Скачать или смотреть ঋকবেদের পরিচয়/পর্ব-৫/সন্দ্বীপ ধার্মিক চ্যানেল ২০২৪

ঋকবেদের পরিচয় পর্ব ৪ দ্বিতীয়ত, প্রাচীন উপনিষদগুলি বৈদিক সাহিত্যের কথা হিসাবে গড়ে উঠেছিল এবং একটি বিশেষ তত্ত্ব তাদের অবলম্বন করে গড়ে উঠেছিল। তাকে ব্রহ্মবাদ বলতে পারি। সুতরাং এই দুই লক্ষণ দ্বারা বৈদিক যুগের উপনিষদগুলিকে পথক করে নিতে পারি। প্রথমত বে উপনিষদের চিন্তা প্রাচীন উপনিষদের চিন্তাধারার সঙ্গে সঙ্গতি রাখে না তাকে পৃথক করে রাখতে পারি। দ্বিতীয়ত যে উপনিষদের বেদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী সবন্ধ আবিষ্কৃত হবে তাকে বেদিক যুগের উপনিষদ বলে স্বীকার করে নিতে পারি।। ভারতীয় দার্শনিক আলোচনায় চারটি দার্শনিক চিন্তা কালান ক্রমে আবিষ্কার করা যায়। প্রথমত বেদের কমকাণ্ডে সংহিতা অংশে প্রাচীনতম অবস্থাটি পাই। তখন নানা প্রাকৃতিক শক্তির উপর দেবত্ব আরোপ করে যজ্ঞে তাঁদের আহ্বান করে। উপাসনা করা হত। এই উপাসনা রাঁতি বিশুদ্ধ ব্যবহারিক প্রয়োজন দ্বারা অনুপ্রাণিত। শত্রু, হতে রক্ষা বা বিপদ হতে ত্রাণ এবং অভীষ্ট পূরণের জন্য এই উপাসনায় প্রার্থনা নিবেদিত হত। সঙ্গে সঙ্গে দেবতাদের উদ্দেশে প্রশস্তিও নিবেদিত হত। বেদের মধ্যেই শেষের দিকে জ্ঞানকাণ্ডের প্রতি ঝোঁক দেখা যায়। ঋগ্বেদের মধ্যেই বিশেষ করে দশম মন্ডলে এমন অনেক সুপ্ত আছে যেখানে নানা দার্শনিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। এখানে যে চিন্তার সূত্রপাত হয়েছে তার বিকাশ ঘটেছে বিভিন্ন বেদের সহিত সংযুক্ত উপনিষদগুলির মধ্যে। এখানে ঋষির জিজ্ঞাসু দৃষ্টিভঙ্গি প্রবল হয়ে উঠেছে। ব্যবহারিক প্রয়োজনের উর্ধ্বে উঠে তিনি বিশ্বসত্তার পরিচয় পেতে ব্যগ্ন হয়ে উঠেছেন। এই জিজ্ঞাসার ফলে যে দর্শন গড়ে উঠেছে তাকে আমরা সর্বেশ্বরবাদ বা ব্রহ্মবাদ বলতে পারি। এই দর্শন বলে সকল মানুষ, সকল জীব, সকল বস্তুকে জড়িয়ে নিয়ে এক মহাশক্তি সব কিছু ব্যাপ্ত করে আছেন এবং নিজে প্রচ্ছন্ন থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। এইভাবে প্রাচীন উপনিষদে যে তত্ত্বটি গড়ে উঠেছে তাতে বিশুদ্ধ জিজ্ঞাসুর দৃষ্টিভঙ্গী পাই। আমাদের দেশের দার্শনিক চিন্তার পরবর্তী যুগটি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিভঙ্গিরই একটি পরিবর্তিত রূপ। এখানেও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিভঙ্গি ক্রিয়াশীল, তবে প্রেরণা এসেছে ভিন্ন পথে। এখানে প্রেরণা এসেছে ব্যবহারিক প্রয়োজনে। এ যুগে কর্মফল তত্ত্ব এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত পরজন্মবাদ বন্ধমূল সংস্কারে পরিণত হয়েছে। সঙ্গে এই ধারণা গড়ে উঠেছে যে পার্থিব জীবন সুখের নয়, দুখের। ফলে পরজন্ম হতে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা তাঁর হয়ে উঠেছে। সেই মুক্তির উপায় হিসাবে জ্ঞান- মার্গকেই অবলম্বন করা হয়েছে। একথা যেমন হিন্দু ষড় দর্শন সম্বন্ধে খাটে তেমন বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন সম্বন্ধেও খাটে। বৌদ্ধ ও জৈন দর্শনও পরজন্ম হতে পরিত্রাণ চায় এবং তার ব্যাখ্যার জন্য স্বতন্ত্র দর্শন গড়ে তুলেছে। অবশ্য উভয়ক্ষেত্রেই দর্শন ব্যতীত একটি কর্মরীতি প্রচার করা হয়েছে। ভগবান বুদ্ধ আর্য অষ্টাঙ্গিক মাগ প্রবর্তন করেছিলেন। অনুরূপভাবে জৈন ধর্মে সম্যক চারিত্রকেও মোক্ষলাভের অন্যতম উপায় হিসাবে স্বীকার করা হয়েছে। সুতরাং এই অবস্থায়ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিভঙ্গি প্রবল। চতুর্থ অবস্থায় পৌরাণিক যুগে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়ে ভন্তের দৃষ্টিভঙ্গি আসে। সাধারণভাবে বলা যায় ষড় দর্শনের যুগে ভন্তের দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্ফুট ছিল না। তবে তার প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল। বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন ঈশ্বর সম্বন্ধে একেবারে নীরব। ষড় দর্শনের মধ্যে অধিকাংশ দর্শনই ব্যক্তিরূপী ঈশ্বর সম্বন্ধে নীরব। পূর্ব মীমাংসা ও উত্তর মীমাংসা এ প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত নয়।