উপসর্গ
বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো অব্যয় সূচক শব্দ্যাংশ রয়েছে, যা স্বাধীন পথ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না এগুলো অন্য শব্দের আগে বসে এর প্রভাবে শব্দটির কয়েক ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়।
যেমন
নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি
শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধিত
শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ
শব্দের অর্থের সংকোচন
শব্দের অর্থের পরিবর্তন।
এ উপসর্গ গুলোর নিজস্ব কোন অর্থ বাচকতা নাই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলে এদের অর্থদ্যোতকতা বা নতুন শব্দ সৃজনের ক্ষমতা থাকে।
ভাষায় ব্যবহৃত এসব অব্যয় সূচক শব্দাংশের নামেই উপসর্গ।
যেমন কাজ একটি শব্দ । এর আগে অ অব্যয়টি যুক্ত হলে হয় অকাজ। যার অর্থ নিন্দনীয় কাজ। এখানে অর্থের সংকোচন হয়েছে।
বাংলা ভাষায় তিন প্রকার উপসর্গ আছে। বাংলা, তৎসম বা সংস্কৃত এবং বিদেশি উপসর্গ।
বাংলা উপসর্গ
বাংলা উপসর্গ মোট একুশটি।
অ, অঘ, অজ, অনা,
আ, আর, আব, আন,
ইতি, পাতি, কদ, কু, নি,
বি, ভর, রাম ,
স, সা, সু, হা,
উনা বা উনা।
জ্ঞাতব্য: বাংলা উপসর্গ সাধারণত বাংলা শব্দের পূর্বেই যুক্ত হয়ে থাকে।
বাংলা উপসর্গ যুক্ত শব্দের বাক্যের প্রয়োগ: আমি অবেলাতে দিলাম পারি অথৈ সায়রে। অঘারাম বাস করে অজ পাড়াগাঁয়ে। আকাঠার নায়ে দিলাম কাঁঠালের গলুই। মা বলিতে প্রাণ করে আনচান চোখে আসে জল ভরে। ইতিহাস কথা কয়। উনা ভাতে দুনাবল। নিনাইয়ার শতেক নাও। ভরদুপুরে কোথায় যাও? এতদিন কোথায় নিখোঁজ হয়েছিলে?
তৎসম বা সংস্কৃত
বাংলা ভাষায় বহু সংস্কৃত শব্দ হুবহু এসে গেছে। সেই সঙ্গে সংস্কৃত উপসর্গও তৎসম শব্দের আগে বসে শব্দের নতুন রূপে অর্থের সংকোচন সম্প্রসারণ করে থাকে।
তৎসম উপসর্গ বিশটি ।
প্র, পরা, অপ, সম,
নি, অনু, অব, নির,
দূর, বি, অধি, সু,
উৎ, পরি, প্রতি, অতি,
অপি, অভি, উপ, আ।
আরবি, ফারসি, ইংরেজি, হিন্দি – এসব ভাষার বহু শব্দ দীর্ঘকাল ধরে বাংলা ভাষায় প্রচলিত রয়েছে। এর কতগুলো খাঁটি উচ্চারণে আবার কতগুলো বিকৃত উচ্চারণে বাংলায় ব্যবহৃত হয়। এ সঙ্গে কতগুলো বিদেশি উপসর্গও বাংলায় চালু রয়েছে। দীর্ঘকাল ব্যবহারে এগুলো বাংলা ভাষায় বেমালুম মিশে গিয়েছে। বেমালুম শব্দটিতে ‘মালুম’ আরবি শব্দ আর ‘বে’ ফারসি উপসর্গ। এরূপ- বেহায়া, বেনজির, বেশরম, বেকার ইত্যাদি।
নিচে কয়েকটি বিদেশি উপসর্গের উদাহরণ দেয়া হলো।
ক. ফারসি উপসর্গ:
ব্, বে, বদ্, বর্,
কম্, নিম্, দর্, কার্,
ফি, না।
খ. আরবি উপসর্গ: আম্, খাস, গর্, লা।
গ. ইংরেজি উপসর্গ: ফুল, সাব, হেড, হাফ।
Информация по комментариям в разработке