Скачать или смотреть Naval Mutiny//নৌবিদ্রোহের কারন ও ফলাফল//দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস//

Naval Mutiny//নৌবিদ্রোহের কারন ও ফলাফল//দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস//#history #class #bengali ✍️#youtubevideo #education #viral #swapnakhonjeducation #exam #wbclass10 #wbeducation #historywbcs



এইরকম নতুন নতুন ক্লাস ভিডিও পেতে বন্ধুরা দয়া করে চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন ও পাশের নটিফিকেশন বোতামটি সক্রিয় করে পাশে থাকবেন। ভিডিও ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।🙏






দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস
আজকের বিষয়- নৌবিদ্রোহের কারন ও ফলাফল।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য আন্দোলন হল 1946 খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় নৌবাহিনী অর্থাৎ রয়েল ইন্ডিয়ান নেভির বিদ্রোহ। ইতিমধ্যে ভারত ছাড়ো আন্দোলন, আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম ইত্যাদি ঘটনার ফলে ব্রিটিশ সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। 1946 খ্রিস্টাব্দে নৌবিদ্রোহ যেন ভারতে ব্রিটিশ শাসনের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছিল।

১। নৌবিদ্রোহের কারন-
1946 খ্রিস্টাব্দের নৌবিদ্রোহের বেশ কয়েকটি কারন ছিল, সে গুলি হল-

ক। বর্নবৈষম্য-
ভারতীয় নৌবাহিনীতে  প্রবল বর্ণবৈষম্যে ছিল। কোনো কাজে নিযুক্ত ভারতীয় নাবিক যে পরিমাণ বেতন ও সুযোগসুবিধা পায় সেই একই কাজে বা পদে নিযুক্ত থেকে ইংরেজ নাবিকরা ভারতীয়দের চেয়ে অনেক বেশি বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা পায়। ভারতীয় নাবিকরা এই বৈষম্যের প্রতিবাদ করে কোনো প্রতিকার পায়নি।

খ। অন্যায় আচরণ-
ব্রিটিশ সরকার এবং ইংরেজ নাবিকরা ভারতীয় নাবিকদের প্রতি বিভিন্ন অন্যায় আচরণ করত। ইংরেজ অফিসার ও নাবিকরা ভারতীয় নাবিকদের অশ্লীল ও অভদ্র ভাষায় গালিগালাজ করত। শুধু ভারতীয় হওয়ার অপরাধে ভারতীয় সেনাদের এসব লাঞ্ছনা ভোগ করতে হত। ভারতীয় সেনারা ব্রিটিশ কতৃপক্ষের কাছে বারবার অনুরোধ করেও এসব ঘটনার কোনো প্রতিকার পায়নি।

গ। নিম্নমানের খাদ্য প্রদান-
সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় নৌসেনাদের অসন্তোষ এর অন্যতম কারণ ছিল তাদের নিম্নমানের খাদ্য প্রদান। ইংরেজ অফিসার ও কর্মচারীরা যথেষ্ট ভালো খাবার পেলেও সরকার ভারতীয় নাবিকদের অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার দিত। তীব্র প্রতিবাদেও এর কোনো সুরাহা না হওয়ায় তাদের মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছিল।

ঘ। সেনাদের পদচ্যুতি-
1939 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে প্রচুর ভারতীয়কে নৌবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু যুদ্ধের পর অতিরিক্ত সেনার প্রয়োজন না থাকায় সরকার বহু সেনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। এতে তারা বেকার হয়ে যায়। এর ফলে নৌবাহিনীতে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

ঙ। আজাদ হিন্দ সেনাদের বিচার-
সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম ভারতীয় নৌসেনাদের  খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। আজাদ হিন্দ বাহিনীর আত্মত্যাগ এবং ভারতের স্বাধীনতার জন্য এই বাহিনীর সংগ্রাম ভারতের নৌসেনাদের নতুন দিশা দেখায়। পরাজিত আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈন্যদের লাল কেল্লায় বিচার শুরু হলে দেশের জনগণের সঙ্গে ভারতীয় নৌসেনারাও ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

২। বিদ্রোহের সূত্রপাত-
1946 খ্রিস্টাব্দে 18 ই ফেব্রুয়ারি বোম্বাইয়ের তলোয়ার নামক একটি জাহাজে প্রথম নৌবিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহী ভারতীয় নাবিকরা ব্রিটিশ পতাকা ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে জাহাজে ত্রিবর্নরঞ্জিত ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করে এবং রয়েল ইন্ডিয়ান নেভির নাম রাখে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল নেভি।

৩। বিদ্রোহের প্রসার-
ক্রমে এই বিদ্রোহ করাচি, কলকাতা, মাদ্রাজ, কোচিন, জামনগর, চট্টগ্রাম, বিশাখাপট্টনাম, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি স্থানে এই বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

৪। আত্মসমর্পণ-
শেষপর্যন্ত একদিকে বিমান থেকে সম্ভাব্য বোমাবর্ষনের আশঙ্কা এবং অন্যদিকে বিদ্রোহ বন্ধ করতে কংগ্রেসের বেশিরভাগ নেতার উপদেশের কারনে বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে।

৫। মধ্যস্থতা-
কংগ্রেস নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল সরকার ও বিদ্রোহী পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন।এভাবেই অনেক আশা জাগিয়ে শুরু হওয়া নৌবিদ্রোহ ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয়।

৬। গুরুত্ব-
1946 খ্রিস্টাব্দে নৌবিদ্রোহের যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল সেগুলি হল-

ক। ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা-
নৌবিদ্রোহ যে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের মৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। ভারতীয় সেনাদের ওপর নির্ভর করে আর যে ভারত শাসন করা সম্ভব নয়, এ কথা ব্রিটিশ সরকার স্পষ্ট বুঝতে পারে। এক কথায়, এই বিদ্রোহ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা করে।

খ। মন্ত্রী মিশনের আগমন-
রজনীপাম দত্তের মতে, নৌবিদ্রোহের ফলে আতঙ্কিত ইংরেজ সরকার শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর এর জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সঙ্গে আলোচনা করতে মন্ত্রী মিশনকে ভারতে পাঠায়।

গ। ভারত ত্যাগের ভাবনা-
কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন,নৌবিদ্রোহে ভারতীয় সেনা ও সাধারণ মানুষের রক্ত এক অভিন্ন আদর্শে একসঙ্গে মিশে যায়। ভারতে এরূপ আরও একটি বিদ্রোহ শুরু হলে তার পরিণাম যে কি ভয়ঙ্কর হবে তা বুঝতে পেরে ব্রিটিশ সরকার শীঘ্রই ভারত ত্যাগের কথা ভাবতে শুরু করে।

৭। মূল্যায়ন-
নৌবিদ্রোহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো পন্ডিত ও ঐতিহাসিক এর সমালোচনা করেছেন এবং বিদ্রোহের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার উল্লেখ করেছেন। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের মুক্তির দাবিতে কলকাতায় তীব্র আন্দোলন হলেও নৌবিদ্রোহ নিয়ে তেমন কোনো আলোড়ন হয়নি। অবশ্য কিছু সমালোচনা সত্বেও এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ভারতীয়দের হাতে শাসননক্ষমতা  হস্তান্তরের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্ত নৌবিদ্রোহের দ্বারা কিছুটা হলেও প্রভাবিত হয়েছিল।