Скачать или смотреть করোনা পরিস্থিতিতে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ক বার্তা_মোহাম্মদ শাহ অালম_CAP House

করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিশুরা সারাদিন ঘরে থাকছে। এই সময়ে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন মানসিক অসুস্থতার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাদের মধ্যে যে মনোসামাজিক সংকট সৃষ্টি হয়, তা থেকে উত্তরণের জন্য শিশুদের সাথে সৃজনশীল নানান মনোবিশ্লেষক তথা থেরাপিউটিক কলাকৌশল অনুশীলন করা যেতে পারে।

তেমন কিছু কলা-কৌশল হল: থিয়েটার থেরাপি, প্লে থেরাপি ও কালার থেরাপি ।

নিম্নে তেমন কিছু কলা-কৌশল সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হল।

থিয়েটার থেরাপি:
=============
এই পদ্ধতিতে সব বয়সের শিশুদের সাথে স্বাচ্ছন্দে করা যায়। শিশুরা নিজেদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পায় বলে খুব সহজে ও তাড়াতাড়ি রেসপন্স করতে পারে থিয়েটার থেরাপির মধ্য দিয়ে। দুই বা ততোধিক শিশুদের সাথে দলীয়ভাবে কিছু ছোট ছোট খেলার মধ্য দিয়ে জড়তা মোচন ও একটা পরিবেশকে সহজ করে নিতে হবে। প্রথমেই কিছু সোসিওমেট্টি করতে হবে যেমন, শিশুদের সহজ ভাষায় তাদের অনুভূতি বলতে বলা, অর্থ্যাৎ কেমন আছো, কেমন বোধ করছো, কি করতে ভাল লাগে, কোথায় যেতে ইচ্ছে করছে এমন ধরণের কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে শিশুদের মনের দুয়ার খুলে দিতে হবে। ছোট গল্প বা কোন অভিজ্ঞতা একসাথে সবাই মিলে শোনা অথবা ছোট ছোট ২/৩ জনের দল করে বলা ও শোনা। এরপর সেই গল্পের অভিনয় করে দেখানো। অভিনিত নাট্যাংশের বিভিন্ন সুন্দর ও ভাল দিক গুলো বড় দলে আলোচনা করা শিশুদের মতামত নেয়া। এরকম বিভিন্ন নাট্যক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিশুদের মানসিক চাপ জনিত প্রতিক্রিয়া দূর করে তাকে স্বাভাবিক আচরণ করতে উপযোগী করা তোলা যায়।
  / …  
প্লে থেরাপি :
===========
শিশুদের জন্য প্লে থেরাপি খুবই কার্যকর একটি কৌশল। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের চাহিদা পূরণ ও প্রতিক্রিয়া জানতে বিশ্বব্যাপী এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণত ৩ থেকে ১১ বছরের শিশুদের সাথে করা হয় প্লে থেরাপি। এটি প্রাকৃতিক ভাবে নিজেকে পরিচালনা, নিজের সমস্যা সর্ম্পকে এবং নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি প্রকাশের জন্য একটি সহজ মাধ্যম। শিশুদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান বিকশিত হয় খেলার মাধ্যমে যোগাযোগ করে। শিশুদের মনোজগত সর্ম্পকে জানতে প্লে থেরাপি গুরুত্বপূর্ণ বাহন। প্লে থেরাপি করতে প্রথমে প্রয়োজন একটি স্বাচ্ছন্দময় স্থান সেটি ঘরের মধ্যে অথবা বাইরে খোলা কোন স্থান। একজন শিশুর সাথে অথবা একসাথে একাধিক শিশুর সাথে করা যায় প্লে থেরাপি। শিশু কোন খেলা খেলতে বেশি পছন্দ করে, কোথায় করতে পছন্দ করে ঘরে না বাইরে, কার সাথে খেলতে পছন্দ করে। এছাড়াও প্রত্যেক শিশুরই কিছু না কিছু খেলনা থাকে। এর মধ্যে থাকে প্রিয় কিছু খেলনা, যা সে কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না। সে খেলনাটি হারিয়ে ফেললে বা ভেঙে গেলে শিশুরা খুব কষ্ট পায়। প্রিয় খেলনা কোনটি এখান থেকে শুরু করা যায়। পুরো বিষয়টি একটা গল্পের মধ্যে দিয়ে জেনে নিতে হবে শিশুর মনোযোগ কোনভাবেই যেন ছুটে না যায়। অবশ্যই তার ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়ে শুরুতেই শিশুর সাথে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী করে নিতে হবে। ছোট ছোট কিছু গেম এর মাধ্যমে শিশুর জড়তা কাটিয়ে তার সাথে নিজস্ব সৃজনশীলতা ব্যবহার করে কিছু আনন্দদায়ক ও সুন্দর মূহুর্ত তৈরী করে প্লে থেরাপি করা যায়। এতে করে শিশু যেমন আনন্দে থাকবে তেমনি ভুলে থাকবে সংকটময় মূহুর্তের অভিজ্ঞতা।

কালার থেরাপি:
============
প্রত্যেক শিশুই রঙ নিয়ে খেলতে ভালবাসে। বড়রাও একসাথে রঙ নিয়ে আঁকতে বসতে পারেন। তাতে আপনার শিশু নতুন ভাবে আঁকার জন্য তৈরী হবে। একসাথে ইচ্ছেমত আঁকতে বলুন (যা সবসময় আঁকে তা নয়) ইচ্ছেমত রঙ ব্যবহার করুন। আঁকা শেষ হলে একটা সুন্দর ছোট্ট নাম দিন। এরপর ফ্লোরে বা টেবিলে অথবা সুবিধাজনক স্থানে ডিসপ্লে করুন সবগুলো চিত্র এবং সময় নিয়ে একজন অন্যজনের আঁকা চিত্র দেখুন। আঁকা চিত্র সর্ম্পকে মন্তব্য করুন, আপনি কি আঁকতে চেষ্টা করেছেন তা বলুন এবং আপনার শিশুকেও বলতে বলুন। যতটা বিস্তারিত বলা যায়। আঁকা চিত্রগুলো দেয়ালে সেটে রাখতে পারেন। এতে করে শিশুর মনে একটা ইতিবাচক বোধ তৈরী হবে, আনন্দ অনুভব করবে এবং এই অনুভূতি বিরাজ করবে দীর্ঘসময় ধরে। ফলে বিষন্নতা, অবসাদ বা অন্য কোন উপসর্গ থেকে দূরে থাকতে পারবে আপনার শিশু। আঁকাআঁকি ছাড়াও বিভিন্ন রঙের খেলনা, বেলুন, কাঠি, বস্তু, উপকরণ, রঙিন কাগজ, জরি, ফিতা ইত্যাদি দিয়েও সৃজনশীল কিছু তৈরী করার মধ্য দিয়ে শিশুর মানসিক অবস্থা সর্ম্পকে জানা যায় এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়।

শিশুর মানসিক চাপজনিত প্রতিক্রিয়াগুলোর প্রতি আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন, একটি আনন্দদায়ক পরিবেশ ঘরে গড়ে তুলি যাতে শিশুদের মানসিক শক্তি দৃঢ় হয়।

মুহাম্মদ শাহ্ আলম