Скачать или смотреть কুরবানীর জায়েয, না জায়েয ও মাসরাফ বিষয় নিয়ে ভুল ধারণার রহস্য!

প্রারম্ভিকতা
আমরা আলোচ্য ভিডিওটিতে কুরবানীর জায়েয, না-জায়েয ও মাসরাফ বিষয় নিয়ে ভুল ধারণার রহস্য সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যা আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। এটি মুসলিম উম্মাহ-এর জন্য এক মহান সুন্নাত। যা হযরত ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর আত্মত্যাগের স্মৃতি বহন করে। কুরবানীর সাথে জায়েয, না-জায়েয ও মাসরাফ মাসায়েলের সঠিক জ্ঞান এবং এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত থাকা অত্যন্ত জরুরি।

কুরবানীর গুরুত্ব ও মাসায়েল: একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা
কুরবানী শুধুমাত্র একটি পশু জবাই করা নয়, বরং এটি ত্যাগের মহিমা এবং আল্লাহ তা'আলার প্রতি বান্দার আনুগত্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রতি বছর জিলহাজ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই ইবাদত পালিত হয়। তবে কুরবানী সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞান না থাকলে এর সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অনেক ভুলও হতে পারে। এই লেখায় আমরা কুরবানীর বিভিন্ন দিক, যেমন- কোন কোন পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয, কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা উত্তম, কুরবানীর নিয়মাবলী এবং প্রাসঙ্গিক মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করব।

কুরবানী কোন নবীর সুন্নত
কুরবানী মূলতঃ হযরত ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর সুন্নত। তিনি আল্লাহ তা'আলার নির্দেশে নিজ পুত্র হযরত ইসমাইল (আলাইহিস সালাম)-কে কুরবানী করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁর এই আত্মত্যাগকে কবুল করে ইসমাইল (আলাইহিস সালাম)-এর পরিবর্তে জান্নাত হতে একটি দুম্বা কুরবানী হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। সেই থেকে মুসলিম উম্মাহ-এর জন্য কুরবানী ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবে প্রচলিত।

কোন কোন পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েজ
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু হালাল পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এগুলো হল:---
১) উট:- ৫ বছর বা তার বেশী বছর বয়সী হতে হবে।
২) গরু বা মহিষ:- ২ বছর বা তার বেশী বছর বয়সী হতে হবে।
৩) দুম্বা, ভেড়া বা ছাগল:- ১ বছর বা তার বেশী বছর বয়সী হতে হবে। তবে দুম্বা বা ভেড়া যদি ৬ মাস বয়সী হয় কিন্তু দেখতে ১ বছর বয়সীর মত হৃষ্টপুষ্ট হয়, তাহলে সেটি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে।

যে পশু দিয়ে কুরবানী করা যাবে না বা কুরবানীর অযোগ্য পশু
কিছু ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। কুরবানীর পশু কেমন হওয়া উচিত তা জানা জরুরী। নিম্নোক্ত ত্রুটিগুলি থাকলে সেই পশু কুরবানীর অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে:---
১) অন্ধ বা কানা পশু:- যে পশুর এক বা উভয় চোখ অন্ধ।
২) খুব বেশী অসুস্থ বা দুর্বল পশু:- যে পশু এত দুর্বল যে হেঁটে কুরবানীর স্থলে যেতে পারে না।
৩) ল্যাংড়া পশু:- যে পশু তিন পায়ে চলতে পারে ও চতুর্থ পা মাটিতে রাখতে পারে না বা খুঁড়িয়ে চলে।
৪) শিং ভাঙ্গা পশু:- যদি শিং এমনভাবে ভাঙ্গে যে তা মূল থেকে উপড়ে গেছে ও মস্তিষ্কে আঘাত লেগেছে, তবে তা জায়েয নয়। তবে আংশিক শিং ভাঙ্গা বা শিং এর উপরিভাগ ভাঙ্গা হলে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে।
৫) কান বা লেজ কাটা পশু:- যে পশুর অর্ধেকের বেশী কান বা লেজ কাটা।
৬) দাঁত ভাঙ্গা পশু:- যে পশুর অধিকাংশ দাঁত পড়ে গেছে।
৭) খুব বেশী রোগাক্রান্ত পশু:- যা সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা উত্তম
কুরবানীর পশুর মূল্য যত বেশী হবে এবং তা দেখতে যত সুন্দর ও হৃষ্টপুষ্ট হবে, তত উত্তম। তবে সবার জন্য একই ধরনের পশু দিয়ে কুরবানী করা সম্ভব নয়। নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোত্তম পশু নির্বাচন করাই কাম্য।

কুরবানী করার নিয়ম
কুরবানী করার নির্দিষ্ট নিয়মাবলী রয়েছে। যা অনুসরণ করা আবশ্যক। যেমন:---
১) নিয়ত করা:- কুরবানীর নিয়ত করা।
২) পশু প্রস্তুতকরণ:- পশুকে খাওয়ানো এবং আরামদায়ক পরিবেশে রাখা।
৩) জবাই করার আগে দু’য়া পড়া:- পশুকে কিবলামুখী করে শোয়ানোর পর "বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার" বলে জবাই করা। জবাই করার সময় "ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন"-এই দু’য়া পাঠ করা মুস্তাহাব।
৪) জবাই করা:- ধারালো ছুরি দ্বারা শ্বাসনালী, খাদ্যনালী ও রক্তনালী (jugular veins) কাটা।
৫) রক্ত সম্পূর্ণরূপে প্রবাহিত হতে দেওয়া:- জবাই করার পর পশুর নড়াচড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

গোশত ও চামড়ার মাসরাফ (প্রাপ্যতা)
কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম। এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য এবং এক ভাগ গরীব-দুঃখীদের জন্য। কুরবানীর চামড়া বিক্রি করে এর অর্থ গরীব-মিসকীনদের দান করতে হবে। কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানীর গোশত বা চামড়া দেওয়া জায়েয নয়।

কোরবানীর মাসায়েল
কুরবানী সংক্রান্ত কিছু মাসায়েল রয়েছে। যা জানা সকলের জন্য জরুরী। যেমন:---
১) কুরবানীর সময়:- জিলহাজ্ব মাসের ১০ তারিখ ফজরের পর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কুরবানী করা যায়। তবে ১০ তারিখে কুরবানী করা উত্তম।
২) কুরবানীর অংশীদারিত্ব:- উট, গরু বা মহিষ-এ এক থেকে সাত জন পর্যন্ত শরীক হতে পারে। ছাগল, দুম্বা বা ভেড়া-এ কেবল একজনই শরীক হতে পারে।
৩) কুরবানীর নিসাব:- যাদের উপর যাকাত ওয়াজিব হয়, তাদের উপর কুরবানীও ওয়াজিব হবে।
৪) মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী:- মৃত ব্যক্তির নামেও কুরবানী করা জায়েয আছে।

শেষ কথা
কুরবানী এক মহিমান্বিত ইবাদত। যা আল্লাহ তা'আলার প্রতি আমাদের গভীর ভক্তি ও আনুগত্য প্রকাশ করে। এর সঠিক নিয়মাবলী ও মাসায়েল জেনে কুরবানী আদায় করলে তা আল্লাহ তাআ’লার দরবারে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আসুন আমরা সকলে আন্তরিকতার সাথে এই মহান ইবাদত পালন করি এবং এর সওয়াব হাসিল করি।

#al_islam_for_bengali_speakers,#কুরবানীরজায়েয,#কুরবানীরনা-জায়েয,#কুরবানীরমাসরাফবিষয়,

আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন সোশ্যাল মিডিয়ায়
• Facebook: https://www.facebook.com/sajeedahsan11
• Twitter/X: https://x.com/sajeedahsan11
• Linkedin: https://www.linkedin.com/in/sajeedahsan11/
• Instagram: https://www.instagram.com/sajeedahsan11/
• Reddit: https://www.reddit.com/user/Any-Camp-6768/