Скачать или смотреть Farakka Dam - ফারাক্কা বাঁধ

ফারাক্কা বাঁধ ভারতীয় নদী ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদা জেলার ফারাক্কা এলাকায় গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত একটি বাঁধ। এই বাঁধের প্রধান উদ্দেশ্য হলো গঙ্গার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা এবং পূর্বের অংশে জল সরবরাহ নিশ্চিত করা।

ফারাক্কা বাঁধের কিছু মূল উদ্দেশ্য হলো:

1. *যানবাহন ও নৌচলাচল:* গঙ্গার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, নৌপরিবহন এবং বাণিজ্যিক নৌচলাচল উন্নত করা।
2. *সেচের ব্যবস্থা:* নদীর জল সেচের জন্য ব্যবহার করা, যা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
3. *পানি সরবরাহ:* জলাশয়ের মাধ্যমে পানির সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

এই বাঁধের নির্মাণ ও ব্যবহারের সাথে অনেক বিতর্ক ও বিরোধ রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, বাঁধটি গঙ্গার নদী প্রবাহে পরিবর্তন এনে পার্শ্ববর্তী এলাকার নদী পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করেছে। এতে বাংলাদেশের উপরও প্রভাব পড়েছে, কারণ গঙ্গার জল Bangladesh এর দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে প্রভাবিত হয়।

অতএব, ফারাক্কা বাঁধের প্রকল্পের বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফারাক্কা বাঁধের প্রকল্পের শুরু হয় ১৯৬১ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এর পেছনে মূলত দুটি কারণ ছিল:

1. *গঙ্গার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ:* গঙ্গার প্রবাহের পরিবর্তন এবং সেচ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে এই প্রকল্প শুরু করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল উত্তর ভারতের কৃষিজমির সেচের জন্য জল সরবরাহের সমস্যা সমাধান করা।

2. *পানি শেয়ারিং:* বাংলাদেশে গঙ্গার জল প্রবাহে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল, যা ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে সমাধান করা হয়। এটি দক্ষিণ বাংলার এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়ক ছিল।

প্রকল্পের প্রাথমিক পদক্ষেপ:

*১৯৬১:* প্রকল্পের প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা শুরু হয়।
*১৯৬৫:* প্রথমে প্রকল্পের স্থান নির্বাচন ও প্রাথমিক ডিজাইন করা হয়।
*১৯৭১:* ফারাক্কা বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

নির্মাণের কাজ:

*১৯৭৫:* বাঁধের নির্মাণ শেষ হয় এবং এটি চালু করা হয়।

পরবর্তীকালে:

ফারাক্কা বাঁধের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই এর প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক ও গবেষণা শুরু হয়। প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন অংশে এটি জলবায়ু, পরিবেশ এবং স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলেছে। ফারাক্কা বাঁধের আইনি এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বেশ জটিল। বাঁধটির নির্মাণ এবং ব্যবহারের সাথে যুক্ত আইনি বিষয়গুলি প্রধানত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কিত।

মূল আইনি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়গুলি:

1. *ভারত-বাংলাদেশ পানি চুক্তি (১৯৭৭):*
ফারাক্কা বাঁধের নির্মাণের পর, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি পানি ভাগাভাগি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৭৭ সালে। এই চুক্তিতে গঙ্গা নদীর জল বিতরণ সম্পর্কিত কিছু শর্ত নির্ধারিত হয়। চুক্তির অধীনে, ভারত গঙ্গার জল বাংলাদেশে প্রবাহিত করতে বাধ্য এবং বাংলাদেশের পানির প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জল সরবরাহ করতে হবে।

2. *শেয়ারিং এবং প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ:*
চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হয় যে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে সেচ এবং পানির প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য ভারত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জল বাংলাদেশে প্রবাহিত করবে। যদিও চুক্তি কিছুটা পরিমার্জিত হয়েছে, প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত হয়েছে।

3. *বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনা:*
ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে (বিশেষ করে আন্তর্জাতিক আদালতে) কখনো কোনো মামলা হয়নি, তবে বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক এবং সমঝোতার প্রচেষ্টা চলেছে।

4. *অন্যান্য চুক্তি:*
পরবর্তীতে, দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু সাময়িক এবং টেকনিক্যাল চুক্তি হয়েছে যাতে করে পানির বিতরণ এবং বাঁধ ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ এবং কার্যকরভাবে করা যায়।

5. *বিশেষ প্রতিবেদন ও গবেষণা:*
ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় সংস্থা ও গবেষকরা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যা জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত প্রভাব এবং সামাজিক ফলাফল সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেছে।