Скачать или смотреть নগরীর অনেক মানুষই ভুলতে বসেছে ঢাকার এই ঐতিহ্যকে । খাজা আম্বর শাহ মসজিদ । Khaja Ambar Shah Masjid ।

খাজা আম্বর শাহ মসজিদ কাওরানবাজার, ঢাকা। Khaja Ambar Shah Masjid। karwanbazar,Dhaka। famous24 tv ।
#famous24tv

ঐতিহ্যবাহী খাজা আম্বর শাহ মসজিদ ।
ঢাকা কেবল বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানীই নয়, মোঘল আমলেও বাংলার রাজধানী ছিল ঢাকা। মাঝখানে ইংরেজ শাসনের কবলে পড়ে কিছুদিনের জন্যে ঢাকার জৌলুস হারিয়ে গেলেও আবারও ঢাকা জেগে উঠেছে। যদিও ব্রিটিশদের করাল গ্রাসে হারিয়ে গেছে অনেক ঐতিহ্য। কিন্তু সবটুকু মুছে যায় নি। এখনও আছে অনেক মসজিদ-মন্দির এবং অনেক প্রত্নতাতাত্ত্বিক নিদর্শন। তবে চারদিকে গজিয়ে ওঠা সুরম্য ভবন ও বহুতল অট্টালিকার ভিড়ে চট করে অনেক সময়ই চোখে পড়ে না সেসব ঐতিহ্য-স্থাপনা। খাজা আম্বর মসজিদ তেমনই একটি।

খাজা আম্বর মসজিদ ঢাকা শহরের কারওয়ান বাজার এলাকার মুঘল সুবাহদার শায়েস্তা খান এর প্রধান খোজা,খাজা আম্বর কর্তৃক ১৬৮০ খিষ্টাব্দে নির্মিত একটি মসজিদ। যার বর্তমান অবস্থান কাওরান বাজারের ঠিক মাঝ বরাবর।

মসজিদটির নির্মাণশৈলী অত্যন্ত আকর্ষণীয় কারুকাজময়। তিন গম্বুজের এ মসজিদ ভূমি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু একটি উত্তোলিত মঞ্চের পশ্চিম অর্ধাংশজুড়ে অবস্থিত।

মসজিদের সিঁড়িপথের ডান দিকে খাজা আম্বরের খননকৃত কূপ ছিল, তবে বর্তমানে এটিকে মাটি ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে।

ভিত্তিমঞ্চের পূর্বদিকে রয়েছে খাজা আম্বরের সমাধি। আদিতে এখানে শুধু পাথরের তৈরি কবর ফলক দৃশ্যমান ছিল। তবে বর্তমানে এর উপরে ইট দিয়ে একটি ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে।

আম্বর মসজিদের আদি ভবনের সামনের দিকটা খালি। মসজিদের গা ঘেঁষেই করা হয়েছে এর সমপ্রসারিত ভবন, পাঁচতলাবিশিষ্ট নতুন মসজিদ, মাদ্রাসা ও বহুতল মার্কেট। ফলে মসজিদটির আদিরূপ ঢাকা পড়ে গেছে অনেক আগেই।

তা ছাড়া মসজিদটি অনেক বার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ১৯৬০ দশকে এর আমূল সংস্কার করা হয়। তখন পূর্ব প্রান্তে তিন গম্বুজ আচ্ছাদিত একটি বারান্দা যোগ করা হয়। ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে পূর্ব প্রান্তে বহুতলবিশিষ্ট সম্প্রসারিত অংশ নির্মাণ করায় বর্তমানে ইমারতটি আধুনিক রূপ পরিগ্রহ করেছে।

কালের পরিক্রমায় এবং পরবর্তীকালের ব্যাপক সংস্কারের ফলে মসজিদটির আদি অলঙ্করণের প্রায় সবকিছুই হারিয়ে যেতে বসেছে। দেওয়াল এক সময় খোপ নকশা দিয়ে অলঙ্কৃত ছিল, তবে বর্তমানে তা সিমেন্টের মসৃণ পলেস্তারায় ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

প্রাচীন এ মসজিদে এখনো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন মুসলি্লরা।দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও এখানে আসর এবং এশার নামাজের পর তালিম এবং যিকির হয়ে থাকে। জুম’আর নামাজে মুসুল্লিদের অংশগ্রহণ একটি লক্ষ্যনীয় বিষয়। এখানে প্রতি ওয়াক্তে দুই থেকে আড়াই হাজার মুসুল্লী একসাথে নামাজ আদায় করে থাকেন। এছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য মসজিদ পরিদর্শনের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। শালীন পোশাক পড়ে পবিত্র অবস্থায় মসজিদ পরিদর্শন করা যায়।

বর্তমানে কারওয়ান বাজারের এই ঐতিহাসিক মসজিদটির আশেপাশে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, দোকান, গাড়ির গ্যারেজ। মসজিদের ঠিক কয়েক হাত সামনে, মসজিদেরই উন্মুক্ত জায়গায় বহুজাতিক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনীকেন্দ্র।

এরকম আড়ালে পড়ায় এবং খাজা আম্বর মসজিদটির যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে পুরনো সেই মসজিদের প্রকৃত সৌন্দর্য ও জৌলুশ। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও খোঁজ নেয়নি মসজিদটির। ফলে অগোচরেই পড়ে আছে ঐতিহাসিক স্থাপনাটি আর নগরীর অনেক মানুষই ভুলতে বসেছে ঢাকার এই ঐতিহ্যকে।