বাঁশ কেন ঝাড়ে বলেই মাঝে মধ্যে শুভেন্দু অধিকারি কিছু কথা বলেন, যা পরবর্তিকালে সামাল দিতে দলের নেতৃত্বের দম বের হয়ে যায়। নব্য বিজেপি তো, নিজেকে প্রমাণ করার জন্যই এসব বলেন। ইলেকশন কমিশন এক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের রুটিন কাজ, তাকে শুভেন্দু অধিকারী, আর এই বঙ্গের নেতারা এক দলীয় কর্মসূচী হিসেবে কেবল ঘোষণাই করলেন না, জানিয়ে দিলেন রাতের মধ্যে ঘর ছেড়ে চলে যেতে হবে মুসলিমদের, শুভেন্দু অধিকারি জানিয়ে দিলেন ২০ লক্ষ বাংলাদেশী আর দেড় কোটি রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করা হবে। হ্যাঁ না ভেবেই বলেছেন। শুভেন্দু অধিকারি ফাঁসবেন সংশোধিত ফাইনাল ভোটার তালিকা বের হবার পরে। কিন্তু তার সূচনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচন কমিশন তাঁদের ওয়াব সাইটে জানিয়েছেন এই বাংলায় ২৭ অক্টোবর ২০২৫ এ ভতার লিস্ট এ ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯ জন ভোটার আছেন আর তাদের মধ্যে ৭ কোটি ৬৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ৬৭৫ জনকে এনুমারেশন ফর্ম দেওয়া হয়ে গেছে। মানে খুব পরিস্কার তাঁদের ঠিকানাতে গেছেন বি এল ও রা, সঙ্গে বি এল এ রা, তাদের হাতে এনুমারেশন ফর্ম দেওয়া হয়ে গেছে। তাহলে ফাইনাল লিস্ট যখন আসবে তখন বাকি টা জানা যাবে, এখন অন্তত এটা জানা গেল যে সেই দেড় কোটি রোহিঙ্গাদের, ২০ লক্ষ বাংলাদেশীদের নিজেদের একটা ঠিকানা আছে। শুভেন্দু অধিকারি বলেছেন দেড় কোটি রোহিঙ্গাদের ২০ লক্ষ বাংলাদেশীকে খুঁজে বার করা হবে। আমাদের দেশের অন্ন যেন একজন রোহিঙ্গাও না পায়, একজন বাংলাদেশীও না পায়, তারজন্য ব্যবস্থা করতে হবে। উনি কেবল না ভেবেই বলেন তাও নয়, একবার বলতে শুরু করলে থামতেও জানেন না। কাজেই রাস্তার এপাশে ওপাশে রোহিঙ্গা দেখছেন, তাঁর অনুপ্ররণায় কিছু আবালের দল তাঁদের কথা শুনেই এপাশে ওপাশে, রোহিঙ্গা দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হল এই এস আই আর, হ্যাঁ সত্যি করেই কিছু গরীব মানুষ, যাঁরা আবার অশিক্ষিতও বটে, কাগজ ঠিক করে রাখতে পারেন নি, কিছু সত্যিই ওপার বাংলা থেকে বহুদিন আগে আসা মানুষজন বিপদে পড়বেন। তাঁদের ডিভোটার করা হবে, তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাই এর নামে হ্যারাসমেন্ট হবে। কিন্তু দুটো সত্যি বেরিয়ে আসবেই, ১) রোহিঙ্গা দেড় কোটি কেন? দেড়খানাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। নির্বাচনের আগে এই সত্যিটা সাওমনে আসবেই আর তখন কাঁথির খোকাবাবুকে এর জবাব দিতে হবে, তিনি ফাঁপরে পড়বেন। আর অন্যদিকটাও গুরুত্বপূর্ণ, বহু মতুয়া, রাজবংশী আদিবাসী পরিবারের নাম কাটা যাবে, সেই নাম কাটা যাওয়া মানুষেরা চরম বিপদে পড়বেন যা ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে যাবে শুভেন্দু অধিকারীর দিকে। ওনাদের সি এ এ আইন অনুযায়ী প্রথএ জানাতে হবে যে ওনারা ভারতের নাগরিক নন, ওনারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন তার প্রমাণ দিতে হবে, ওনাদের ধর্মীয় অত্যাচারের মুখেই পালিয়ে আসতে হয়েছিল, সেটারও প্রমাণ দিতে হবে। কোথ্বকে জোগাড় করবেন সেই প্রমাণ? কে দেবে? হ্যাঁ খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে কাল হল এঁড়ে গরুকিনে, সেরকম এক হাল হবে। আবার ধরুন কিছু লোকের সেসব প্রমাণ আছে, কিন্তু সেসব প্রমাণ দিয়ে আবার নাগরিক হয়ে ওঠার আগে দুটো ঘটনা ঘটে যাবে, ১) উনি এই সময়টাতে ভারতের নাগরিক নন, অতএব ওনার কেনা সম্পত্তি বেয়াইনী, কাজেই তা বেদখল হতে পারে, ওনার সরকারি চাকরি বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অবৈধ হয়ে যাবে। ২) উনি এই সময়ের মধ্যে ভোটার নন, ভোট দেবার অধিকার হারাবেন, মানে ২০২৬ এ গত ৫/৬ বছর বা তার বেশী সময় ধরে বিজেপি কে ভোট দিয়ে আসা মতুয়া বা রাজবংশীদের নাম তালিকাতে থাকবে না। কেমন করে সামলাবেন শুভেন্দু বাবু? এ এক আজব সরকার, পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশের মানুষেরা দেশের সরকারকে নির্বাচিত করে, আমার দেশের সরকার দেশের ভোটার কারা হবে সেটা ঠিক করে দেবার কাজ করছে। মানে তাই ঠিক করে দেবে ভোটার লিস্টে কারা থাকবে, কারা থাকবে না, আর এই কাজটা আজ নয় বহুদিন আগে থেকেই শুরু করেছে বিজেপি। এর শুরুয়াত সেই সি এ এ বিল থেকে। শুভেন্দু বাবু বলেছেন সি এ এ দিয়েই সব্বাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নাগরিকত্ব আইন। নাগরিকত্ব আইন কী বলছে, নাগরিকত্ব আইন আমরা কেন মানতে চাইছি না, নাগরিকত্ব আইন কেন? খুব সোজা করে বললে এই আইন দিয়ে কিছু ধর্মীয় কারণে নিপিড়িত মানুষ কে নাগরিকত্ব দেবার কথা বলা হয়েছে, এটাও খুব পরিস্কার যে মুসলমানদের, সংখ্যালঘু মানুষজনকে এই আইনের বাইরে রাখা হয়েছে। তিনটে দেশ, বলা ভাল ইসলামিক দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে যদি সে দেশ থেকে হিন্দু শিখ পারসি, জৈন, বৌদ্ধ বা ক্রিস্টান রা আসে তাহলে তারা ৬ বছর এখানে থাকলেই এই দেশের নাগরিক হয়ে যাবে। আগে ১২ বছর লাগতো এখন ৬ বছর লাগবে হিন্দু রা পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে এ দেশে আসতে চাইলে বা তাদের আসা সহজ করার জন্য এই আইন করা হয়েছে। তাকে কেবল বলতে হবে তিনি ধর্মীয় ক্ষেত্রে নিপীড়িত হয়েছেন। তো আমাদের আপত্তি টা কোথায়? এই বিল নিয়ে সমস্যাটা কোথায়? প্রতিবার, প্রতিবার একজন হিন্দু বলবেন আমায় অত্যাচার করা হয়েছে, আমার পূজার বেদী ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং প্রতিবার আমাদের সংগে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের এই নিয়ে বিরোধ হবে, তারা বলবেন এরকম হয়নি, আসলে এরকম হয়েছে। তার দেশে তদন্ত বলবে লোকটি মিথ্যে কথা বলছে, আমাদের দেশ বলবে লোকটি ঠিক কথা বলছে। এমনিতেই সদ্ভাব রাখা যাচ্ছে না, এবার প্রতিদিন টানাপোড়েন হবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে আমাদের এখানে সংখ্যালঘুদের ওপর, ওদেশে পড়বে তাদের সংখ্যা লঘু দের ওপর। পড়বেই। এই খানে আমাদের আপত্তি আছে, হ্যাঁ আপত্তি। ভারতবর্ষ কখনও কোনোওদিন ধর্মীয় ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয় নি। এটা আমাদের প্রথম আপত্তি।
Информация по комментариям в разработке