Скачать или смотреть প্রথম দফায় ২,৮৭৩ প্রাথমিক শিক্ষক বদলি হলেন |

প্রথম দফায় ২,৮৭৩ প্রাথমিক শিক্ষক বদলি হলেন|
#Primary_Teacher_Transfer#West_Bengal
প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকদের সঠিক বিন্যাসের জন্য বদলি শুরু করল শিক্ষা দপ্তর। প্রথম দফায় আটটি জেলার মোট ২,৮৭৩ জন শিক্ষককে বদলি করা হচ্ছে। এই জেলাগুলি হল আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, জলপাইগুড়ি, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়া। দেখা যাচ্ছে, এগুলির অধিকাংশই জঙ্গলমহল, সুন্দরবন বা তরাই-ডুয়ার্স এলাকার জেলা। এর পরের দফায় অন্য জেলার শিক্ষকরা বদলির আওতায় আসবেন। মনে করা হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি বদলি হতে পারে কলকাতা জেলায়। প্রাথমিকের পর উচ্চ প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরেও এই বদলি প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রাথমিক শিক্ষকদের এই বদলির নির্দেশ শুক্রবার জারি করা হয়েছে এবং তা দ্রুত কার্যকর করতে বলা হয়েছে। এমনকী, বদলি হওয়া শিক্ষকদের ফেব্রুয়ারির বেতনও হবে নতুন স্কুল থেকে। তবে, শিক্ষকদের বদলি তালিকা নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে শাসকদলের অন্দরে।
বিশেষ করে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক বিন্যাসে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। রাজ্যজুড়ে এই সমস্যা রয়েছে। কিন্তু শহরাঞ্চলের বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিতে এই সমস্যা আরও বেশি। এখানে শিক্ষকের অভাব না থাকলেও ছাত্র নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সমস্যা আবার উল্টো। শিক্ষকরা সেখানে যেতে চান না। কিন্তু ছাত্র রয়েছে প্রচুর। অনেক সময়েই দেখা যায়, স্থানীয় শিক্ষকরাও প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলে পড়াতে আগ্রহী হন না। তাঁরা চান কাছাকাছি সদর শহর বা মফসসলের স্কুলে যেতে। ফলে এই বদলি যে খুব শহুরে স্কুলে হবে না, তা আন্দাজ করা যায়।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলে শিক্ষকের সমস্যা মেটাতে টিচিং ইন্টার্ন নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে কড়া সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেক সময়ই বিষয়টির অপব্যাখ্যাও করা হয়েছে। কেউ কেউ এমন শিক্ষকদের সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে তুলনা করে তাঁদের ‘সিভিক টিচার’ বলছেন। এ ধরনের শিক্ষক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে একটি নিয়মগত সমস্যা রয়েছে। কারণ, শিক্ষার অধিকার আইন এবং এনসিটিই’র নির্দেশ মানলে কোনও স্কুলে প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক পড়াতে পারেন না। এই কারণে এমনকী পার্শ্বশিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। এই নিয়মকে তুলে ধরে শিক্ষা দপ্তরে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে শিক্ষক শিক্ষণে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের একটি সংগঠন। এই বদলিগুলি সঠিকভাবে করা গেলে টিচিং ইন্টার্ন ছাড়াই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে। নবান্নে উপাচার্য, শিক্ষক-অধ্যাপক এবং আমলাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী এই বদলির কথা বলেছিলেন। এই প্রক্রিয়া অবশ্য তার অনেক আগে থেকেই শুরু করা হয়েছিল। গত সোমবার সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা ইজেডসিসিতে শিক্ষা বিষয়ক রিভিউ মিটিং করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানেও তিনি আধিকারিকদের এই বদলি দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এবার জেনে নেওয়া যাক, কোন জেলায় কত শিক্ষক বদলি হবেন। আলিপুরদুয়ারে কর্মরত ৯০ জন শিক্ষককে বদলি করা হবে। বাঁকুড়ার ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি হল ৫১৯। জলপাইগুড়ি, ঝাড়গ্রাম এবং উত্তর ২৪ পরগনার যথাক্রমে ১৩৭ জন, ১৩৯ জন এবং ১৬১ জন বদলির হওয়ার মুখে। তবে, সবচেয়ে বেশি বদলি হবে পশ্চিম মেদিনীপুরে। সেখানে বদলির তালিকায় রয়েছেন ৯০৫ জন শিক্ষক। তারপরেই রয়েছে পুরুলিয়া। সেখানে ৪৬৩ জন শিক্ষককে বদলি করা হবে। আর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বদলি হবেন ৪৫৯ জন। তবে অন্দরের খবর, যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে শাসকদলের বহু শিক্ষকনেতা বদলির আওতায় পড়ে গিয়েছেন। কোথাও কাউন্সিলার, কোথাও শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতিকে বদলি করা হয়েছে। সংগঠনের এক নেতা বলেন, ডিএম এবং ডিপিএসসি চেয়্যারম্যানদের নিয়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তাদের হাতে দূরত্ব অনুযায়ী এই তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকাশিত তালিকার সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। এ নিয়ে শাসকদলেও ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। সমস্যা যে রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে এই সমস্যার কথা জানিয়েছি। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, এই বদলির প্রয়োজনীয়তা ছিল, তা বাস্তব। কিন্তু আমাদের দাবি, প্রতিটি স্কুলে যেন অন্তত একজন শিক্ষককে রেখে দেওয়া হয়। আর কোনও শাস্তিমূলক বদলি না হয়।