর বইমেলা তো ঘনিয়েই এল। আমাদের ঠেকে রোজরোজই দুগ্গাপুজো। ছবি-টবির বাধ্যবাধকতা ছাড়াই। এসব ছেড়ে ভালোবাসা নিয়ে করবেন টা কী?
**সঙ্গের ভিডিওতে ভালোবাসা পাবার এই কাহিনীই আছে। রবীন্দ্রনাথ যেমন একবার কাহিনী লিখতেন, তারপর নৃত্যনাট্য। সেইরকমই। কাজেই ভিডিওটা ফস্কাবেন না। শাহরুকের মতো, মেসির খেলার মতো এই ভিডিওও নিজেরা দেখুন, পাড়াপ্রতিবেশীকে দেখান। আর মেলায় গুরুর ঠেকে আসতে ভুলবেন না।
Информация по комментариям в разработке